উত্তর :‘ওয়াহ্হাবী’ কথাটি কুরআন-সুন্নাহর প্রকৃত অনুসারী আহলুল হাদীছ বা সালাফীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত গালি হিসাবে সমাজে প্রচলিত। এটা মিথ্যাচার, তথ্য সন্ত্রাস এবং গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। অন্যান্য বিকৃত মাযহাবের মত এটা কোন মাযহাবও নয়। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব (রাহিমাহুল্লাহ) শিরক-বিদ‘আত ও জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে যে সংস্কার আন্দোলন করেছিলেন, সেটা ছিল রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবায়ে কেরামের দাওয়াত ও তাবলীগের অনুকরণে একটি বিশেষ শুদ্ধি আন্দোলন। আর আহলেহাদীছগণও সারা বিশ্বে এই সংস্কারমূলক দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তাই পথভ্রষ্ট বিদ‘আতী ও মাযারপূজারীরা এই সংস্কার আন্দোলনকে সহ্য করতে না পেরে আহলেহাদীছ বা সালাফীদেরকে ‘ওয়াহ্হাবী’ নামে চিত্রিত করে এবং অপপ্রচার চালায়।
১২০০ হিজরী শতক বা ১৭০০ খ্রিষ্টীয় শতকে যখন সঊদী আরবের মুসলিমরা জাহিলিয়্যাতের যুগের ন্যায় পুনরায় শিরকের গভীর গহিনে হাবুডুবু খাচ্ছিল। বিদ‘আত ও কুসংস্কারের কালো মেঘে ঢাকা পড়েছিল সুন্নাতের পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন আকাশ। ঠিক তখনই ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব (রাহিমাহুল্লাহ) রাসূল (ﷺ)-এর দেখানো পদ্ধতিতে আরবের বুক থেকে শিরক ও বিদ‘আতকে উৎখাত করে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন। কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অনুসারীদের নিয়ে সফল আন্দোলন গড়ে তোলেন। এটাই ছিল তাঁর অপরাধ। তিনি তৎকালীন সঊদী আরবের শাসক মুহাম্মাদ ইবনু সাঊদের পৃষ্ঠপোষকতায় ভূপৃষ্ঠের উপর থেকে কুসংস্কার, জাহিলিয়্যাত ও শিরকের মূলোৎপাটন করে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মাধ্যমেই সঊদী আরবকে শিরকমুক্ত করেছিলেন। এরপর থেকেই মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব নামটি মাযার পূজারী, ক্ববর পূজারী, বিদ‘আতীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে, যখনই কেউ ক্ববর, মাযার বা বিদ‘আতের প্রতিবাদ করে, তখন তাঁকে ওয়াহ্হাবী, নবীর দুশমন ইত্যাদি অপবাদ দেয়া হয়।
‘ওয়াহ্হাবী’ নামটি এ আন্দোলনের কর্ণধার মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব বা তাঁর অনুসারীদের দেয়া নয়। পরবর্তীতে বিদ্বেষবশতঃ এই নামে চিত্রিত করা হয়েছে। হাসান ইবনু আব্দুল্লাহ আলে শায়খ এ সম্পর্কে বলেন, ‘ওয়াহ্হাবিয়্যাহ বিশেষণটি এ আন্দোলনের অনুগামীরা সৃষ্টি করেনি। বরং তাদের বিরুদ্ধবাদীরা তাদেরকে পৃথক করার জন্য এটা ব্যবহার করে যেন মানুষ তাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকে এবং শ্রোতারা মনে করে যে, এ আন্দোলন প্রচলিত বড় বড় চারটি মাযহাবের বিপরীতে পঞ্চম একটি মাযহাব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। তবে এ আন্দোলনের কর্মীরা নিজেদেরকে ‘সালাফী’ এবং তাদের দাওয়াতকে ‘সালাফী দাওয়াত’ বলে আখ্যায়িত করাকেই অধিক পসন্দ করতেন (আল-ওয়াহ্হাবিয়াহ ওয়া যাঈমুহা মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব, ৮/৮২১ পৃ.)। ষড়যন্ত্রমূলক এই কথাটি আজও সারাবিশ্বে প্রচলিত। অথচ আসল রহস্য অনেকেই জানে না।
প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান, মাদারীপুর।