উত্তর : দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করতে না পারলে চেয়ারে বসে ছালাত আদায় করতে পারবে। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে বা চেয়ারে বসে ছালাত আদায়কারীর উপর রুকূর তুলনায় সিজদাহতে একটু বেশি অবনত হওয়া অপরিহার্য। রুকূ অবস্থায় হস্তদ্বয়কে উরুদ্বয়ের উপর রাখা সুন্নাত। সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য সিজদাহ অবস্থায় হস্তদ্বয়কে মাটিতে রাখা ওয়াজিব। আর যদি সামর্থ্যবান না হয়, তবে উরুদ্বয়ের উপরেই রাখবে। কেননা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদাহ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। ললাট, নাসিকা, হস্তদ্বয়, হাঁটুদ্বয় এবং পদযুগলের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় গুটিয়ে না নিই’ (ছহীহ বুখারী, হা/৮১২)।
আর যে সমস্ত অপারগ ব্যক্তি চেয়ারে বসে ছালাত আদায় করছে, তারা না পারলেও কোন দোষ নেয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, فَاتَّقُوا اللّٰہَ مَا اسۡتَطَعۡتُمۡ ‘তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর’ (সূরা আত-তাগাবূন : ১৬)। এতদ্ব্যতীত শরী‘আতের নির্দেশিত কোন বিষয়কে সাধ্যানুসারে মেনে চলার ব্যাপারে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশনা প্রদান করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/৭২৮৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৭; ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১২তম খণ্ড, পৃ. ২৪৫-২৪৬)।
ইমরান ইবনু হুছাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অর্শরোগ ছিল। তাই আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে এ অবস্থায় ছালাত আদায় করার পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ ‘দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে, তা না পারলে বসে করবে। যদি তাও না পার তাহলে একপাশে শুয়ে আদায় করবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/১১১৭; তিরমিযী, হা/৩৭১; আবূ দাঊদ, হা/৯৫২)।
উক্ত হাদীছ সম্পর্কে সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করতে অসমর্থ ব্যক্তি মাটিতে বা চেয়ারে বসে ছালাত আদায় করবে এবং ঝুঁকে রুকু ও সিজদাহ করবে। আর সিজদাহতে রুকূর তুলনায় একটু বেশি অবনত হবে। তবে কোন অবস্থাতেই বালিশে সিজদাহ করা জায়েয না (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৬০)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুসলিমরা এ বিষয়ে ঐকমত্য যে, যখন মুছল্লী ছালাতের কোন বিধান পালন করতে অপারগ হবে, যেমন ক্বিয়াম, ক্বিরাত, রুকু, সিজদাহ, ক্বিবলা নির্ধারণ করা ইত্যাদি, তখন সে তার সাধ্যানুযায়ী উক্ত বিধানটি আদায় করবে’ (ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৩৭)।
এক্ষণে বসার প্রকৃত অর্থ পরিষ্কার করা যরূরী। শায়খ ছালেহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এক্ষেত্রে চার জানু বা পদযুগলের উপর নিতম্ব রেখে বসা অপরিহার্য নয়, বরং সে তার সুবিধার্থে ইচ্ছামত বসতে পারে। কেননা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘দাঁড়িয়ে না পারলে বসে ছালাত আদায় করবে। কিন্তু তিনি বসার কোন পদ্ধতি নির্ধারণ করেননি’ (শারহুল মুমতি‘, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৬২)।
উক্ত হাদীছে যমীনে বসার কথা বলা হয়নি, বরং তাকে শুধু বসার কথা বলা হয়েছে, সেটা যমীনের উপর বসা হতে পারে, আবার চেয়ারের উপর বসাও হতে পারে। আরবের লোকেরা চেয়ারের উপর উপবেশিত হওয়াকেও ‘বসা’ বলে থাকে (ছহীহ বুখারী, হা/৬৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৭৯; নাসাঈ, হা/৯৩-৯৪, ৫৩৭৭; আবূ দাঊদ, হা/১১১, সনদ ছহীহ)। অতএব নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তিকে বসার অনুমতি দিয়েছেন এবং তিনি বসাকে মাটির সঙ্গে নির্দিষ্ট করেননি। সুতরাং কোন প্রমাণ ছাড়াই একটা স্বাধীন বিষয়কে সীমিত করা এবং প্রশস্ত বিষয়কে সংকোচিত করা অনুচিত। চেয়ারে বসে ছালাত আদায় করাকে বিদ‘আত বলেছেন, এমন কোন জ্ঞানী মুফতিকে আমরা জানি না (ইসলাম ওয়েব, ফাতাওয়া নং-১৩৫৩৪৬)।
‘কাতারের কোথায় চেয়ার রাখতে হবে’ এ সম্পর্কে আলেমগণ বলেন, ‘বসে ছালাত আদায়কারী ব্যক্তি যেখানে নিতম্ব রাখেন সেখানেই চেয়ার রাখতে হবে, কাতারের আগে বা পিছে করা যাবে না (আসনাল মাত্বালিব, ১ম খণ্ড, পৃ. ২২২; তুহফাতুল মুহতাজ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫৭; শারতু মুনতাহাল ইদারাত, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৭৯; ইসলাম সুওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-৫০৬৮৪, ৩৬৭৩৮, ৯৩০৭)।
প্রশ্নকারী : ছালাহ উদ্দিন, ভানপুর, গোদাগাড়ী, রাজশাহী।