উত্তর : যে ইসলাম গ্রহণের জন্য কালেমাহ শাহাদত পাঠ করতে চাইবে, তার জন্য সাক্ষ্য উপস্থিত করা যরূরী নয়। বরং ইসলামে প্রবেশ করার জন্য শুধু মুখে কালেমা পাঠ করলেই যথেষ্ট হবে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং ১১৯৩৬)। শায়খ ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হল- এতে সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে কোন মাধ্যম নেই। ইসলামের আরেকটি সুন্দর দিক হচ্ছে- এই দ্বীন গ্রহণ করার জন্য বিশেষ কোন ব্যক্তির কাছে কর্মপ্রক্রিয়া নেই। কিংবা বিশেষ ব্যক্তিবর্গের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। বরং ইসলাম গ্রহণ করা খুবই সহজ। কোন মানুষ নিজে নিজেই সেটা করতে পারে, এমনকি সে যদি একেবারে নিঃসঙ্গ হয় কিংবা মরুভূমিতে থাকে কিংবা কোন বদ্ধ গৃহে থাকে সেখানেও সে নিজে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে।
আর এর প্রক্রিয়াটি হচ্ছে- ‘আশ্হাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রাসূলুহু’ এই সুন্দর দু’টি বাক্য উচ্চারণ করা। যার মধ্যে পরিপূর্ণ ইসলামের মর্ম নিহিত রয়েছে। যাতে অন্তর্ভুক্ত আছে- মানুষের পক্ষ থেকে আল্লাহর দাসত্বের স্বীকৃতি, আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ, আল্লাহকে মা‘বূদ হিসাবে স্বীকার করে নেয়া, নিজের উপর আল্লাহকে সব কিছুর হুকুমদাতা হিসাবে মেনে নেয়া। যাতে রয়েছে- মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর নবী হওয়ার সাক্ষ্য, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু অহী হিসাবে নিয়ে এসেছেন সে সবের অনুসরণ করা আবশ্যকীয়, তাঁর আনুগত্য হচ্ছে- আল্লাহরই আনুগত্য। যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সাথে এ সাক্ষ্যবাণীদ্বয় উচ্চারণ করবে সে ইসলামে প্রবেশ করবে এবং মুসলিমদের একজন হিসাবে গণ্য হবে। মুসলিমদের প্রাপ্য যে যে অধিকার রয়েছে তার জন্যও সেসব অধিকার সাব্যস্ত হবে এবং মুসলিমদের উপর যে যে দায়িত্ব রয়েছে তার উপর সেসব দায়িত্ব বর্তাবে। যেমন যথাসময়ে ছালাত আদায় করা, যাকাত আদায় করা, রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা ইত্যাদি’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৭/৩২ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৬৭০৩)।
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী (ﷺ) মু‘আয (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ইয়ামান দেশে শাসক হিসাবে প্রেরণ করেন। অতঃপর বললেন, সেখানকার অধিবাসীদেরকে এ সাক্ষ্য দানের প্রতি আহ্বান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর প্রতি দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যদি সেটা তারা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে যাকাত ফরয করেছেন। যেটা ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর দরিদ্রদের মাঝে প্রদান করা হবে (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৯৫, ১৪৫৮, ১৪৯৬, ২৪৪৮, ৪৩৪৭, ৭৩৭১, ৭৩৭২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯)।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এ কথা দিবালোকের ন্যায় প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম গ্রহণকালে সাক্ষী রাখা ও প্রকাশ করা মৌলিক শর্ত নয়, বরং তা মুস্তাহাব। তবে বিপদের আশঙ্কা থাকলে প্রয়োজনে ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখাও দোষণীয় নয় (সূরা আল-মুমিন বা গাফির : ২৮)।
প্রশ্নকারী : ছাকিব, নওগাঁ।