সমকামিতা ও ট্রান্স জেন্ডার: সাম্রাজ্যবাদীদের নীল নকশা
-মাযহারুল ইসলাম*
(১)
ইসলাম পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন মানবিক ধর্ম। মানবিক, সামাজিক, পারিবারিক ছাড়াও রাষ্ট্রীক পর্যন্ত সুষম নীতিমালা নির্ধারিত রয়েছে কেবল ইসলাম ধর্মে। ফলে সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতার বিষয়টি সব মত পথ ও দল থেকে ভিন্ন এবং সুস্পষ্ট। পৃথিবীর ইতিহাস বলছে, এযাবৎ পৃথিবীতে যত সভ্যতার উত্থান পতন হয়েছে সেটার মৌলিক কারণ হল- নৈতিকতা বোধ। যে জাতি যতবেশি মানবিক চাহিদা তথা যৌনতার ব্যাপারে যতবেশি সংযমী সে জাতি ততবেশি সমৃদ্ধশালী ও অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সাথে সাথে সভ্যতার শোচনীয় দুরাবস্থা, অধঃপতন এই একটিই কারণ ছিল তা হল- অবাধ যৌনাচার, অনিয়ন্ত্রিত বিকৃত যৌনাচার ও মানবিক মূল্যবোধ। বিশ্বব্যাপী ইসলামের শত্রু খোদ ইহুদী-খ্রিস্টান মহল পৃথিবীতে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য বহুকাল থেকেই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরি করে চলছে। তাদের সেই নীল নকশার মধ্যে অন্যতম একটি হল- ট্রান্স জেন্ডার ও সমকামিতা। যত দিন যাচ্ছে ততই তাদের কার্যক্রম, কাজের কৌশল ও পরিধি বৃদ্ধি করছে। গোটা বিশ্ব জুড়ে তাদের এই নগ্ন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
ট্রান্স জেন্ডার, সমকামিতাকে মানবমনে খুবই স্বাভাবিকরণ ও মানুষকে এর প্রতি সংবেদনশীল করে তোলার জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তার বাস্তব প্রয়োগও ইতিমধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ এই ট্রান্স জেন্ডার ও সমকামিতা নিঃসন্দেহে ইসলামী শরী‘আতে হারাম এবং মানুষের স্বভাবজাত মানবিক মূল্যবোধ, আল্লাহর দেয়া ফিতরাতের বিরোধী জঘন্য পাপ; এমনকি এটা পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড। নিঃসন্দেহে এটাকে সাপোর্ট করা ও বৈধতা প্রদান করা অর্থেই হল- নৈতিক মূল্যবোধ, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। সর্বোপরি আল্লাহর ফিতরাত বিরোধী কার্যক্রম দ্বারা আল্লাহকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো, যা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামান্তর। ইহুদী-খ্রিস্টান মহল তো এটাই চায়। তারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে মুসলিম বিশ্বকে করায়ত্ত করতে চায়। তারা তাদের মতাদর্শ ছাড়াও বিভিন্ন কিছু চাপিয়ে দিতে চায়। মুসলিমদের আদর্শিকভাবে পরাজয় চায়। সেটা মুসলিমরা ইচ্ছায় মানুক কিংবা অনিচ্ছায়। এই বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে তারা পৃথীবির উপর অনেক আগ থেকেই বিজয়ের পথে পথ পাড়ি দেয়ার জন্য নানা ধরনের নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে চলছে।
বিজ্ঞান বলছে, ট্রান্স জেন্ডার ও সমকামিতার কোন ভিত্তি নেই। এটি জন্মগত না বরং এটি হচ্ছে স্বেচ্ছায় বেছে নেয়া একটি বিকৃতি। এই বিকৃতিটাই তারা ছড়িয়ে দিতে চায় গোটা বিশ্বে। বিভিন্ন এনজিও, সংস্থা আর সরকারী, বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। রিপোর্ট বলছে, পৃথীবির ১৯৫ টারও বেশি দেশ সমকামিতাকে বৈধতার স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এমনকি সমকামী বিয়ে বৈধতার দেয়া হয়েছে ২৭ টিরও বেশি দেশে। মূলত এই লজ্জাজনক ন্যাক্কারজনক কাজটা এক দিনে হয়নি বরং এই কাজে সফল হতে তাদের কয়েক দশক সময় লেগেছে। কিন্তু তারা তাদের মিশন চালাতে পিছপা হননি। বরং এই কাজে অর্থ, সময়, বুদ্ধি, শ্রম চলমান রেখেছিল সেই সাথে তারা বিভিন্ন এনজিও, সমাজসেবা, সংস্থা, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আর বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যমে গোটা দুনিয়ায় তাদের এই মত ও পথ সর্বমহলে শিথিল, সংবেদনশীল ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বৈশ্বিক এজেন্ডা হিসেবে তাদের বিভিন্ন এনজিও, সমাজসেবা সংস্থা, দেশী-বিদেশী, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক প্লাটফর্ম কাজ করে চলছে। তন্মধ্যে ঙঐঈঐজ, টঘউচ, টঘওঈঊঋ, টঘঙউঈ, টঘঊঝঈঙ, টঘঅওউঝ, ডঋচ ছাড়াও আরো অনেক বিশ্ব সংস্থা বিদ্যমান।
সমকামিতাকে স্বাভাবিক বিষয় বলে উপস্থাপন করার জন্য খোদ হলিউড সিনেমাতে ২০১৮ সালে রিলিজপ্রাপ্ত প্রায় ১২.৮% খএইঞ (খবংনরধহ, এধু, ইর ংবীঁধষ, য়ঁববৎ) চরিত্রে উপস্থাপন করে। বিশেষ করে এই সিনেমাগুলো তে প্রায় ১৫ বছরের বয়সীদের সমকামী বা বিকৃতকামী চরিত্রে উপস্থাপন করা হয়। এটা তাদের আরেকটি টোপ। যেই টোপ গোটা বিশ্ব সহজেই গিলবে বলে তারা এমনটি করেছে। কারণ হল পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশন হলিউড মুভি, সিরিজের নীরব দর্শক। ফলে এগুলো মুভি, সিনেমাতে উপস্থাপন করার মাধ্যমে এক সময় এটা তাদের স্বভাবজাতভাবেই স্বাভাবিক বলে মনে করতে বাধ্য হবে। এমনকি কোন এক সময় এর পক্ষে সাফাই গাইবে।
এমনিভাবে তারা বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতিকেও করায়ত্ত করেছে। বিশ্বের বড় বড় ধনী গ্রুপ, কোম্পানি, কর্পোরেশন থেকে অনুদান গ্রহণ করে। অ্যাপল, মাইক্রোসফট কিংবা আমাজন বলেন সবার কাছ থেকে পাওয়া অনুদান গ্রহণ করার মাধ্যমে তারা সমকামিতা, ট্রান্স জেন্ডার ছাড়াও যত ধরনের বিকৃত মানসিকতা, মূল্যবোধ আছে সেই খাতে তারা তাদের অর্থ যোগান দিয়ে চলছে। ফলে বিশ্বব্যাপী তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার শিশু-কিশোরও। তারা বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজ, হাইস্কুল, প্রাইমারি ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে পড়ালেখার নামে ‘যৌনাচার ও সমকামিতা’ শিক্ষা দিচ্ছে। এজন্য তারা একটি ঐক্য পরিষদ তৈরি করেছে নাম দিয়েছে ‘এধু ঝঃৎধরমযঃ অষষরধহপব ঈষঁন’ তথা স্বাভাবিক শিশু ও সমকামী শিশু’। তাদের কাজেই হলো প্রতিটি স্কুলের শিশুদের শিশু মনে সমকামিতার প্রসার এবং স্বাভাবিকরণ করা। গোটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে যৌনাচারের নোংরামি শিক্ষা দিয়ে সমাজ ও জীবনকে অধঃপতিত ও একটি অসভ্য সমাজ গঠনের জন্য তারা এমন প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা এমন কারিকুলাম প্রণয়ন করে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। সেই কারিকুলাম থেকে আমাদের বাংলাদেশও কিন্তু পিছিয়ে নেই!
সমকামিতাকে স্বাভাবিকরণ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য তারা সেলিব্রিটিদের দ্বারা নানা ধরনের সিনেমা, নাটক, ওয়েব সিরিজ ছাড়াও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিশ্ব বিখ্যাত সব তারকাদের নিয়ে তারা বড় বড় বাজেটের আয়োজন করে। উপস্থাপন করে বিকৃত যৌনাচারের স্থির চিত্র। আর এই সমকামিতা, ট্রান্স জেন্ডার নামক বিকৃত মানসিকতাকে একটি স্টাইল, মডেল হিসাবে উপস্থাপন করছে এবং সেই সাথে তাদেরকে ইয়াং জেনারেশন কাছে ভালোই গ্লামারস করে তোলছে। বিভিন্ন ম্যাগাজিন, বিনোদনমূলক সংবাদ মাধ্যমে ট্রান্স জেন্ডার, সমকামিতার মত, পথকে লালন, বিশ্বাস করা তারকাকে বিশ্বে বড় স্টাইলিস, সেলিব্রিটি বানানোর জন্য প্রশংসায় পঞ্চমুখ করে। এজন্যই তো বিটিএস এর মত বিকৃত যৌনাচার মানসিক ভারসাম্যহীন দলের সাফাই গাইতে দেখা যায় ইয়াং জেনারেশন ভাই বোনদের। এমনকি আশ্চর্যের বিষয় হল- অনেক তরুণ-তরুণী বিটিএস এর আর্মি বলেও দাবি করে। তাদেরকে অন্ধের মত ভালোবাসে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু মন্তব্য করলেই তাদের গায়ে আগুন জ্বলে ওঠে।
বিশ্ব জুড়ে এমন নোংরামি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শুধু বিটিএস এর মত সংগঠন নয় বরং আরো অনেক সংগঠন আছে। এমনকি এমন যৌনাচার, নোংরামিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তারা বিনামূল্যে কনডম, লুব্রিকেন্ট বিতরণ করতেও পিছিয়ে নেই। সেই সাথে যৌনতাকে নরমালাইজ করার জন্য শিশুদের অবাধ মিশ্রণ করার জন্য বৈশ্বিক পরিকল্পনা করছে। যা বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিষয়টি সহজেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশও এক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে। বিশেষ করে বামপন্থী, মোটা মাথার বুদ্ধিজীবী ও তথাকথিত সুশীল সমাজ বেশি তোরজোর করছে। সময়ে সময়ে এরা নড়েচড়ে বসে, কথা বলে, পরিকল্পনা করে। বিশ্ব মোড়লদের এবং জাতিসংঘের বাণীকে এরা জানে প্রাণে মানে। জাতিসংঘ ও বিশ্ব মোড়ল বলেছে- সমকামী বিয়ে বৈধ। এজন্য জাতিসংঘ এর প্রতি জনগণের সহনশীলতা পোষনের জন্য পদক্ষেপ নেয় ঋৎবব ধহফ ঊয়ঁধষ ক্যাম্পেইন। এভাবেই এই বিকৃত, অসভ্য যৌনাচারকে সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
(২)
ট্রান্স জেন্ডার হল সমকালীন বিশ্বের একটি বিষাক্ত ভাইরাস ট্রেনডার। এই মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে খোদ আমেরিকা, ইউরোপ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে দেশে চলছে নানা ধরনের আয়োজন, কার্যক্রম এবং প্রদর্শনী। মূলত ট্রান্স জেন্ডার বলতে সহজ ভাষায় বোঝায়- লিঙ্গ পরিবর্তন তথা কেউ যদি জম্মগতভাবে পুরুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং সময় ও যুগের চাহিদায় সে নিজেকে যদি মনে করে সে পুরুষ না বরং সে নারী। তাহলে নারী কিংবা পুরুষ! তাহলে সে পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে যেই আইডেন্টিফাই পসন্দ করবে সেটাই সে ধারন করতে পারবে। এখানে মনে রাখবেন যে, এই পরিচয়কে আবার হিজরা পরিচয়ের সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। যদিও সাদৃশ্য হিজরার সাথে থাকলেও আদৌও এরা হিজরা পরিচয় কিংবা এটাকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং এর পক্ষে দাবী তোলা অধিকার আদায়ের পক্ষ জোরদার করে না। বরং এরা জেন্ডার বৈষম্যকে কেন্দ্র করে একটি বিকৃত, অরুচি এবং অশ্লীলতাকে ছড়ানোর জন্য এমন নোংরা ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরি করে। যদিও সবাই হিজরার পরিচয় ও সংজ্ঞা জানে। এজন্য তারা হিজরার সংজ্ঞা কিংবা পরিচয়ের দিকে ঝুঁকে না বরং এর সাথে মিল রেখে মাঝখান থেকে ট্রান্স জেন্ডারকে উদ্ভব করে।
হিজরা ও ট্রান্স জেন্ডার সম্পূর্ণ বিপরীত ও এর বিধানও ভিন্ন। ট্রান্স জেন্ডারকে যদিও প্রতিষ্ঠিত মতবাদ ও একে ধারণ করে পরিচয় দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সাম্রাজ্যবাদী মহল। এটাকে তারা চিকিৎসা বিজ্ঞান ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ট্রান্স জেন্ডার বিজ্ঞান সম্মত ও এটা সহজ, স্বাভাবিক ও জন্মগত বলে প্রচারণা করছে। অথচ সারা দুনিয়ার বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্রে এমন ভুঁইফোড়, নোংরা চিন্তা ও মতবাদকে বহু আগেই আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। বিজ্ঞান বলেন কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞান সবাই বিনা বাক্যে এটাকে নাকোচ করেছে একং করছে। কেননা এটা পরিচয় বিরোধী, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি ধর্ম বিরোধী। এমন শ্রেণিবিন্যাসে মহান আল্লাহ মানুষ আশরাফুল মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেননি যে, মানুষ যে পুরুষ হয়ে জন্ম তাকে নারী পরিচয় দিতে হবে কিংবা নারী হয়ে জন্ম তাকে পুরুষ পরিচয় দিতে হবে! নিঃসন্দেহে এটা একটি হীন, নোংরা ষড়যন্ত্রের নীল নকশা। কেননা যদি এমন পরিচয় দেয়া হয় তাহলে সমাজে অবাধ যৌনাচার, সমকামিতা ছড়িয়ে পড়বে। সময়ে সময়ে ব্যক্তির পরিচয় পরিবর্তন করে নিজের চরিতার্থ হাছিল করবে। ‘সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ’ কায়েম হবে।
নিজের স্বভাব, সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্র বিরোধী ট্রান্স জেন্ডার এমন চিন্তার ফসল নিয়েই যে আমদানি তা কিন্তু নয় বরং আরো অনেক কিছু চিন্তা চেতনা সমাজে ছড়িয়ে দিতে চায়। যার মৌলিক লক্ষ্য উদ্দেশ্যই হল ইসলাম ও মুসলিম। কেননা ইসলামে এরকম নোংরামি, চরিতার্থ অশ্লীলতার কোন সুযোগ নেই; বরঞ্চ এধরনের যত প্রকার রাস্তা আছে সেসকলের বিরুদ্ধে অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। ফলে এমন কোন জানালা নেই যে যেটার দ্বারা এমন মতবাদ কিংবা সংবেদনশীল উঁকি দিবে আর সেটাই স্বাভাবিককরণ কিংবা সহজ সমীকরণে এসে দ্বারা এমনটি ভাবার নিতান্তই নিস্প্রয়োজন। কেননা ট্রান্স জেন্ডার, সমকামিতা কিংবা পশুকামিতা যাই হোক না কেন সর্বধরনের এমন হীন কাজ ইসলামী শরী‘আতে হারাম এবং মারাত্মক গর্হিত কাজ।
ট্রান্স জেন্ডার মনোভাবকামীও এই চিন্তা, মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তারা হিজড়া ও ট্রান্স জেন্ডার শব্দের মাঝে কোন রকম পার্থক্য ছাড়াই বুঝাতে চাচ্ছে যে মূলত ট্রান্স জেন্ডার হল হিজড়া। সহজ ভাষায় তৃতীয় লিঙ্গ বলতে ট্রান্স জেন্ডার। সত্যি কথা বলতে এরা হিজড়া ও ট্রান্স জেন্ডার পরিচয় শব্দের পার্থক্য না করে হিজড়া শব্দকে নিজের চরিতার্থ হাছিল করার জন্য ব্যবহার করতে উদগ্রীব। প্রকৃতপক্ষে হিজড়া ও ট্রান্স জেন্ডার এর মাঝে বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান। একটি হল জেনেটিক সমস্যা আর একটি স্বঘোষিত আইডেন্টিফাই। সহজ ভাষায় বলি- হিজড়া হল একটি জন্মগত জেনেটিক সমস্যা (জন্মগত সমস্যা) যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ফিতরাতগতভাবে হয়ে থাকে।
আর ট্রান্স জেন্ডার হল- স্বঘোষিত নারী কিংবা পুরুষ বলে পরিচয় করিয়ে দেয়ার আইডেন্টিফাই। যা বৃহৎ পরিসরে স্বার্থ হাছিল করার জন্য ব্যবহার করতে চায় এবং পৃথিবী ব্যাপী অশ্লীলতা, অন্যায়, সংঘাত ছড়িয়ে দিতে চায়। তারা পৃথীবির বিভিন্ন মুসলিম দেশের মধ্যে এই ঘৃণিত কাজকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পায়তারা চালায়। যেমন পাকিস্তানে ট্রান্স জেন্ডার ২০১৮ সালে সংসদে আইন পাশ করা হলে পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৭ মে আইনটি বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ হলো- এই মতবাদ যদি এভাবে চালু থাকে তাহলে তাদের পারিবারিক ও সমাজব্যবস্থা টিকে থাকা যেন হুমকির মুখে পড়ছে। কেননা ট্রান্স জেন্ডার হল জন্মগত পরিচয়ের সাথে মনস্তাত্ত্বিক জেন্ডার আইডেন্টিফাইয়ের অনুভূতির মারাত্মক সংঘর্ষ। যা চলমান থাকলে পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসবে। ট্রান্স জেন্ডার মানুষের পরিচয়গত বিষয়টিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। একজন মানুষ সে পুরুষ না নারী বলে পরিচয় দিবে এতেই সে হীনমন্যতা, সংকীর্ণতা এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে।
প্রশ্ন হল- আপাতত ধরেই নিলাম যে, সে কোন একটি পরিচয় ধারণ করল। তাহলে পরবর্তী ধাপে তার হুকুম কী হবে? ধরুন একজন পুরুষ সে ট্রান্স জেন্ডার পরিচয় গ্রহণ করে এখন সে নারী বলে পরিচয় দিচ্ছে! এক্ষেত্রে ইসলামী শরী‘আতে তার বিধান কী হবে? তার ইবাদত, উত্তরাধিকার, বিভিন্ন বিধান কীভাবে বর্তাবে? মূলত এরা ইসলামী শরী‘আতের সাথে তামাশা করার নামান্তর।
দেখবেন এরা যে দিকে বৃষ্টি ঠিক সেদিকে ছাতা নিয়ে অবস্থান করতে চায়। ‘সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ’ নীতি অবলম্বন করে। এমনিভাবে অনেক সমস্যা, জটিলতা ও প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে, যার উত্তর তাদের কাছে নেই। এটা তো শরী‘আতের দৃষ্টিতে বললাম। বাস্তবতার নিরিখে যদি বলা হয় বাংলাদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা অফিস আদালত যেটা শুধু নারী কিংবা পুরুষ অধুষ্যিত সেখানে কি এমন কাউকে যে নিজেকে নারী কিংবা পুরুষ বলে পরিচয় দেয় বা ট্রান্স জেন্ডার এর ভাষায় নিজেকে আলাদা কিছু দাবী করে তাকে চাকরি কিংবা পড়ালেখার সুযোগ দিবে? নিঃসন্দেহে এটা মানতে চাইবে না। এমনভাবে বাসে, গাড়িতে, বিমানে ছাড়াও যেখানে সেখানে নির্ধারিত নারী আসন কিংবা পুরুষ আসন, জায়গায় নিজের সুবিধা অর্জনের জন্য যে কেউ এমনটি করতে পারে যে আপআতত আমি নারী, পুরুষ! এভাবে স্বঘোষিত আইডেন্টিফাই সমাজ ভাঙ্গনের এবং পরিবেশের স্থতিশীলতা মারাত্মক হুমকির মুখে সম্মুখীন হবে এবং দিনে দিনে জটিলতা সৃষ্টি হবে। জটিলতার সমীকরণে সমাজের অশ্লীলতা, যেনা, ব্যভিচার প্রকাশ্যে ছড়ানোর একটি বিভৎস রূপই হল- ট্রান্স জেন্ডার।
একজন পুরুষ বাহ্যিকভাবে কিন্তু মনন জগতে সে নিজেকে নারী বলে দাবি করে! কিংবা একজন নারী বাহ্যিকভাবে মনন জগতে সে নিজেকে পুরুষ দাবি করে! তাহলে শারীরিক সম্পর্ক ( বৈবাহিক জীবন) কার সাথে করবে? আদৌ সে কি পুরুষ কিংবা নারীর সাথে করবে? যদি সেই পুরুষ নিজেকে মনন জগতে নারী দাবি করে আর নারী নিজেকে পুরুষ দাবি করে; তাহলে তো প্রকারান্তরে সমকামিতাই হচ্ছে। এমন নোংরামি চিন্তা পাশ্চাত্য সভ্যতা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে গোটা দুনিয়ায়। সম্প্রতি আমাদের বাংলাদেশও এমন ষড়যন্ত্রের শিকার। বেশ কয়েক বছর থেকে এই মতবাদকে নরমালাইজ করার জন্য অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটাকে নির্লজ্জভাবে বৈধতার সাফাই কিংবা সহজ, স্বাভাবিককরণ করার জন্য মিডিয়া জোরালো ভূমিকা রাখতে মরিয়া। অনেক নাট্যকার, লেখক, বুদ্ধিজীবীও লজ্জা শরম বেঁচে খেয়েছে! নইলে এমন কুরুচিপূর্ণ মতবাদকে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তার জন্য এত গলাবাজি, সভা, সেমিনার, বিবৃতি দেয় কেন?
মনে রাখবেন, এটা শুধু একটি মতবাদ নয় বরং এটা একটি আমাদের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নাম। অতএব এমন কুরুচিপূর্ণ মতবাদকে সমাজ জীবন থেকে মাইনাস করতে হবে এবং আল্লাহর বিধান চির সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যে বা যারা এমন অসভ্যতাকে সমাজে ছড়িয়ে দিতে চায় তাদের গোমর ফাঁস করতে হবে যা ইতিমধ্যে সবাই জেনেছে। সেইসাথে জনসাধারণকে বুঝাতে হবে এদের বিভৎস ষড়যন্ত্র। আল্লাহ আমাদেরকে ঈমান, আমল বিনষ্টকারী সকল মতবাদ, মিশন, ভিশন থেকে আমাদের নীতি, নৈতিকতাকে পবিত্র করার তাওফীক দান করুক আমীন এবং আমাদের ইলমী যোগ্যতা দান করুক যেন ইসলাম ও কুফরের মধ্যে তুলনা মূলক পার্থক্য সূচিত করে নব্য জাহিলিয়াতের গায়ে আঁচড় মেরে বাতিলকে চূর্ণ করতে পারি। আমীন!
* খানসামা, দিনাজপুর।