উত্তর : ইসলামে নৈতিক শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। জীবন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রে ইসলাম নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সাধারণত নৈতিক শিক্ষা বলতে বুঝায়: উত্তম আদর্শ, সততা, হিতাহিত জ্ঞান, সমাজের কল্যাণকর বিধান, ন্যায়-অন্যায়, কর্তব্য-অকর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা, আচার-আচরণ ও নীতিবিষয়ক যে শিক্ষা, তাকেই নৈতিক শিক্ষা বলে।
রাসূল (ﷺ)-এর আগমনের পূর্বে মক্কা তথা সমস্ত আরব ছিল- ‘দুষ্কর্ম, অপরাধ ও পাপে জর্জরিত’। অধিকাংশ আরববাসী- জুয়া, মদ্যপান, যিনা, ব্যভিচার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি, হত্যা এবং প্রতিহিংসা পরায়ণতার মত জঘন্য, অমানবিক ও ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপে যুক্ত ছিল। এ সমস্ত অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ২১ শে রামাযান সোমবার ক্বদরের রাত্রিতে অহী নাযিল হয়। হীরা গুহার মধ্যে ধ্যানমগ্ন মুহাম্মাদকে বললেন, إِقْرَأْ ‘পড়’। তিনি বললেন, مَا أَنَا بِقَارِئٍ ‘আমি পড়তে জানি না’। অতঃপর তাকে বুকে চেপে ধরলেন ও বললেন, পড়। কিন্তু একই জবাব, ‘পড়তে জানি না’। এভাবে তৃতীয়বারের চাপ শেষে তিনি পড়তে শুরু করলেন,
اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ- خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ عَلَقٍ- اِقۡرَاۡ وَ رَبُّکَ الۡاَکۡرَمُ- الَّذِیۡ عَلَّمَ بِالۡقَلَمِ - عَلَّمَ الۡاِنۡسَانَ مَا لَمۡ یَعۡلَمۡ
‘পড়ুন আপনার প্রভুর নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন’। ‘সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে’। ‘পড়ুন এবং আপনার প্রভু বড়ই দয়ালু’। ‘যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দান করেছেন’। ‘তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না’ (সূরা আল-‘আলাক্ব: ১-৫)। সুতরাং বুঝা গেল যে, ইসলাম আগমনের সঙ্গে সুশিক্ষার সম্পর্ক খুবই পুরাতন ও সুগভীর।
দেশে আশানুরূপভাবে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ বৃদ্ধির সঙ্গে শিক্ষা সাফল্যের সামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে না। অশ্লীলতা, নারী নির্যাতন, দুর্নীতি ও নানা রকমের অপরাধপ্রবণতা বেড়েই যাচ্ছে। সবকিছুর মূলেই রয়েছে আল্লাহ্ ভীরুতা, ধর্মীয় শিক্ষা বা নৈতিক শিক্ষার অভাব। দেশে শিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরি হলেও নৈতিক, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ প্রত্যাশা মতো তৈরি হচ্ছে না বললেই চলে। চলমান এ অবক্ষয় থামাতে হলে সবার আগে প্রয়োজন আল্লাহভীরুতা, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা।
প্রত্যেকের উচিত নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা করা। ইসলাম ধর্মের আলোকে এমন প্রত্যেক শিক্ষা যা মানুষের জন্য কল্যাণকর ও উপকারী তা গ্রহণ করা নিশ্চিতরূপে বৈধ। যতক্ষণ না তা কোন দলীল দ্বারা হারাম প্রমাণিত হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তিনি পৃথিবীর সব কিছুই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৯)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ ‘যা তোমার জন্য কল্যাণকর তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৪; ইবনু মাজাহ, হা/৭৯, ৪১৬৮)।
প্রশ্নকারী : উসরাত, সায়েদাবাদ, ঢাকা।