উত্তর : শরী‘আতসম্মত যৌথ ব্যবসা নীতির একটি উল্লেখযোগ্য হল- ‘মুদারাবা’ ব্যবসা, অর্থাৎ লভ্যাংশের অংশীদারিত্ব ভিত্তিক যৌথ ব্যবসা। একজনের টাকা ও অন্যজনের শ্রম। যেমন খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর ছিল সম্পদ ও রাসূল (ﷺ)-এর ছিল শ্রম, কিন্তু লভ্যাংশের অংশীদার উভয় পক্ষ হবে। এর বৈধতার জন্য কিছু শর্ত আছে। যথা:
(১) অর্থ বিনিয়োগকারীকে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে পূর্ব নির্ধারিত টাকা লভ্যাংশের নামে দেয়া যাবে না, প্রতি মাসে আপনাকে ৫০০ বা ১০০০ দেবো, এরকম টাকা নির্ধারণ করা যাবে না, বরং উভয়ের সম্মতিতে লভ্যাংশের একটি পার্সেন্টেজ নির্ধারণ করতে হবে, অর্ধাংশ, তৃতীয়াংশ, অথবা চতুর্থাংশ এবং যখন যেমন মুনাফা হবে, সেই হারে-ই তারা ভাগাভাগি করবে।
(২) নগদ বিনিয়োগ করতে হবে।
(৩) বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখ থাকতে হবে। যাতে হিসাব রাখা সহজ হয়।
(৪) বিনিয়োগকারী শ্রমিকের উপর কোনরূপ শর্তারোপ করতে পারবে না।
(৫) কর্মী, শ্রমিক বা আমলকারী শুধু লভ্যাংশের অংশীদার হবে। আর ক্ষতি বা লোকসানের দায়ভার শুধু বিনিয়োগকারী বহন করবে। আদতে কিন্তু দু’জনেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এক্ষেত্রে কর্মীর কর্ম আর বিনিয়োগকারীর অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি আমলকারীকেও অর্থের ক্ষতি বহন করতে হয়, তাহলে এমন মুদারাবা বাতিল হিসাবে পরিগণিত হবে।
(৬) কোন কারণে মুদারাবার চুক্তি ভঙ্গ করলে সমস্ত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারী পেয়ে যাবে, শ্রমিক শুধু তার শ্রমের পারিশ্রমিক পাবে (আল-ইসতিযকার, ২১/১২৪; আল-ইক্বনা‘ ফী মাসাঈলিল ইজমা‘, ২/২০০; আল-মুগনী, ৫/৪০; ফিক্বহুস সুন্নাহ, ৩/২০৫-২০৭; আল-মাজমূঊ শারহুল মুহাযযাব, ১৪/৩৬৬; ফাতাওয়া আল-জামিঊল কাবীর ইবনে বায অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২২৬২২)।
মোদ্দাকথা হল, ইসলাম মুদারাবা লেনদেন বৈধ করেছে। ইসলাম সূদবিহীন অর্থ ব্যবস্থা প্রচলনে মুদারাবা তথা অংশীদারিত্ব ব্যবসা জায়েয করেছে। এতে একজনের মূলধন থাকবে এবং অন্যজন ব্যবসায়ে কাজ করবে। আর এভাবে অর্জিত লভ্যাংশ উভয়ের মধ্যকার চুক্তি অনুসারে পাবে। তবে ব্যবসায়ে ক্ষতি হলে মূলধন বিনিয়োগকারীর ওপর বর্তাবে। আর শ্রমদাতার ওপর ক্ষতির ভাগ বর্তাবে না, যেহেতু তার কষ্ট ও শ্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই সে অর্থের ক্ষতির অংশীদার হবে না।
প্রশ্নকারী : তাওহীদ, কুমিল্লা।