সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৪:২৬ অপরাহ্ন
উত্তর : জুম‘আর খুৎবাহ বসে দেয়া যাবে না। মিম্বারে বসে খুৎবাহ দেয়া সুন্নাত বিরোধী আমল। খত্বীব ছাহেব মিম্বারে দাঁড়িয়েই জুমু‘আর খুৎবাহ দিবেন। এটা অপরিহার্য বিধান বা বিধিবদ্ধ সুন্নাত। কারণ রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো বসে খুৎবাহ প্রদান করেননি, যদিও তিনি মৃত্যুর পূর্বে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে (প্রথম) খুৎবাহ দিতেন, অতঃপর বসতেন এবং পুনরায় উঠে দাঁড়িয়ে (দ্বিতীয়) খুৎবাহ দিতেন। কেউ যদি তোমাকে বলে যে, তিনি বসে খুৎবাহ দিতেন, তবে সে মিথ্যা বলেছে। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দুই হাজারের অধিক সংখ্যক ওয়াক্তের ছালাত আদায় করেছি (ছহীহ মুসলিম, হা/৪৬২; আবূ দাঊদ, হা/১০৯৩, ১০৯৪; নাসাঈ, হা/১৪১৫; ইবনু মাজাহ, হা/১১০৫-১১০৬)

এজন্য অধিকাংশ মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরাম দাঁড়িয়ে খুৎবাহ প্রদান করাকে অপরিহার্য শর্ত হিসাবে উল্লেখ করেছেন (আল-মাজমূঊ, ৪/২৬৮ ও ৫১৪-৫১৫ পৃ.; রাওযাতুত্ব ত্বালিবীন, ২/২৬ পৃ.; মুগনী আল-মুহতাজ, ১/২৮৭ পৃ.; আল-মুগনী, ৩/১৬ পৃ.; আল-ইনছাফ, ২/২৭৮ ও ৩৯৭ পৃ.)। ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَ تَرَکُوۡکَ  قَآئِمًا ‘তারা আপনাকে রেখে গিয়েছিল দাঁড়ানো অবস্থায়’ (সূরা আল-জুমু‘আহ : ১১)। অধিকাংশ ফক্বীহ ও ইমাম বলেন, এই আয়াত প্রমাণ করে যে, খুৎবাহ প্রদান কালে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে খুৎবাহ পরিবেশন করা অপরিহার্য শর্ত’ (তাফসীরে কুরতুবী, ১০/২১ ও ১৮/১১৪ পৃ.)। ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলিমগণের ইজমা‘ বা ঐকমত্যানুসারে সামর্থ্যবানদের জন্য দাঁড়িয়ে খুৎবাহ পরিবেশন করা অপরিহার্য শর্ত (আল-ইসতিযকার, ২/৬১ পৃ.; শারহুন নববী, ৬/১৫০ পৃ.)। তিনি বলেন, দাঁড়িয়ে খুত্ববাহ পরিবেশন করাই বিধিবদ্ধ সুন্নাত। অতএব এর বিপরীত করা যাবে না (আল-মাজমূঊ, ৪/৫১৫ পৃ.; শারহুয যারকশী, ২/১৭৩ পৃ.)

কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন আব্দুর রহমান ইবনুল হাকাম বসা অবস্থায় খুৎবাহ‌ দিচ্ছিলেন। কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, তোমরা এ হতচ্ছাড়া নরাধমের প্রতি লক্ষ্য কর, সে বসে বসে খুৎবাহ‌ দিচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এবং যখন তারা দেখল ব্যবসা ও কৌতুকের বিষয়, তখন তারা আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে গেল’ (সূরা জুমু‘আহ : ১১; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৬৪; নাসাঈ, হা/১৩৯৭)। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই খুৎবাহ এর মাঝে বসার বিধান দিয়েছেন। যদি বসে বসে খুৎবাহ প্রদান করাটাই শরী‘আতসম্মত হয়, তাহলে দুই খুৎবার মাঝে আলাদা করে বসার প্রয়োজন কী ছিল? (ফাৎহুল বারী, ২/৪০১ পৃ.)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘জুমু‘আর ফরযসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম ফরয হল খুৎবাহ। ছালাতের মত এর মধ্যেও দাঁড়ানো এবং বসাকে ওয়াজিব করা হয়েছে’ (আল-মাজমূঊ, ৪/৫১৪ পৃ.)

ইমাম ইবনু মাজাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুৎবাহ প্রদান করতেন এবং রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগ থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত উত্তরাধিকার সূত্রে দাঁড়িয়ে খুৎবাহ প্রদান করা প্রচলিত আছে’ (আল-মুহিতুল বুরহানী, ২/৭৪ পৃ.)

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), খুলাফায়ে রাশিদীন ও পরবর্তী সালাফদের আমল থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, দাঁড়িয়ে খুৎবাহ প্রদান করা অপরিহার্য। আর এটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত। বিধায় মিম্বারের উপর বসে বসে খুৎবাহ পরিবেশন করা স্পষ্ট সুন্নাত বিরোধী। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, দাঁড়িয়ে খুৎবাহ প্রদান করা এবং দুই খুত্ববার মাঝে বসা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত। সুতরাং এর বিপরীত করাটাই বিদ‘আত হবে’ (আস-সাইলুল জার্রার, ১/১৮২ পৃ.)

উল্লেখ্য যে, দাঁড়িয়ে খুৎবা প্রদান করতে সক্ষম এমন ব্যক্তি পাওয়া না গেলে বা খুৎবা দেয়ার কোন মানুষ না পাওয়া গেলে বাধ্যগত অবস্থায় সাময়িক বসে খুৎবা দেয়াকে কোন কোন ফক্বীহ জায়েয বলেছেন। তবে সেখানেও মতভেদ রয়েছে (ফাতাওয়া আশ-শাবাকাতুল ইসলামিয়্যাহ, ১১/১৮৭৩ পৃ.; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৭২২৮০; সুবুলুস সালাম, ২/১২১ পৃ.)। দুর্ভাগ্য হল, আরবী ভাষাতেই খুৎবা প্রদান করা আবশ্যক এই বিদ‘আতী প্রথাকে বৈধ করার জন্য বর্তমানে জুমু‘আর খুৎবার পূর্বে মিম্বারে বসে খুৎবা দেয়ার বিদ‘আত অধিকাংশ মসজিদে চালু রয়েছে।


প্রশ্নকারী : আব্দুল ক্বাইয়ূম, নাটোর।





প্রশ্ন (৩৬) : ঈদের খুৎবা চলা কালে টাকা-পয়সা আদায় করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় দাড়ি প্রস্থ এবং দৈর্ঘ্য হতে ছেঁটে নিতেন (তিরমিযী, হা/২৭৬২)। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : কিছু সংখ্যক কাফির শত্রুকে হত্যা করার জন্য তথাকথিত শহীদী হামলার নামে নিজেকে বিস্ফোরিত করার বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩) : মাঝে মাঝে অনেক হতাশা ও দুশ্চিন্তা চেপে বসে। করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৮) : মসজিদে ফজরের ছালাতের পর পঠিতব্য দু‘আ পাঠ শেষ হওয়ার আগেই এবং ছুটে যাওয়া সুন্নাত শেষ হওয়ার আগেই, একজন মাইক নিয়ে প্রতিদিন হাদীছ শুনায়, ছালাত শিখায়। এ সময় এভাবে শিক্ষা দেয়া কি শরী‘আত সম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : পালিত পুত্র-কন্যা কি পালক পিতা-মাতার জন্য এবং তাদের প্রকৃত সন্তানদের ক্ষেত্রে মাহরাম হিসাবে গণ্য হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৯) : বিয়ের জন্য সূরা আহযাব লিখে রাখলে ঠিক কতদিনের মধ্যে ফল পাওয়া যায়? এমন কাজ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : শাওয়াল মাসে বিয়ে করা কি সুন্নত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৩) : বিশেষ প্রয়োজনে কুরবানী দাতা কি কুরবানী করার আগে নখ, চুল ইত্যাদি কাটতে পারে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : কতদিনে আক্বীক্বা দিতে হয় এবং ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য কয়টি করে আক্বীক্বা দিতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : কোন অমুসলিম যদি কালেমা পাঠ করে মুসলিম হয়, তাহলে তার কি সুন্নাতে খাৎনা করা এবং এভিডেভিট করা যরূরী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : কুনূতে নাযেলা নফল ছালাতে পড়া যাবে কি? এর নিয়মটা কেমন? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ