সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন

 মসজিদে করণীয় ও বর্জনীয় কাজসমূহ

-মুহাম্মাদ ফাহিমুল ইসলাম*


(শেষ কিস্তি)

৯. মসজিদে থুথু না ফেলা

যেখানে সেখানে থুথু ফেলা উচিত নয়। সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা যেখানে সেখানে কফ ও থুথু ফেলে থাকে, এমনকি দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম স্থান মসজিদেও অনেকে থুথু ফেলে, যা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহল্লায় বা জনবসতিপূর্ণ স্থানে মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।[১] এ কারণে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে থুথু অথবা কফ লেগে থাকলে পরিষ্কার করতেন।[২] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, اَلْبُزَاقُ فِى الْمَسْجِدِ خَطِيْئَةٌ وَكَفَّارَتُهَا دَفْنُهَا ‘মসজিদে থুথু ফেলা পাপ, আর তার প্রতিকার হল তা মিটিয়ে ফেলা’।[৩]  আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে ক্বিবলার দিকে থুথু দেখতে পেয়ে খুবই রাগান্বিত হন, এমনকি তাঁর চেহারা রক্তিমবর্ণ ধারণ করে। এক আনছারী মহিলা এসে তা (থুথু) মুছে ফেলেন এবং সে স্থানে সুগন্ধি লাগিয়ে দেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَا أَحْسَنَ هَذَا ‘এটা (সুগন্ধি) কতই উত্তম!’।[৪] আবূ যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

عُرِضَتْ عَلَىَّ أُمَّتِىْ بِأَعْمَالِهَا حَسَنِهَا وَسَيِّئِهَا فَرَأَيْتُ فِىْ مَحَاسِنِ أَعْمَالِهَا الْأَذَى يُنَحَّى عَنِ الطَّرِيْقِ وَرَأَيْتُ فِىْ سَيِّئِ أَعْمَالِهَا النُّخَاعَةَ فِى الْمَسْجِدِ لَا تُدْفَنُ

‘আমার উম্মতের ভালো ও মন্দ কার্যাবলী আমার সামনে পেশ করা হলে, আমি তাদের ভালো কার্যাবলীর মধ্যে যাতায়াতের পথ থেকে তাদের কষ্টদায়ক বস্তু সরানোও অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলাম এবং তাদের নিকৃষ্ট কষ্টদায়ক বস্তুর মধ্যে মসজিদে থুথু ফেলাও অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলাম যা (মাটি দিয়ে) ঢেকে দেয়া হয়নি’।[৫] অতএব মসজিদে থুথু ফেলার ক্ষেত্রে সকলকে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

১০. হারানো জিনিস না খোঁজা

মানুষের জীবন পরিক্রমায় অনেক সময় অনেক জিনিস হারিয়ে যায়, কেউ তা পায় আবার কেউ তা পায় না। অনেকেই অনেক পদ্ধতিতে হারানো জিনিস খোঁজেন, কিন্তু কিছু লোক আছেন যারা হারানো জিনিস খোঁজার জন্য মসজিদ বা মসজিদের মাইক ব্যবহার করে থাকেন। যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে হারানো জিনিস খোঁজার ঘোষণা দিতে নিষেধ করেছেন’।[৬] তাছাড়া মসজিদ হারানো জিনিস খোঁজার স্থান নয় বরং তা ইবাদতের জায়গা। ইবাদতের জন্য তা ব্যবহার হবে। হাদীছে এসেছে,

বুরায়দা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছালাত আদায় শেষ হলে জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, লোহিত বর্ণের উটের কথা কে বলল? এ কথা শুনে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,  لَا وَجَدْتَ إِنَّمَا بُنِيَتِ الْمَسَاجِدُ لِمَا بُنِيَتْ لَهُ ‘তুমি যেন তা (তোমার হারানো বস্তুটি) না পাও। কারণ মসজিদ মসজিদের কাজের জন্য নির্মিত হয়েছে’।[৭] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন, مَنْ سَمِعَ رَجُلًا يَنْشُدُ ضَالَّةً فِى الْمَسْجِدِ فَلْيَقُلْ لَا رَدَّهَا اللهُ عَلَيْكَ فَإِنَّ الْمَسَاجِدَ لَمْ تُبْنَ لِهَذَا ‘যে ব্যক্তি কাউকে মসজিদে এসে কোন হারানো বস্তু তালাশ করতে শুনে, সে যেন বলে, আল্লাহ তোমাকে তা ফিরিয়ে না দিন। কেননা মসজিদসমূহ এই জন্য নির্মিত হয়নি’।[৮]

১১. মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় না করা

মানবজীবনে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রয়োজন আছে। মানুষ ক্রয়-বিক্রয় করবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। আর এজন্যই অনেক পূর্ব থেকেই হাট-বাজারের প্রচলন হয়েছে। একাজে ইসলামে কোন নিষেধ নেই, কিন্তু মসজিদে ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে ইসলাম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

‘আমর ইবনু শু‘আইব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, نَهَى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عَنِ الْبَيْعِ وَالْاِبْتِيَاعِ وَعَنْ تَنَاشُدِ الْأَشْعَارِ فِى الْمَسَاجِدِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদসমূহে ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং কবিতা আবৃত্তি করতে নিষেধ করেছেন’।[৯] আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَّبِيْعُ أَوْ يَبْتَاعُ فِى الْمَسْجِدِ فَقُوْلُوْا لَا أَرْبَحَ اللهُ تِجَارَتَكَ ‘যখন তোমরা দেখবে মসজিদে কেউ ক্রয়-বিক্রয় করছে, তখন বলবে, আল্লাহ তোমার এ ব্যবসায়ে লাভবান না করুন’।[১০]

১২. দুই খুঁটির মাঝখানে কাতার না করা

জামা‘আতে ছালাত আদায় করার জন্য মসজিদ একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজনের তাকীদে গ্রাম-গঞ্জে ও শহরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মসজিদ। আর বড় বড় মসজিদগুলোর মাঝে রয়েছে প্রয়োজনীয় খুঁটি। বড় মসজিদগুলোতে খুঁটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগেও মসজিদের মাঝে খুঁটি ছিল। কিন্তু সে যুগে দুই খুঁটির মাঝখানে কাতার করা হত না, যা বর্তমানে অনেক মসজিদে দেখা যায়। এটা পরিত্যাগ করা আবশ্যক।

‘আব্দুল হামীদ ইবনু মাহমূদ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জনৈক আমীরের পিছনে ছালাত আদায় করলাম। লোকের এত ভিড় হল যে আমরা বাধ্য হয়ে খুঁটির মাঝখানে ছালাতে দাঁড়ালাম। যখন ছালাত শেষ করলাম, তখন আনাস ইবনু মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, كُنَّا نَتَّقِىْ هَذَا عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে (এভাবে দাঁড়ানো) এড়িয়ে যেতাম’।[১১]

মু‘আবিয়া ইবনু কুর্রাহ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, كُنَّا نُنْهَى أَنْ نَصُفَّ بَيْنَ السَّوَارِىْ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَنُطْرَدُ عَنْهَا طَرْدًا ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় আমাদেরকে দুই খুঁটির মাঝখানে কাতারবন্দী হতে নিষেধ করা হত এবং আমাদেরকে (এটি হতে) কঠোরভাবে বিরত রাখা হত’।[১২] এই হাদীছ দু’টি খুঁটির মাঝখানে কাতারবন্দী না হওয়ার সুস্পষ্ট দলীল। তাই ওয়াজিব হল খুঁটি থেকে সামনে কিংবা পিছনে দাঁড়ানো। তবে মসজিদ সংকীর্ণ হলে ভিন্ন কথা।[১৩] উল্লেখ্য যে, দুই পিলারের মাঝে দাঁড়িয়ে একাকী ছালাত আদায় করা যাবে।[১৪]

১৩. নেশাদ্রব্য ও পেঁয়াজ-রসুন খেয়ে মসজিদে না যাওয়া

নেশাদ্রব্য, কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন, সিগারেট ও বিড়ি খেয়ে মসজিদে গমন করা নিষিদ্ধ। কেননা যারা এগুলো খায়, তাদের মুখ দুর্গন্ধযুক্ত হয়। যার কারণে পাশের মুছল্লী কষ্ট পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَقۡرَبُوا الصَّلٰوۃَ وَ اَنۡتُمۡ سُکٰرٰی حَتّٰی تَعۡلَمُوۡا مَا تَقُوۡلُوۡنَ ‘হে মুমিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায়  ছালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যে পর্যন্ত না স্বীয় বাক্য হৃদয়ঙ্গম করতে পার’ (সূরা আন-নিসা : ৪৩)।

জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَنْ أَكَلَ ثُوْمًا أَوْ بَصَلًا فَلْيَعْتَزِلْنَا أَوْ قَالَ فَلْيَعْتَزِلْ مَسْجِدَنَا أَوْ لِيَقْعُدْ فِيْ بَيْتِهِ ‘যে ব্যক্তি রসুন এবং পেঁয়াজ খায়, সে যেন আমাদের নিকট হতে দূরে থাকে অথবা বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ হতে দূরে থাকে অথবা নিজ বাড়ীতে বসে থাকে’।[১৫] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন, مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ الثُّوْمِ فَلَا يُؤْذِيْنَا بِهَا فِىْ مَسْجِدِنَا هَذَا ‘যে ব্যক্তি এই গাছ অর্থাৎ রসুন খায়, সে যেন তার দ্বারা আমাদের এই মসজিদে এসে আমাদেরকে কষ্ট না দেয়’।[১৬]

ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একদা জুমু‘আর খুত্ববায় বলেছিলেন, হে লোক সকল! তোমরা দু’টি গাছ খেয়ে থাক। আমি ঐ দু’টিকে কদর্য ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। সে দু’টি হচ্ছে পেঁয়াজ ও রসুন। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি,

إِذَا وَجَدَ رِيْحَهُمَا مِنَ الرَّجُلِ فِى الْمَسْجِدِ أَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ إِلَى الْبَقِيْعِ فَمَنْ أَكَلَهُمَا فَلْيُمِتْهُمَا طَبْخًا

‘কারো মুখ থেকে তিনি এ দু’টির গন্ধ পেলে তাকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিতেন। ফলে তাকে বাক্বী গোরস্থানের দিকে বের করে দেয়া হত। সুতরাং কাউকে তা খেতে হলে সে যেন পাকিয়ে খায়’।[১৭] জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الْبَقْلَةِ الثُّوْمِ وَقَالَ مَرَّةً مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّوْمَ وَالْكُرَّاثَ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُوْ آدَمَ

‘যে ব্যক্তি এ রসুন জাতীয় উদ্ভিদ খাবে- কোন কোন সময় আবার তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন এবং মুলা খাবে, সে যেন আমার মসজিদের কাছেও না আসে। কেননা মানুষ যেসব জিনিস দ্বারা কষ্ট পায় ফেরেশতাগণও সেসব জিনিস দ্বারা কষ্ট পায়’।[১৮]

১৪. ছালাতরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম না করা

কোন ব্যক্তি ছালাতরত অবস্থায় থাকলে তার সামনে দিয়ে যাওয়া যাবে না। অনেকেই সময়কে অত্যধিক মূল দিতে গিয়ে এই কাজটি করে। আবার অনেকেই ছালাতের সামনে দিয়ে যাওয়াকে অপরাধ মনে করে না; যা অবশ্যই ভ্রান্তি। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছালাতের সামনে দিয়ে যেতে নিষেধ করেছেন। আবূ জুহাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَيِ الْمُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ لَكَانَ أَنْ يَّقِفَ أَرْبَعِيْنَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَّمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ ‘ছালাতের সম্মুখ দিয়ে গমনকারী যদি জানত তার কী গুনাহ হয়, তাহলে সে সম্মুখ দিয়ে গমন করা অপেক্ষা চল্লিশ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকাকে উত্তম মনে করত’।[১৯] রাবী আবূ নযর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি বলতে পারি না যে, আবূ জুহাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) চল্লিশ দিন, মাস, না-কি বছর বলেছেন।[২০] আবূ নাযর বলেন, আমার জানা নেই তিনি কি চল্লিশ দিন বা মাস বা বছর বলেছেন।[২১]

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ يُصَلِّى فَلَا يَدَعْ أَحَدًا يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْهِ وَلْيَدْرَأْهُ مَا اسْتَطَاعَ فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ ‘তোমাদের কেউ যখন (একাকী) ছালাত আদায় করে সে যেন নিজের সামনে দিয়ে কাউকে চলাচল করতে না দেয়। সে সাধ্যমত তাকে বাধা দিবে। অতিক্রমকারী যদি এ থেকে বিরত হতে না চায় তবে সে (ছালাত আদায়কারী) যেন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কেননা সে একটা শয়তান।[২২] ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তাশাহহুদে বসা অবস্থায় এবং কা‘বা অতিক্রমকারীকে বাধা দিয়েছেন এবং তিনি বলেন, সে অতিক্রম করা হতে বিরত থাকতে অস্বীকার করে লড়তে চাইলে মুছল্লী তার সাথে লড়বে।[২৩]

আবূ ছালেহ সাম্মান (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে দেখেছি। তিনি জুমু‘আর দিন লোকদের জন্য সুতরা হিসাবে কোন কিছু সামনে রেখে ছালাত আদায় করেছিলেন। আবূ মু‘আইত গোত্রের এক যুবক তাঁর সামনে দিয়ে যেতে চাইল। আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার বুকে ধাক্কা মারলেন। যুবকটি লক্ষ্য করে দেখল যে, তাঁর সামনে দিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। এজন্য সে পুনরায় তাঁর সামনে দিয়ে যেতে চাইল। এবারে আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) প্রথমবারের চেয়ে জোরে ধাক্কা দিলেন। ফলে আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে তিরস্কার করে সে মারওয়ানের নিকট গিয়ে তার ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল। এদিকে তার পরপরই আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)ও মারওয়ানের নিকট গেলেন। মারওয়ান তাঁকে বললেন, হে আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)! আপনার ভাতিজার কী ঘটেছে? তিনি জবাব দিলেন, আমি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে,

إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ إِلَى شَىْءٍ يَسْتُرُهُ مِنَ النَّاسِ فَأَرَادَ أَحَدٌ أَنْ يَجْتَازَ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلْيَدْفَعْهُ فَإِنْ أَبَىْ فَلْيُقَاتِلْهُ فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ

‘তোমাদের কেউ যদি লোকদের জন্য সামনে সুতরা রেখে ছালাত আদায় করে, আর কেউ যদি তার সামনে দিয়ে যেতে চায়, তাহলে যেন সে তাকে বাধা দেয়। সে যদি না মানে, তবে সে ব্যক্তি (মুছল্লী) যেন তার সাথে লড়াই করে, কেননা সে শয়তান’।[২৪] উল্লেখ্য যে, সুতরার পরিমাণ হল মুছল্লীর ছালাতের জন্য যতটুক জায়গা প্রয়োজন। অর্থাৎ সিজদার স্থান অথবা মুছল্লীর ছালাতের স্থান হতে তিন হাত বা তিন গজ পর্যন্ত।[২৫]

১৫. মসজিদে হাত জট না পাকানো

কা‘ব ইবনু ওজরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَأَحَسَنَ وُضُوْءَهُ ثُمَّ خَرَجَ عَامِدًا إِلَى الْمَسْجِدِ فَلَا يُشَبِّكَنَّ بَيْنَ أَصَابِعِهِ فَإِنَّهُ فِىْ صَلَاةٍ

‘যখন তোমাদের কেউ উত্তমরূপে ওযূ করে অতঃপর ছালাতের সংকল্প করে মসজিদের দিকে গমন করে, তখন সে যেন আপন আঙ্গুলসমূহ জট না পাকায়। কেননা সে তখন ছালাতের মধ্যেই আছে।[২৬]

উপসংহার

মসজিদ হল আল্লাহর ঘর এবং পবিত্রতম স্থান। এর পবিত্রতা রক্ষা করার দায়িত্ব সকল মুছল্লীর। তাই প্রত্যেক মুছল্লী নিজ নিজ অবস্থান থেকে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মসজিদের আদব রক্ষা করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!


* দাওরায়ে হাদীছ, মাদরাসা দারুল হাদীস সালাফিইয়াহ, পাঁচরুখী, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

তথ্যসূত্র :
[১]. আবু দাউদ হা/৪৫৫; তিরমিযী হা/৫৯৪, সনদ ছহীহ।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৪০৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৪৯; নাসাঈ, হা/৭২৪।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৪১৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৫২; আবূ দাঊদ, হা/৪৭৫; তিরমিযী, হা/৫৭২; মিশকাত, হা/৭০৮।
[৪]. নাসাঈ, হা/৭২৮; ইবনু মাজাহ, হা/৭৬২।
[৫]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৬৮৩, সনদ ছহীহ।
[৬]. ইবনু মাজাহ, হা/ ৭৬৬।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৬৯; ইবনু মাজাহ, হা/৭৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩১০১।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৬৮; মিশকাত, হা/৭০৬।
[৯]. ইবনু মাজাহ, হা/৭৪৯, সনদ হাসান।
[১০]. তিরমিযী, হা/১৩২১; দারেমী, হা/১৪০১; মিশকাত, হা/৭৩৩, সনদ ছহীহ।
[১১]. তিরমিযী, হা/২২৯; আবূ দাঊদ, হা/৬৭৩; নাসাঈ, হা/৮২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৬১; মুসতাদরাক হাকিম, হা/৭৬২।
[১২]. ইবনু মাজাহ, হা/ ১০০২; সিলসিলা ছহীহা, হা/৩৩৫, সনদ হাসান।
[১৩]. সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৩৫।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৪, ৫০৫।
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৮৫৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৬৪।
[১৬]. ইবনু মাজাহ, হা/১০১৫; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/১৬৬৫।
[১৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৬৭।
[১৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৬৪।
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৫১০; ছহীহ মুসলিম, হা/৫০৭; মিশকাত, হা/৫৭৬।
[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/৫১০; ছহীহ মুসলিম, হা/৫০৭; আবূ দাঊদ, হা/৭০১; মিশকাত, হা/৫৭৬।
[২১]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৯।
[২২]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫০৫; আবূ দাঊদ, হা/৬৭৯; ইবনু মাজাহ, হা/৯৫৫।
[২৩]. ছহীহ বুখারী, ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০০।
[২৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৯।
[২৫]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী (বৈরূত : দারুল মা‘রেফাহ, ১৩৭৯ হি.), হা/৪৮৭; ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৮৫; ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ (বানারস : ইদারাতুল বুহূছিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াদ দা‘ওয়াতি ওয়াল ইফতা’, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৪ হি.), হা/৭৮৩ ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৯২।
[২৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১২৮; তিরমিযী, হা/৩৮৬; আবূ দাঊদ, হা/৫৬২; মিশকাত, হা/৯৯৪।




মসজিদে করণীয় ও বর্জনীয় কাজসমূহ - মুহাম্মাদ ফাহিমুল ইসলাম
সমকামিতা ও ট্রান্স জেন্ডার: সাম্রাজ্যবাদীদের নীল নকশা - মাযহারুল ইসলাম
আতিথেয়তা - রাফিউল ইসলাম
শিক্ষার্থীর শিষ্টাচার - অনুবাদ : জাহিদ বিন মাসঊদ
শিক্ষার্থীর শিষ্টাচার (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : জাহিদ বিন মাসঊদ
সালাফী মানহাজ ও তার প্রয়োজনীয়তা - অনুবাদ : মুহা. মাহফুজুর রহমান বিন আব্দুস সাত্তার
শিক্ষার্থীর শিষ্টাচার (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : জাহিদ বিন মাসঊদ
হে যুবক! আদর্শিক চেতনায় জাগ্রত হও - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
ডিপ্রেশন : একটি মানসিক পঙ্গুত্ব - আব্দুল্লাহ আল-মামুন
কোথায় আজ বিশ্ব মানবতা? - সাখাওয়াত হোসাইন
এ্যাপস যামানা - আব্দুল্লাহ আল-মামুন
পাশ্চাত্য বিশ্বে ইসলামফোবিয়া : সমস্যা ও সমাধান - মাযহারুল ইসলাম

ফেসবুক পেজ