পাশ্চাত্য বিশ্বে ইসলামফোবিয়া : সমস্যা ও সমাধান
-মাযহারুল ইসলাম*
‘ফোবিয়া’ বলতে বুঝায় ভয়, ঘৃণা, আতঙ্ক। আর এটা যদি ইসলামের সাথে যুক্ত হয়, তখন অর্থ হয় ইসলাম মানেই ভয় বা ত্রাস। অর্থাৎ ইসলাম শান্তির বার্তা দেয় না বরং ইসলাম মানুষকে ত্রাসের শিক্ষা দেয়। সমাজে ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়। যদিও ফোবিয়ার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে অস্বাভাবিক ভীতিকে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে স্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী ভয়, স্থান ও বস্তু হতে পারে। এর বাস্তবরূপ এমন হতে পারে যে, ব্যক্তি মানসিক চাপে সর্বদা দুশ্চিন্তায় ভোগে। মনের গহীনে ভয়ের লালন করে দিনাতিপাত করে। আর এই ‘ফোবিয়া’ শব্দটাই পাশ্চাত্য সমাজ লুফে নিয়ে উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে অন্য ধর্মের সাথে এ্যাড না করে ইসলামের সাথে যুক্ত করেছে। আর তা মিডিয়ার মাধ্যমে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। উদ্দেশ্য হল, বিশ্বব্যাপী ইসলামের ব্যাপারে জনগণের মাঝে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা। ফলে মানুষ ইসলাম থেকে অনেক দূরে সরে যায় এবং ইসলামের ব্যাপারে বিভিন্ন খোঁড়া যুক্তি পেশ করতে আগ্রহী হয়। আর এই কাজের জন্যই অধুনা বিশ্বে ইসলাম বিদ্বেষী পাশ্চাত্য সমাজ দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামের বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন ইসলাম ততই স্বমহিমায় পৃথিবীর হাজার কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রশান্তির স্থান দখল করবে ইনশাআল্লাহ। ইসলামের গতি আরো শতগুণে ত্বরান্বিত হবে। আর এটাই বিশ্ববাসী খুব ভালো করে অবলোকন করছে। নিম্নে তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি-
১. কানাডার খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারক ডক্টর গ্যারি মিলার কুরআনের ভুল খুঁজতে এসে সূরা নিসার ৮২ নং আয়াত পড়তে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।
২. খ্রিস্টান ধর্মের ফরাসিয়ান নারী লায়লা হোসাইন ইসলামের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক নারীর হিজাব ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে সৌভাগ্যশীলদের মধ্যে গণ্য হন।
৩. আব্দুর রহীম গ্রীন একজন খ্রিস্টান পণ্ডিত। বিভিন্ন ধর্মের বড় পণ্ডিত। অবশেষে ইসলাম নিয়ে গবেষণা করতে এসে মুসলিম হন।
সুধী পাঠক! এখন প্রশ্ন হল, কোন্ সেই ফোবিয়া, যা উল্লেখিত ব্যক্তিত্রয়কে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে? কোন্ সেই ফোবিয়া, যা তাদের ইসলাম সম্পর্কে জানতে কৌতুহল ও উদ্দীপনা বাড়িয়েছে? নিঃসন্দেহে যে বা যারা নিরপেক্ষ বিবেচনা করবে অবশ্যই সে সত্য জ্ঞানের আলোয় নিজেকে আলোকিত করে সৌভাগ্যশীলদের কাতারে শামিল করতে সক্ষম হবে। ইসলাম জিনিসটা এমনই। যত বেশি ইসলামের উপর আঘাত আসবে ইসলাম ততবেশি আপন গতিতে নিজের সৌন্দর্য, উদারতা, ভালোবাসা সুস্পষ্টরূপে পরিস্ফুটিত করবে।
মিডিয়ায় ইসলামফোবিয়াদের কারসাজি
ইসলাম বিদ্বেষী স্বার্থান্বেষী মহল বিশ্বব্যাপী ইসলামের ব্যাপারে বিশ্ব মিডিয়ায় অবাধে প্রচার করে যে, ইসলাম একটি চরমপন্থী ধর্ম। ইসলাম তরবারীর জোরে মানুষকে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করেছে। সারা বিশ্বে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণও মূলত তরবারি। এমনিভাবে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে শত-সহস্র অযৌক্তিক, মিথ্যা যুক্তি ও অসার বাক্য পেশ করে থাকে। ফলশ্রুতিতে অমুসলিমরা ইসলামকে বড় আতঙ্কের বিষয় মনে করে। যেভাবেই হোক নিজেকে মুসলিমদের থেকে কিভাবে দূরে রাখা যায় সে ব্যাপারে খুবই সচেতনতা অবলম্বন করে। সাম্রাজ্যবাদীরা মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের ব্যাপারে এ ধরনের হীন, নোংরা ষড়যন্ত্রের কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইসলাম সম্পর্কে তথ্য সন্ত্রাসের ফলে অমুসলিমরা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক বুঝার বদলে নানাবিধ বিরূপ ও উগ্র মন্তব্য মনের গহীনে লালন করে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে ইসলামকেন্দ্রিক কোন কিছু ঘটলে কিংবা তার কোন গন্ধও পেলে তারা বিশ্ব মিডিয়ায় খুব বড় ফোকাসে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। মুসলিমদের সন্ত্রাসী, জঙ্গী, মৌলবাদী ইত্যাদি বলে প্রচারণা চালায়। এক্ষেত্রে মুসলিম দোষী হোক বা না হোক। মূলত তাদের ষড়যন্ত্রই হল ইসলামের ব্যাপারে কুৎসা রটানো। তারা আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, কাশ্মীর কিংবা সোমালিয়া ছাড়াও বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা যখন তাদের জান, মাল ও ন্যায্য অধিকার রক্ষার স্বার্থে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন স্বার্থান্বেষী মহল ঐ সকল স্বাধীনতাকামী মুজাহিদ বাহিনীকে বিশ্ব মিডিয়ায় সন্ত্রাসী, জঙ্গী, মৌলবাদী প্রভৃতি বলে প্রচারণা চালায়। অথচ তারা মুসলিম মুজাহিদের ছালাত কিংবা পজিটিভ কোন দৃশ্য ভুল করেও মিডিয়ায় প্রচার করে না। বরং সর্বদা পজিটিভকে নেগেটিভ আকারে উপস্থাপন করার কোশেষ করে থাকে। ধিক! এ সকল স্বার্থান্বেষী মহলের!!
ইসলামফোবিয়াদের খোঁড়া যুক্তি খণ্ডন
১. ইসলাম তরবারী দ্বারা প্রচার হয়েছে। ফলে ইসলামের অনুসারী সর্বত্র বেশি।
জবাব : ইসলাম শান্তির ধর্ম। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে ইসলাম কেবল প্রত্যেক জনপদে শান্তির বার্তা নিয়ে আগমন করেছে। ইসলাম অশান্তির দাবানল থেকে শান্তি-সুখের বাসযোগ্য হিসাবে মানুষকে আহ্বান করে। ফলে মানুষ পরাধীনতার জিঞ্জীর থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্য, শান্তি সুখের নীড় গড়ার জন্য, মানুষ মানুষের প্রভুত্বের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, নিজের সম্মানকে অটুট রাখার জন্য মানুষ দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে এসে আশ্রয় নেয়। ইসলামের সৌন্দর্যতায় বিমোহিত হয়ে তারা নিজেদেরকে গর্বিত মনে করে। ইসলাম তার রূপ, সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে বলেই অমুসলিম, বেদ্বীনদের হৃদয় ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ফলে ইসলামের প্রকাশ্য যতই বিরোধিতা করুক না কেন অবশেষে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে, অনান্য ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে বা প্রচারের ক্ষেত্রে যেরূপ জোরজবরদস্তি করা হয়েছে এবং হচ্ছে তা কিন্তু ইসলামের ক্ষেত্রে হয়নি। এমনকি তারা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে অনাহারে রেখে, নির্যাতনের স্টীম রোলার চাপিয়ে তাদেরকে সেই সকল ধর্ম মানার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের আয়োজন করে। কিন্তু আপনি কি কখনও ইসলামের ব্যাপারে এমন শুনেছেন যে, অমুক মুসলিম তাকে মুসলমান বানানোর জন্য ঐ বিধর্মীকে নির্যাতন চালিয়েছে। আপনি কি কখনো দেখেছেন যে, অমুক মুসলিম বিধর্মীকে অঢেল সম্পদের প্রলোভন দেখিয়ে মুসলিম বানান। না! এরকম অপ্রত্যাশিত খবর আপনি কখনো শুনতে পাননি আর আশা করি ভবিষ্যতেও পাবেন না। ইসলাম জোরজবরদস্তির নাম নয়। বরং ইসলাম মানব মনের গহীনে সন্তুষ্টির নাম। যখন কোন মানুষ স্ব ইচ্ছায়, সুস্থ বিবেকে ইসলাম গ্রহণ করবে ঠিক তখনই সে মুসলিম বলে বিবেচিত হবে। যেখানে থাকবে না কোন প্রকারের অর্থের প্রলোভন, থাকবে না কোন অসহনীয় নির্যাতনের স্টীম রোলার, থাকবে না কোন প্রকারের জোরজবরদস্তি। ইসলাম মানবম-লীকে এটাই শিক্ষা দেয় (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৫৬)। আফসোসের বিষয় হল, পাশ্চাত্য সমাজ ইসলামকে তরবারি দ্বারা প্রসারিত হয়েছে বলে বিরূপ মন্তব্য করে। এক্ষেত্রে আমি তাদের দোষ দিব না। কেননা তারা এমন পরিবেশে জীবনযাপন করছে যেখানে তাদের মিডিয়া সর্ব রকমের প্রযুক্তি ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কটু ও বিরূপ কথা কিংবা সংবাদ শুনিয়ে শুনিয়ে কান ভারি করে দিচ্ছে। হয় তারা ইচ্ছা করে শুনুক বা অনিচ্ছায় শুনুক। এটাই বাস্তবতা। অথচ দিবালোকের ন্যায় পরিস্ফুটিত মুসলিমরা স্পেন প্রায় ৮০০ বছর শাসন করে, ভারতীয় উপমহাদেশও প্রায় হাজার বছর শাসন করে। কই ইতিহাস তো এটা সাক্ষী দেয় না যে, তরবারীর জোরে অমুসলিমরা ইসলাম গ্রহণ করেছে। না, ইতিহাসের পাতায় কোথায় এটা দেখানো সম্ভব নয়। বরং দ্বীপ্তিমান বিষয় যে, সকল ধর্মের মানুষ সুন্দর স্বাভাবিক জীবনযাপন করে মুসলিম শাসনামলে। তারা তাদের ধর্ম নির্দ্বিধায় মেনে চলে। মুসলিম শাসকগণ তাদেরও অধিকার সংরক্ষণ করেছেন। এক্ষেত্রে একটি ঘটনাই যথেষ্ট মনে করি। ঘটনাটি নিম্নরূপ:
বাদশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীর (১৬৫৮-১৭০৭ খ্রি.)-এর শাসনামলে তার সেনাপতি এক গরীব ব্রাহ্মন প্রজার সুন্দরী মেয়েকে জোরজবরদস্তি করে বিয়ে করতে চায়। এটা বাদশাহ জানতে পারলে ব্রাহ্মন প্রজার বাড়িতে ছদ্মবেশে আত্মগোপন করেন। পরেরদিন ঐ সেনাপতি বিয়ে করতে আসলে বাদশাহ উন্মুক্ত তরবারী নিয়ে সামনে উপস্থিত হন। যদিও রাজমহল থেকে হিন্দু প্রজার বাড়ী অনেক দূরে ছিল। এমতাবস্থায় বাদশাহর উপস্থিতিতে সেনাপতি বেহুঁশ হয়ে পড়ে। তার অবৈধ লোলুপ আগ্রহ সেদিন ধূলিসাৎ হয়। ফলে সেদিন জয় হয় এক নিরপেক্ষ স্বাধীনচেতা ধর্ম, বর্ণ বৈষম্যের অপনোদনকারী মুসলিম বাদশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীরের। ফলশ্রুতিতে বাদশাহর এই উদার আদর্শে এলাকার নাম আলমগীরগঞ্জ রাখা হয়। সেদিন বাদশাহ ঐ হিন্দু ব্রাহ্মনকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, আমি আমার দাায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। আল্লাহ সকল ক্ষমতার মালিক। এটাই মুসলিমদের দীর্ঘস্থায়ী সময়ের শাসনকার্য। যা পৃথিবীবাসীকে অবাক করে দেয়। আবার ভাবতে অবাক লাগে! ইসলামের শ্রেষ্ঠ তরবারী হল, মহত্তম আদর্শ, উন্নত চরিত্র, মাধুর্যপূর্ণ নম্র আচরণ। ফলে ইসলামের অনুসারী যেখানেই গিয়েছে ঠিক সেখানেই সোনার ফসল ফলিয়েছে। ইংরেজ লেখক ‘ডি লিসী’ তার বইয়ে ‘Islam At The Cross Road’ বইয়ের ৮ নং পৃষ্ঠায় বলেন, ‘ইতিহাস এ সত্য প্রকাশ করে যে, ইসলাম সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করা হয়েছে যে, ইসলাম তরবারী দ্বারা প্রসার লাভ করেছে। এ ধরনের অভিযোগ কম বুদ্ধি ও কম ধীসম্পন্ন ঐতিহাসিকদের বক্তব্য ছাড়া কিছুই না’।
থমাস কার্লাইল বিখ্যাত ‘Hero And Hero Warship’ গ্রন্থে ইসলামের প্রসার সম্পর্কে বলেন, ‘ইসলাম প্রসারের ক্ষেত্রে তরবারী ব্যবহার এটা কোন্ ধরনের তরবারী? এটা এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি, যা অন্য সকল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভিন্ন, যা একজনের মগজে জন্মলাভ করেছে এবং সেখানেই তা প্রতিপালিত হয়। আর এ দৃষ্টিভঙ্গির ওপর মাত্র একজন বিশ্বাস রাখতেন। যার সাথে সারা পৃথিবীর মানুষের চিন্তা-ভাবনার পার্থক্য। যদি ঐ ব্যক্তি তার তরবারী নিয়ে এ মতবাদ প্রসারের চেষ্টা করে, তাহলে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, এ তরবারীর ধারকের নিজস্ব শক্তির পতন নিজে নিজেই ঘটে যাবে’।
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ধর্মের অনুসারী ও ধর্মের অগ্রগতি সম্পর্কে পত্র-পত্রিকার নিবন্ধ লক্ষ্য করলে বড় ফোকাসে ইসলামকে দেখা যায়। যা দিনে দিনে বর্ধনশীল ধর্মে পরিণত হচ্ছে। ইউরোপ-আফ্রিকা ছাড়াও পৃথিবীর সর্বত্র ইসলামের সুমহান আদর্শ ছড়িয়ে পড়েছে, পড়বে। যার অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য। এদিকে লক্ষ্য করেই প্রখ্যাত পণ্ডিত জর্জ বার্নাডশ’ বলেছেন, ‘If any religion had the chance of ruling over England, nay Europe within the next hundred years it could be Islam’. যদি কোন ধর্ম আগামী ১০০ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ড তথা সমগ্র ইউরোপ শাসন করার সুযোগ পায়, তবে সেটা হল ইসলাম’।
সত্যিকারার্থে ইসলামের অগ্রগতি ক্রমান্বয়ে ত্বরান্বিত হচ্ছে। যা কোন সময়, ভূখণ্ড, ভাষা, মেধা, শক্তি, যোগ্যতাকে পরোয়া করে না। ইসলাম তার নিজস্ব গতিতেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। হেদায়াতের নূরের আলোয় আলোকিত হবে বিশ্বময়। সুতরাং ইসলাম যে তরবারীর মাধ্যমে সম্প্রসারণ লাভ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।
২. ইসলাম মানুষের জানের নিরাপত্তা দিতে অক্ষম!
জবাব : ইসলাম সম্পর্কে যে ব্যাপক অধ্যয়ন করবে এবং গভীর জ্ঞানের সাগরে আত্মনিয়োগ করবে সে ইসলাম সম্পর্কে অন্য যা কিছু শিখুক না কেন- ইসলাম যে মানুষের সর্বপ্রথম জীবনের নিরাপত্তা দেয় এক্ষেত্রে সে বুঝতে মোটেও ভুল করবে না। কেননা ইসলাম মানুষকে প্রথমে এই ম্যাসেজ দেয়, আগে বাঁচার মত বাঁচো। ধর্ম মানবে বাঁচলে। অতঃপর ধর্মের রঙে রঙিত হবে জীবন। আপনি যদি ইসলামের অধ্যায়গুলো ভালোভাবে অবলোকন করেন এবং যদি আপনার জানার কৌতুহল পাহাড়সম হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে আপনি ইসলামের এই সুমহান ম্যাসেজটি খুব ভালোভাবেই উপলব্ধী করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ:
ক. মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে কোন আত্মাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করল বা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকে হত্যা করল। আর কেউ যদি কোন আত্মাকে রক্ষা করে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকে রক্ষা করল’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ৩২)।
খ. অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে কেউ সীমালংঘন ও যুলম করে হত্যাকাণ্ড করবে আমি তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব’ (সূরা আন-নিসা : ৩০)।
গ. তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে তোমরা যথার্থ কারণ ছাড়া হত্যা কর না’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৫১; সূরা বানী ইসরাঈল : ৩৩)।
ঘ. রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে কোন জিম্মিকে হত্যা করে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর জান্নাতকে হারাম করে দিবেন’।[১]
ঙ. কোন এক যুদ্ধে উসামা ইবনু যায়েদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জুহায়না গোত্রের এক ব্যক্তিকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। অথচ এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি কালেমা পড়ে। এরপর উসামা ইবনু যায়েদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ব্যক্তিটিকে আঘাত করে ও হত্যা করে। যখন এ সংবাদ নবী (ﷺ)-এর কাছে পৌঁছে, তখন তিনি ছাহাবী উসামা ইবনু যায়েদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে মারাত্মকভাবে তিরস্কার করে বলেন, ক্বিয়ামতের দিন সে যখন কালেমা নিয়ে আসবে তখন তুমি কী করবে।[২] এমনকি ইসলাম মানুষের জানের নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে জীবনের চূড়ান্ত সীমার শেষ মুহূর্তে খাদ্যাভাবের কারণে হারাম বস্তুকে পর্যন্ত খাওয়ার অনুমতি প্রদান করেছে। এটা দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, ইসলামে জানের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে।
৩. ইসলাম একটি কঠোর, উগ্রপন্থা ও চরমপন্থা মূলক ধর্ম!
জবাব : ইসলামই কেবল সহজ-সরল ও নমনীয় একটি দ্বীন। যা মানুষকে কখনও কঠোরতা, উগ্রপন্থা, চরমপন্থা শিখায় না বা উৎসাহিত করে না। এ ব্যাপারে অসংখ্য প্রমাণাদি বিদ্যমান। যেমন,
ক. আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোরজবরদস্তি নেই’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৫৬)।
খ. আল্লাহ কারো উপর এমন কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যের বাইরে (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৮৬)।
গ. আল্লাহ দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি (সূরা আল-হাজ্জ : ৭৮)।
ঘ. রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তোমাদেরকে মূলত সহজ করেই পাঠানো হয়েছে কঠিন করে পাঠানো হয়নি’।[৩]
ঙ. অন্য হাদীছে এসেছে, ‘নিশ্চয় দ্বীন সহজ-সরল, কঠিন নয়। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার উপর বিজয়ী হয় (অর্থাৎ দ্বীন তার সাথে বেশি দিন থাকে না) কাজেই তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর এবং নিকটবর্তী হও, আশান্বিত থাক’।[৪]
চ. নিশ্চয় মহান আল্লাহ আমাকে একজন সহজপন্থী শিক্ষক হিসাবে পাঠিয়েছে।[৫]
ইসলাম প্রত্যেক বিধানের ক্ষেত্রে মানব জাতিকে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার জন্য জোরালো দিক-নির্দেশনা পেশ করে। সুতরাং জেনে রাখা উচিত যে, ইসলাম চরমপন্থা কিংবা নরমপন্থার নাম নয়, বরং ইসলাম হল মধ্যমপন্থার নাম। তাই এই মধ্যমপন্থার দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা, বুঝা আর উপলদ্ধির জন্য পাশ্চাত্য সমাজের কোন সমস্যা আছে কি?
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* অধ্যয়নরত দাওরায়ে হাদীছ, মাদরাসা দারুস সুন্নাহ, মিরপুর, ঢাকা।
তথ্যসূত্র :
[১]. আবূ দাঊদ, হা/২৭৬০; নাসাঈ, ৪৭৪৭।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৪২৬৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৭, ২৮৯।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৬; মিশকাত, হা/৪৯১।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১২৪৬।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩৭৬৩; মিশকাত, হা/৩২৪৯।