উত্তর : উক্ত সম্পত্তি ভোগ করা আপনার জন্য দোষনীয় নয়। কেননা আপনি ফুফুদের কম দেয়ার ব্যাপারে সহযোগী বা সাক্ষী ছিলেন না। তবে সন্তান হিসাবে বাবা ও চাচাদের ভুলটা শুধরে নেয়া আপনার দায়িত্ব। যতটুকু বঞ্চিত করা হয়েছে, সেই পরিমাণ টাকা বা সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া আপনার কর্তব্য। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘এতে কোন সন্দেহ নেয় যে, ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজ নিজ পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা কারোর উপর বিন্দুমাত্র যুল্ম করবেন না। আর কেউ অন্য কারোর পাপের বুঝা বহন করবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘প্রত্যেকেই স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী হবে এবং কেউ অন্য কারো ভার বহন করবে না’ (সূরা আল-আন‘আম: ১৬৪)। অন্যত্র বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ’ (সূরা আত-তূর: ২১; সূরা আল-মুদ্দাছছির: ৩৮; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩১৮৬৯৮)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘যে সৎকাজ করে সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই করে এবং কেউ মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। আর আপনার রব তাঁর বান্দাদের প্রতি মোটেও যুলুমকারী নন’ (সূরা আল-ফুছছিলাত: ৪৬)। তবে হ্যাঁ, যদি কেউ কাউকে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করে, উৎসাহিত করে, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বাধা প্রদান না করে, তবে সেও তার গুনাহে অংশীদার হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ২)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যাতে ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে আল্লাহ তা‘আলা মু‘মিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য, সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন (তাফসীর ইবনু কাছীর, ২/১২; তাফসীরে কুরতুবী, ৬/৪৬-৪৭ পৃ.)। যেহেতু পাপের কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোন ভাবেই সাহায্য করা যাবে না, তাই নিজস্ব ভাগের মধ্যে যতটুকু অংশ ফুফুরা পাবেন সেই পরিমাণ টাকা বা সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়াই উত্তম হবে।
দ্বিতীয়তঃ মানুষের অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ে তাওবাহ করার পূর্বে অধিকারীর নিকট তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা তার থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। কেননা রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুল্মের জন্য দায়ী থাকে’, (তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মান ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে যুল্ম করেছে), সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়, সেদিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দ্বীনার বা দিরহাম থাকবে না। যদি সেদিন তার কোন সৎকর্ম থাকে, তাহলে তার যুল্মের পরিমাণ তার থেকে নিয়ে নেয়া হবে, আর যদি তার কোন সৎকর্ম না থাকে, তাহলে মাযলূমের সমপরিমাণ পাপ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে (ছহীহ বুখারী, হা/২৪৪৯, ৬৫৩৪; তিরমিযী, হা/২৪১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬১৩; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৮৩০৯৯; ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ, ১৫/৩৫২ পৃ.)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘...যদি পাপের সম্পর্ক মানুষের অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে তাওবাহ ক্ববুলের জন্য অধিকারীর অধিকার ফিরিয়ে দেয়া শর্ত। যদি অবৈধ পন্থায় কারো মাল বা অন্য কিছু নিয়ে থাকে, তাহলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে’ (রিয়াযুছ ছালিহীন, ‘তাওবাহ’ অনুচ্ছেদ, পৃ. ১৪-২২)। ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মালিকের অনুমতি ব্যতীত কোন জিনিস নিলে তা ফিরিয়ে দেয়া অপরিহার্য‘ (যাদুল মা‘আদ, ৫/৬৯০ পৃ.)। শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কারোর কিছু চুরি করলে, তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলতে হবে যে, আপনার এই মালটা আমার কাছে থেকে গিয়েছিল। অতএব আপনি তা ফেরত নিন এবং দু’জনের মধ্যে সমাধান করে নিতে হবে (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, ৪/১৬২; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৮৩০৯৯)।
তৃতীয়তঃ সন্তান হিসাবে আপনার উচিত পিতা-মাতার জন্য বেশি বেশি দু‘আ করা, দান-ছাদাক্বাহ করা, তাদের ভুলভ্রান্তি গুলোকে সংশোধন করা এবং তাদের জন্য তাওবাহ ইস্তিগফার করা। কেননা রাসূল (ﷺ) বলেছেন, إِنَّ الرَّجُلَ لَتُرْفَعُ دَرَجَتُهُ فِي الْجَنَّةِ فَيَقُوْلُ أَنَّى هَذَا فَيُقَالُ بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ ‘জান্নাতে কিছু মানুষের মর্যাদা অবশ্যই বৃদ্ধি করা হবে। সে বলবে, এটা (মর্যাদা বৃদ্ধি) কিভাবে হলো? সুতরাং তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তোমার সন্তান-সন্ততিদের মাগফিরাত কামনা করার কারণে’ (ইবনু মাজাহ, হা/৩৬৬০; ইবনু আবী শায়বাহ, হা/২৯৭৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৬১০; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৫৯৮; ছহীহুল জামি‘, হা/১৬১৭)।
প্রশ্নকারী : মোঃ আবু তাহের সৈকত, গাবতলি, বগুড়া।