উত্তর : ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) আহলে সুন্নাহ ও বিদ‘আতীদের মাঝে পার্থক্য বর্ণনায় বলেন,
(১) সুন্নাহপন্থীরা সুন্নাত পালনের উদ্দেশ্যে মানুষের মতকে পরিহার করে, আর বিদ‘আতীরা সুন্নাতকে ছেড়ে দেয় এবং মানুষের কথাকে গ্রহণ করে।
(২) সুন্নাহপন্থীরা সর্বদা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতকেই প্রাধান্য দেয়। মানুষের কথা যদি সুন্নাতের সাথে মিলে যায় তাহলে তা গ্রহণ করে আর অমিল হলে তা পরিহার করে। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীরা সুন্নাত পালন করতে গিয়ে মানুষের রায়কেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। মতটি সুন্নাতের সাথে মিলে গেলে মেনে নেয়, আর যদি না মানে তাহলে যুক্তি দিয়ে রায়কেই প্রাধান্য দেয়।
(৩) সুন্নাহপন্থীরা শারঈ কোন দ্বন্দ্বের সময় কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে যায়। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীরা ইমামদের মতের দিকে ফিরে যেতে চায়।
(৪) সুন্নাহপন্থীরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ থেকে যদি কোন আমল প্রমাণিত হয়, তাহলে তারা আমল করতে কোন দ্বিধা করে না। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীরা এর থেকে অনেক দূরে।
(৫) সুন্নাহপন্থীরা দলীলের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাড়া কোন লেখনী বা কোন ব্যক্তির দিকে সম্বন্ধ করে না। বরং তাদের নিসবাত শুধু কুরআন ও সুন্নাহর দিকে। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীরা বলে, অমুক ইমাম এটা বলেছেন, অমুককে জিজ্ঞেস করেছিলাম ইত্যাদি।
(৬) সুন্নাহপন্থীরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীছ এবং সালফে ছালেহীনের পক্ষ থেকে শারঈ বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীরা ইমামদের রায় এবং মাযহাব অনুপাতে সহযোগিতা নিয়ে থাকে।
(৭) সুন্নাহপন্থীরা কোন সময় কাউকে গালিগালাজ করে না। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীরা সরাসরি মুসলিমদের কাফির, ফাসিক্ব, মুশরিক ইত্যাদি বলে গালি দেয়।
(৮) সুন্নাহপন্থীদের সম্মুখে যখনই বলা হয় ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন’, তখনই তাদের অন্তরে নাড়া দেয় এবং আর অন্য কোন দিকে ঘুরেও দেখে না যে, কোন ব্যক্তি কী বলেছে। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীরা তা করে না।
(৯) সুন্নাহপন্থীদের অনুসরণীয় আদর্শ হলেন স্বয়ং মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সোনালী যুগের ছাহাবীগণ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীদের আদর্শ হল ইমাম, মাযহাব ইত্যাদি।
(১০) সুন্নাহপন্থীদের নিকট যখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত নিয়ে আলোচনা করা হয়, তখন তারা খুশি হয়। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীদের কাছে সুন্নাহ ছাড়া মানুষের মত, হেকায়াত বা কাহিনী উপস্থাপন করা হয়, তখন তারা খুশি হয়। এটা যেন ঐ আয়াতের মত, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘পক্ষান্তরে যখন তাকে বাদ দিয়ে অন্য যারা রয়েছে, তাদের উল্লেখ করা হয়, তখন দেখো! তারা উল্লাস করে’ (সূরা আয-যুমার : ৪৫; (ইবনুল ক্বাইয়িম, আছ-ছাওয়াঈকুল মুরসালাহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১১৮০-১১৮৫)।
প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান, দিনাজপুর।