উত্তর : ‘গাযওয়াতুল হিন্দ’ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) থেকে দু’জন বিশিষ্ট সাহাবীর বর্ণনা পরিলক্ষিত হয়। তাঁরা হলেন ছাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। ‘গাযওয়াতুল হিন্দ’ সম্পর্কে ছাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীছ সংখ্যা মাত্র একটি। আর এই হাদীছটিই ছহীহ সনদে প্রমাণিত। অপরদিকে আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকেও বর্ণিত হাদীছ সংখ্যা মূলত একটিই, কিন্তু হাদীছটি তাঁর থেকে পৃথক তিনটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আর ঐ তিনটি সূত্রই যঈফ বা দুর্বল। যেমন শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন,
فالخلاصة أن حديث ثوبان هو الذي صح في غزوة الهند ، وأما حديث أبي هريرة فعامة أسانيدها ضعيفة ، فالله أعلم
‘মোদ্দাকথা গাযওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে ছাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীছটিই সহীহ, পক্ষান্তরে আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীছগুলোর সনদসমূহ সবগুলোই যঈফ বা দুর্বল। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৪৫৬৩৬)। এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছগুলোর সংক্ষিপ্ত তাখরীজ ও তাহক্বীক হল,
(১) ছাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের দু’টি দলকে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন। একটি দল, যারা হিন্দুস্তানের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। আর দ্বিতীয় দল, যারা ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)-এর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধে থাকবে’ (নাসাঈ, হা/৩০৭৫; আহমাদ, হা/২২৩৯৬, ২২৪৪৯; বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১৮৩৮১; ত্বাবারানী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, ৭/২৩; মাজমাঊল যাওয়াইদ, ৫/২৮৫ পৃ.)। উক্ত হাদীছ সম্পর্কে শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) ও শু‘আইব আরনাঊত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন (সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৯৩৪; ছহীহুল জামি‘, হা/৪০১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩৯৬)।
(২) আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে হিন্দুস্তানের জিহাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদি আমি সে জিহাদ পেয়ে যাই, তাহলে আমি আমার জান-মাল সব কিছুই তাতে ব্যয় করব এবং যদি আমি শাহাদাত বরণ করি তবে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান শহীদ হিসাবে গণ্য হব। আর যদি আমি ফিরে আসি, তা হলে আমি আবূ হুরায়রা জাহান্নাম হতে মুক্তিপ্রাপ্ত হব’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১২৮; নাসাঈ, হা/৩১৭৩-৩১৭৪)। উক্ত হাদীছ সম্পর্কে শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, وهذا إسناد ضعيف بسبب جبر بن عبيدة ‘জাবর ইবনু আবীদার কারণে হাদীছটির সনদ দুর্বল’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৪৫৬৩৬)। ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি মুনকার। এই সানাদে জাবর ইবনু আবীদাহ নামক একজন মুনকার ও মাজহূল (অপরিচিত) রাবী আছে (মীযানুল ই‘তিদাল, ১/৩৮৮, নং-১৪৩৬)। শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন (নাসাঈ, হা/৩১৭৩-৩১৭৪)। শায়খ শু‘আইব আল-আরনাঊত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন (তাখরীজুল মুসনাদ, হা/৭১২৮)। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) ইবনু হিব্বান (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বিশ্বাসযোগ্য করণ বা তাওছীক্বের উপর নির্ভর করে জাবর ইবনু আবীদাহকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন (তাক্বরীবুত তাহযীব, নং-৮৯২)। কিন্তু শায়খ শু‘আইব আল-আরনাঊত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) ও বাশশার (রাহিমাহুল্লাহ) হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর এ মতের সমালোচনায় বলেন, ‘তাকে শুধু ইবনে হিব্বান (রাহিমাহুল্লাহ) ছিক্বাহ বা বিশ্বাসযোগ্য মনে করেছেন। অথচ তিনি ভুলবশতঃ মাজহূল (অপরিচিত) রাবীকে তাওছীক্ব করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এ রাবী মাজহূল (তাহরীরু তাক্বরিবীত তাহযীব, ১/২০৯ পৃ.)।
এই হাদীছটি অন্য সনদে ইবনু আবী আছিম তাঁর গ্রন্থ কিতাবুল জিহাদে (২/৬৬৮, হা/২৪৭, ২৯১) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ সনদটিও যঈফ। কারণ হলো ক- এই সনদে হাশিম ইবনু সাঈদ আবূ ইসহাক আল-কুফী, আল-বাসরী নামক দুর্বল রাবী আছেন (আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল, ইবনু আবী হাতীম, ৯/১০৫ পৃ., রাবী নং-৪৪৩; তাহযীবুত তাহযীব, ১১/১৭ পৃ., রাবী নং-৩৭)। খ- কিনানাহ ইবনু নাবীহ নামক যঈফ বা দুর্বল রাবী আছে (তাহরীরু তাক্বরিবীত তাহযীব, ৩/২০১ পৃ.)।
(৩) আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমার সত্যবাদী বন্ধু রাসূল (ﷺ) আমাকে বলেছেন, ‘এই উম্মতের মধ্যে একটি দল লড়াই করার জন্য সিন্ধু ও হিন্দুস্তানে প্রেরিত হবে। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি যদি সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়ে যেতে পারি তাহলে তো ভালো কথা। আর যদি (জীবিত) ফিরে আসি, তাহলেও আমি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবূ হুরায়রা হব’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮২৩)। শু‘আইব আল-আরনাঊত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটির সনদ দুর্বল (তাখরীজুল মুসনাদ, হা/৮৮২৩)।
(৪) আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মতের একটি দল হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে বিজয় দান করবেন, অতঃপর তাঁরা হিন্দুস্তানের রাজাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাঁদের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। তারপর তাঁরা সিরিয়া ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)-কে পাবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবূ হুরায়রাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি তখন নবী (ﷺ)-কে বলেছিলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার খুব আকাক্সক্ষা যে, আমি ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকটবর্তী হয়ে তাঁকে সংবাদ দেব যে, আমি আপনার সংশ্রবপ্রাপ্ত একজন ছাহাবী।’ তিনি বলেন, এতে রাসূল (ﷺ) মুচকি হেসে বললেন, সে (যুদ্ধ) তো অনেক দেরি! অনেক দেরি!’ (নাঈম ইবনু হাম্মাদ ‘আল-ফিতান’, ১/৪০৯-৪১০ ও ৩৯৯ পৃ., হা/১২৩৬, ১২৩৯)। এই হাদীছটি যঈফ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৪৫৬৩৬)।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ আল-মারুফ, পঞ্চগড়।