সুখময় সৌভাগ্যের মৃত্যু লাভের উপায়
ওমর ফারুক বিন মুসলিমুদ্দীন*
আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন। আর রহমানির রহীম। ওয়াছ ছলাতু ওয়াছ সালামু আলা রাসূলিহিল কারীম। আম্মা বা‘দু!
১- তাওহীদপন্থী হওয়া
তাওহীদপন্থী হওয়ার অর্থ হচ্ছে- ব্যক্তি বিশ্বাস করবে যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল’। এ দুই সাক্ষ্যদানের মাধ্যমে ব্যক্তি মুমিন, মুসলিম হবে। তাওহীদপন্থী বলে বিবেচিত হবে। তাওহীদপন্থী ব্যক্তির জন্য ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্ববহ বিষয় হচ্ছে আকীদা। কারো আকীদা ঠিক থাকলে সে যত পাপই করুক না কেন সে তার শাস্তি পেয়ে কোন এক সময় জান্নাতে যাবে। কিন্তু কারো যদি আকীদা ঠিক না থাকে, সে যত আমলই করুক না কেন সে জান্নাতে যেতে পারবে না। তার স্থান হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামে।
তাওহীদপন্থীরা যাবে জান্নাতে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তিকে যখন কবরে প্রশ্ন করা হয়, তখন সে সাক্ষ্য দেয় যে- আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল’।[১] হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। নিশ্চয় ঈসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল এবং ঈসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর কালিমা এবং তাঁর থেকে আসা রূহমাত্র; যা তিনি মারইয়ামের নিকট পৌঁছিয়েছেন। জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য। আল্লাহ তা‘আলা এ সাক্ষ্যদাতা ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তার আমল যাই হোক না কেন’।[২]
হাদীছের শেষ উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তার আমল যাই হোক না কেন’-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তি ভালো আমল করুক বা মন্দ আমল করুক; সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। তবে সে তার কৃত কর্ম অনুযায়ী ফল পাবে। পাপ করলে সে পাপের কারণে প্রথমে জাহান্নামে যাবে। অতঃপর শাস্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সে জান্নাতে যাবে। এটা ছহীহ সুন্নাহ দ্বারা সু-সাব্যস্ত’।[৩]
জাহান্নামীদের মাঝে যার অন্তরে অল্প ঈমানও থাকবে তাদেরকেও জান্নাতে নিয়ে আসা হবে তাদের শাস্তি শেষে। এ ব্যাপারে সহীহ সুন্নাহয় অনেক প্রমাণ বিদ্যমান।
ছাহাবীগণ নবী (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা কি ক্বিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেন, মেঘমুক্ত পূর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর? তাঁরা বললেন, না, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে তেমনিভাবে দেখতে পাবে। ক্বিয়ামতের দিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যে যার ইবাদত করতে সে যেন তার অনুসরণ করে। তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ তাগূত্বের অনুসরণ করবে। আর বাকী থাকবে শুধু উম্মাহ, তবে তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। তাদের মাঝে এ সময় আল্লাহ তা‘আলা আগমন করবেন এবং বলবেন, ‘আমি তোমাদের রব’। তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রবের আগমন না হবে ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব। আর তার যখন আগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা আগমন করবেন এবং বলবেন, ‘আমি তোমাদের রব’। তারা বলবে, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ডাকবেন। আর জাহান্নামের উপর একটি সেতু স্থাপন করা হবে। রাসূলগণের মধ্যে আমিই সবার আগে আমার উম্মতদেরকে নিয়ে এ পথ অতিক্রম করব। সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত আর কেউ কথা বলবে না। আর রাসূলগণের কথা হবে, “আল্লাহুম্মা সাল্লিম সাল্লিম” হে আল্লাহ! রক্ষা করুন, রক্ষা করুন।
জাহান্নামে বাঁকা লোহার বহু শলাকা থাকবে; সেগুলো হবে সাদান কাঁটার মতো। তোমরা কি সাদান কাঁটা দেখেছ? তারা বলবে, হ্যাঁ, দেখেছি। তিনি বলবেন, সেগুলো দেখতে সাদান কাঁটার মতোই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। সে কাঁটা লোকের আমল অনুযায়ী তাদের তড়িৎ গতিতে ধরবে। তাদের কিছু লোক ধ্বংস হবে আমলের কারণে। আর কারোর পায়ে যখম হবে, কিছু লোক কাঁটায় আক্রান্ত হবে, অতঃপর নাজাত পেয়ে যাবে।
জাহান্নামীদের মধ্যে যাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা দয়া করতে ইচ্ছা করবেন, তাদের ব্যাপারে ফিরিশতাদের নির্দেশ দিবেন যে, যারা আল্লাহর ইবাদাত করতো তাদের যেন জাহান্নাম হতে বের করে আনা হয়। ফিরিশতারা তাদের বের করে আনবেন এবং সাজদাহ’র চিহ্ন দেখে তারা তাদের চিনতে পারবেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জন্য সাজদাহ’র চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম হতে বের করে আনা হবে। কাজেই সাজদাহ’র চিহ্ন ছাড়া আগুন বনী আদমের সবকিছুই গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে, তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম হতে বের করা হবে। তাদের উপর আবে হায়াত ঢেলে দেয়া হবে ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার উপর গজিয়ে উঠা উদ্ভিদের মতো সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন। কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে যাবে। তার মুখমণ্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফেরানো থাকবে। জাহান্নামীদের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যক্তি। সে তখন নিবেদন করবে, হে আমার রব! জাহান্নাম থেকে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছে, এর লেলিহান শিখা আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলে তুমি এছাড়া আর কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, না। আপনার ইযযতের শপথ! সে তার ইচ্ছামত আল্লাহ তা‘আলাকে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিবে। কাজেই আল্লাহ তা‘আলা তার চেহারাকে জাহান্নামের দিক হতে ফিরিয়ে দিবেন।
অতঃপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে। তখন সে জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সে চুপ করে থাকবে। অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আপনি আমাকে জান্নাতের দরজার নিকট পৌঁছে দিন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি কি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দাওনি? তখন সে বলবে, হে আমার রব! আপনার সৃষ্টির সবচাইতে হতভাগ্য আমি হতে চাই না। আল্লাহ তাৎক্ষণিক বলবেন, তোমার এটি পূরণ করা হলে তুমি এ ছাড়া কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, না। আপনার ইযযতের কসম! এছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযায়ী অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিবে। সে যখন জান্নাতের দরজায় পৌঁছবে তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য ও তার আভ্যন্তরীণ সুখ-শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করবেন, সে চুপ থাকবে। অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন! তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন, হে আদম! সন্তান, কী আশ্চর্য! তুমি কত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী! তুমি কি আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা দেয়া হয়েছে, তাছাড়া আর কিছু চাইবে না? তখন সে বলবে, হে আমার রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আমাকে সবচাইতে হতভাগ্য করবেন না।
এতে আল্লাহ হেসে দিবেন। অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন এবং বলবেন, চাও। সে তখন চাইবে, এমন কি তার চাওয়ার আকাক্সক্ষা ফুরিয়ে যাবে। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন, এটা চাও। ওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন। অবশেষে তার আকাক্সক্ষা শেষ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এ সবই তোমার। এর সাথে আরো সমপরিমাণ তোমাকে দেয়া হলো। আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, এসব তোমার এবং এর সাথে আরো দশগুণ।[৪]
অন্য হাদীছে এসেছে, আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ক্বিয়ামতের দিনে কি আমরা আমাদের রবকে দেখতে পাবো? তিনি বললেন, মেঘহীন আকাশে সূর্যকে দেখতে কি তোমাদের অসুবিধা হয়? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, ঠিক তেমনি সেদিন তোমাদের রবকে দেখতে তোমাদের কোনো সমস্যা হবে না। সেদিন একজন ঘোষক ঘোষণা দিবেন, যারা যে জিনিসের ইবাদত করতে তারা সেই জিনিসের কাছে যাও। এরপর যারা ক্রুশপূজারী ছিল, তারা ক্রুশের কাছে চলে যাবে। মূর্তিপূজকরা মূর্তির নিকটে চলে যাবে। এভাবে সকলেই তাদের উপাস্যদের নিকট চলে যাবে। বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীরা। পূণ্যবান ও পাপী সকল মুমিন থাকবে। সাথে থাকবে আহলে কিতাবদের কতক লোক। তারপর জাহান্নামকে আনা হবে। সেটি তখন মরীচিকার ন্যায় হয়ে থাকবে। ইহুদীদের জিজ্ঞেস করা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর পুত্র উযাইর (আলাইহিস সালাম)-এর ইবাদত করতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছো! কারণ, আল্লাহ তা‘আলার কেনো স্ত্রী বা সন্তান নেই। এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমরা চাই আমাদেরকে পানি পান করান। তখন তাদেরকে বলা হবে তোমরা পানি পান কর। এরপর তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর খৃষ্টানদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহ তা‘আলার পুত্র মসীহের ইবাদত করতাম। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছো। আল্লাহর কোন স্ত্রী বা সন্তান নেই। এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমাদেরকে পানি পান করতে দিন। তাদেরকে বলা হবে, পান কর। তারপর তাদেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
পরিশেষে বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদকারীরা। তাদের মাঝে থাকে পূণ্যবান ও পাপী লোক। তাদেরকে বলা হবে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে আটকে রেখেছে? সকলেই তো চলে গেল! তারা বলবে, আমরা সেদিন তাদের থেকে আলাদা থেকেছিলাম, যেদিনগুলো আজকের চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ছিল। আমরা একজন ঘোষককে বলতে শুনেছি, যারা যাদের ইবাদত করত তারা যেনো তাদের নিকটে চলে যায়। আমরা আমাদের রবের অপেক্ষায় অপেক্ষমান। নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এর পর মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা তাদের সামনে আসবেন। এবার তিনি সে সুরতে আসবেন না যেভাবে ঈমানদারগণ তাকে প্রথমবার দেখেছিল। তিনি এসে বলবেন, আমি তোমাদের রব। তখন সকলেই বলে উঠবে, আপনিই আমাদের রব। সেদিন নবীগণ ছাড়া কেউ তাঁর সাথে কথা বলতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন, তোমাদের এবং তাঁর মাঝে পরিচয়ের কোন চিহ্ন আছে কি? তারা বলবে, পায়ের নালা। তখন পায়ের নালা খুলে দেয়া হবে। তখন ঈমানদাররা সকলে সাজদায় নুয়ে পড়বে। যারা লোক দেখানোর জন্য সাজদা করেছিল তারা ব্যতীত। তারা সাজদা করতে চেষ্টা করবে। কিন্তু তাদের মেরুদণ্ড তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে।
তারপর জাহান্নামের উপর পুল স্থাপন করা হবে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! পুলটি কেমন হবে? তিনি বললেন, দুর্গম পিচ্ছিল স্থান। এর উপরে লাগানো থাকবে শক্ত চওড়া কাঁটাবিশিষ্ট আংটা এবং হুক। দেখতে সাদান বৃক্ষের কাঁটার ন্যায়। সেই পুলের উপর দিয়ে ঈমানদারদের কেউ কেউ চোখের পলকেই পার হয়ে যাবে। কেউ বিদ্যুতের গতিত। কেউ বাতাসের গতিতে। কেউ পার হবে দ্রুতগামী ঘোড়ার দৌড়ের গতিতে। মুক্তিপ্রাপ্তরা কেউ নিরাপদে চলে আসবে। আবার কেউ জাহান্নামের আগুনে পুড়ে ছাড়খার হতে থাকবে। একবারে শেষে যে ব্যক্তি পুল পাড়ি দেবে সে কোনভাবে হেঁচড়ে পার হবে। ঈমানদারগণ দেখবে, তাদের ভাইদেরকে রেখে একমাত্র তারাই মুক্তি পেয়েছে। তখন তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের সেসব ভাইয়েরা যারা আমাদের সাথে ছালাত আদায় করত, ছিয়াম পালন করত, ভাল আমল করত; তারা কোথায়? তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন, যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণও ঈমান পাবে তাদেরকেও জাহান্নাম হতে বের করে আন। আল্লাহ তাদের মুখমণ্ডল জাহান্নামে হারাম করে দিবেন। এদের কেউ কেউ দু’পা ও দু’পায়ের নলার পর্যন্ত জাহান্নামে ডুবে থাকবে। তারা তাদেরকে চিনতে পেরে জাহান্নাম হতে বের করে আনবে। তারপর এরা ফিরে আসবে।
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আবার বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে বের করে আন। তারা গিয়ে তাদেরকে চিনে বের করে আনবে। তারপর আবার ফিরে আসবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আবার বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে বের করে আন। তারা তাদেরকে চিনে বের করে নিয়ে আসবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, যদি আমার কথাগুলো তোমাদের বিশ্বাস না হয় তাহলে আল্লাহর এ বাণীটি পড়- ‘আল্লাহ অণু পরিমাণও যুল্ম করেন না। আর ভাল কাজগুলোর জন্য তিনি দ্বিগুণ ছাওয়াব দেন’ (সূরা আন-নিসা: ৪০)।
তারপর নবী (ﷺ), ফেরেশতা ও মুমিনগণ সুপারিশ করবেন। এরপর মহান আল্লাহ বলবেন, এখন শুধু আমার শাফা‘আতই বাকী রয়েছে। তিনি জাহান্নাম হতে একদল লোককে বের করবেন, যারা জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে গেছে। তারপর তাদেরকে হায়াত নামক নদীতে রাখা হবে; যা জান্নাতের সম্মুখে অবস্থিত। তারা সে নদীর কিনারে আসবে। পাথর এবং গাছের কিনারে জমে থাকা ময়লায় তৃণ গজালে যেমন সুন্দর দেখায় তাদেরকে তেমন সুন্দর লাগবে।[৫] তারা দেখতে হবে মুক্তো সদৃশ। তাদের গর্দানে মোহর লাগানো হবে। পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বিনা আমলেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* শিক্ষক, দারুল হুদা ইসলামী কমপ্লেক্স, বাঘা, রাজশাহী।
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৬৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৭১; আবূ দাঊদ, হা/৪৭৫০; নাসাঈ, হা/২০৫৬।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৩৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৩৮।
[৩]. ফাৎহুল বারী শারহু ছহীহিল বুখারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৪৭৫।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫৭৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১১২৭।