শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন
উত্তর : জুম‘আর খুৎবাহ বসে দেয়া যাবে না। মিম্বারে বসে খুৎবাহ দেয়া সুন্নাত বিরোধী আমল। খত্বীব ছাহেব মিম্বারে দাঁড়িয়েই জুমু‘আর খুৎবাহ দিবেন। এটা অপরিহার্য বিধান বা বিধিবদ্ধ সুন্নাত। কারণ রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো বসে খুৎবাহ প্রদান করেননি, যদিও তিনি মৃত্যুর পূর্বে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে (প্রথম) খুৎবাহ দিতেন, অতঃপর বসতেন এবং পুনরায় উঠে দাঁড়িয়ে (দ্বিতীয়) খুৎবাহ দিতেন। কেউ যদি তোমাকে বলে যে, তিনি বসে খুৎবাহ দিতেন, তবে সে মিথ্যা বলেছে। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দুই হাজারের অধিক সংখ্যক ওয়াক্তের ছালাত আদায় করেছি (ছহীহ মুসলিম, হা/৪৬২; আবূ দাঊদ, হা/১০৯৩, ১০৯৪; নাসাঈ, হা/১৪১৫; ইবনু মাজাহ, হা/১১০৫-১১০৬)

এজন্য অধিকাংশ মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরাম দাঁড়িয়ে খুৎবাহ প্রদান করাকে অপরিহার্য শর্ত হিসাবে উল্লেখ করেছেন (আল-মাজমূঊ, ৪/২৬৮ ও ৫১৪-৫১৫ পৃ.; রাওযাতুত্ব ত্বালিবীন, ২/২৬ পৃ.; মুগনী আল-মুহতাজ, ১/২৮৭ পৃ.; আল-মুগনী, ৩/১৬ পৃ.; আল-ইনছাফ, ২/২৭৮ ও ৩৯৭ পৃ.)। ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَ تَرَکُوۡکَ  قَآئِمًا ‘তারা আপনাকে রেখে গিয়েছিল দাঁড়ানো অবস্থায়’ (সূরা আল-জুমু‘আহ : ১১)। অধিকাংশ ফক্বীহ ও ইমাম বলেন, এই আয়াত প্রমাণ করে যে, খুৎবাহ প্রদান কালে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে খুৎবাহ পরিবেশন করা অপরিহার্য শর্ত’ (তাফসীরে কুরতুবী, ১০/২১ ও ১৮/১১৪ পৃ.)। ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলিমগণের ইজমা‘ বা ঐকমত্যানুসারে সামর্থ্যবানদের জন্য দাঁড়িয়ে খুৎবাহ পরিবেশন করা অপরিহার্য শর্ত (আল-ইসতিযকার, ২/৬১ পৃ.; শারহুন নববী, ৬/১৫০ পৃ.)। তিনি বলেন, দাঁড়িয়ে খুত্ববাহ পরিবেশন করাই বিধিবদ্ধ সুন্নাত। অতএব এর বিপরীত করা যাবে না (আল-মাজমূঊ, ৪/৫১৫ পৃ.; শারহুয যারকশী, ২/১৭৩ পৃ.)

কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন আব্দুর রহমান ইবনুল হাকাম বসা অবস্থায় খুৎবাহ‌ দিচ্ছিলেন। কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, তোমরা এ হতচ্ছাড়া নরাধমের প্রতি লক্ষ্য কর, সে বসে বসে খুৎবাহ‌ দিচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এবং যখন তারা দেখল ব্যবসা ও কৌতুকের বিষয়, তখন তারা আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে গেল’ (সূরা জুমু‘আহ : ১১; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৬৪; নাসাঈ, হা/১৩৯৭)। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই খুৎবাহ এর মাঝে বসার বিধান দিয়েছেন। যদি বসে বসে খুৎবাহ প্রদান করাটাই শরী‘আতসম্মত হয়, তাহলে দুই খুৎবার মাঝে আলাদা করে বসার প্রয়োজন কী ছিল? (ফাৎহুল বারী, ২/৪০১ পৃ.)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘জুমু‘আর ফরযসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম ফরয হল খুৎবাহ। ছালাতের মত এর মধ্যেও দাঁড়ানো এবং বসাকে ওয়াজিব করা হয়েছে’ (আল-মাজমূঊ, ৪/৫১৪ পৃ.)

ইমাম ইবনু মাজাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুৎবাহ প্রদান করতেন এবং রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগ থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত উত্তরাধিকার সূত্রে দাঁড়িয়ে খুৎবাহ প্রদান করা প্রচলিত আছে’ (আল-মুহিতুল বুরহানী, ২/৭৪ পৃ.)

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), খুলাফায়ে রাশিদীন ও পরবর্তী সালাফদের আমল থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, দাঁড়িয়ে খুৎবাহ প্রদান করা অপরিহার্য। আর এটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত। বিধায় মিম্বারের উপর বসে বসে খুৎবাহ পরিবেশন করা স্পষ্ট সুন্নাত বিরোধী। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, দাঁড়িয়ে খুৎবাহ প্রদান করা এবং দুই খুত্ববার মাঝে বসা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত। সুতরাং এর বিপরীত করাটাই বিদ‘আত হবে’ (আস-সাইলুল জার্রার, ১/১৮২ পৃ.)

উল্লেখ্য যে, দাঁড়িয়ে খুৎবা প্রদান করতে সক্ষম এমন ব্যক্তি পাওয়া না গেলে বা খুৎবা দেয়ার কোন মানুষ না পাওয়া গেলে বাধ্যগত অবস্থায় সাময়িক বসে খুৎবা দেয়াকে কোন কোন ফক্বীহ জায়েয বলেছেন। তবে সেখানেও মতভেদ রয়েছে (ফাতাওয়া আশ-শাবাকাতুল ইসলামিয়্যাহ, ১১/১৮৭৩ পৃ.; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৭২২৮০; সুবুলুস সালাম, ২/১২১ পৃ.)। দুর্ভাগ্য হল, আরবী ভাষাতেই খুৎবা প্রদান করা আবশ্যক এই বিদ‘আতী প্রথাকে বৈধ করার জন্য বর্তমানে জুমু‘আর খুৎবার পূর্বে মিম্বারে বসে খুৎবা দেয়ার বিদ‘আত অধিকাংশ মসজিদে চালু রয়েছে।


প্রশ্নকারী : আব্দুল ক্বাইয়ূম, নাটোর।





প্রশ্ন (১৯) : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির যাকাত ফরয হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : একই রাতে দুইবার বিতর পড়া যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : যে সকল ভাইয়েরা সঊদী আরবে কাজ করতে যাই, তারা কি সেখানকার দান করা টাকা গ্রহণ করতে পারবে, অথচ তাদের স্বদেশে আর্থিক অবস্থা ভাল? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : হজ্জের সময় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করতে হয় কী কারণে? সেখানে কি শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়েছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : হক্ব বা সত্য কি একটি না একাধিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : একই আমল একাধিক নিয়তে করা যাবে কি? যেমন আইয়ামে বীযের ছিয়ামের তারিখে মাঝেমধ্যে সোম বা বৃহস্পতিবার পড়ে, এছাড়াও অন্যান্য অনেক আমল রয়েছে, যা আমল দেখতে একই কিন্তু তার ফযীলাত ভিন্ন ভিন্ন। তাহলে  সেই আমল একাধিক ফযীলত লাভের নিয়তে করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : কোন গায়র মাহরাম ড্রাইভারের সাথে মহিলার একাকিনী কোথাও যাওয়া কি বৈধ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : মিশনারী স্কুলে পড়ালেখা করা কি জায়েয? খ্রিস্টানদের চিহ্ন সম্বলিত ইউনিফর্ম পরিধান করার বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের মাঠে স্থাপিত মীযানকে অস্বীকার করে তার পরিণাম হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : প্রচলিত আছে যে, আল্লাহর দু’হাতই ডান হাত। কিন্তু মিশকাতে একটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর ডান ও বাম দু’হাতই রয়েছে। কোনটি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৮) : কুরবানী করার সময় কি যিনি কুরবানী দিচ্ছেন তার নাম উল্লেখ করা যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : হাদীছে বলা হয়েছে যে, খারিজীরা জাহান্নামের কুকুর (ইবনু মাজাহ, হা/১৭৬; তিরমিযী, হা/৩০০০; সনদ ছহীহ)। কুকুর বলে কী বুঝানো হয়েছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ