উত্তর : পশ্চিম দিকে সূর্য একটু ঢলে যাওয়ার সাথে সাথে চার রাক‘আত ছালাত পড়াকে ‘ছালাতুল যাওয়াল’ বলে। এ সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
عَنْ أَبيِْ أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيْ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أُنَّ النَّبِيَ ﷺ كاَنَ يُدْمِنُ أَرْبَعَ رَكْعَاتٍ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّكَ تُدْمِنُ هَذِهِ الأْرْبَعَ رَكَعَاتٍ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ؟ فَقَالَ إِنَّ أَبْوَابِ السَّمَاءِ تُفْتَحُ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ فَلَا تُرَتِّجُ حَتَّى يُصَلِّى الظُّهْرَ فَأُحِبُّ أَنْ يَّصْعَدَ لِيْ فِيْ تِلْكَ السَّاعَةِ خَيْرٌ قُلْتُ : أَفِيْ كُلِّهِنَّ قِرَاءَةٌ؟ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ : هَلْ فِيْهِنَّ تَسْلِيْمٌ فَاصِلٌ ؟ قَالَ لَا
আবু আইয়ূব আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) প্রতিনিয়ত সূর্য ঢলার সময় চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। আমি একদা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল (ﷺ)! আপনি সূর্য ঢলার সময় এই চার রাক‘আত প্রতিনিয়তই পড়ছেন?’ তিনি বললেন, সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয় এবং যোহরের ছালাত না পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। তাই আমি পসন্দ করি যে, এই সময় আমার সৎ আমল উত্তোলন করা হোক। আমি প্রশ্ন করলাম, এই ছালাতের প্রত্যেক রাক‘আতেই কি ক্বিরাআত আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি আবার বললাম, এর মাঝে পৃথককারী কোন সালাম আছে কি? তিনি বললেন, না (আহমাদ হা/২৩৫৭৯; তিরমিযী হা/৪৭৮; সনদ ছহীহ, মুখতাছারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়াহ, হা/২৪৯)। অন্য হাদীছে বলেন, أَرْبَعٌ قَبْلَ الظُّهْرِ لَيْسَ فِيْهِنَّ تَسْلِيْمٌ تُفْتَحُ لَهُنَّ أَبْوَابُ السَّمَاءِ ‘যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ছালাত আছে, যার মাঝে কোন সালাম নেই। তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয় (আবুদাঊদ হা/১২৭০; ইবনু মাজাহ হা/১১৫৭, সনদ হাসান)। অন্য হাদীছে এসেছে,
أنهُ كان يُصلِّي أربعَ ركعاتٍ بعدَ الزوالِ لا يُسلِّمُ إلا في آخرِهنَّ ‘রাসূল (ﷺ) সূর্য ঢলার পর চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। তিনি চার রাক‘আত শেষ না করে সালাম ফিরাতেন না’ (তিরমিযী হা/৪৭৮; সনদ জাইয়িদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৪০৪)।
উক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, এই চার রাক‘আত ছালাত একটানা পড়তে হবে। মাঝে তাশাহ্হুদ বা সালাম ফিরানো যাবে না। অন্য হাদীছে রাসূল (ﷺ) বলেন,أَرْبَعُ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ يُعْدَلْنَ بِصَلاَةِ السَّحَرِ ‘যোহরের পূর্বের চার রাক‘আত সালাত তাহাজ্জুদ ছালাতের সমতুল্য’ (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৫৯৯১; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৩১)।
অনেকে বলতে চেয়েছেন যে, এটা যোহরের সুন্নাত ছালাত, পৃথক কোন ছালাত নয়। আসলে এটা পৃথক ছালাত। যেমন ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
قَدْ يُقَالُ إنّ هَذِهِ الْأَرْبَعَ لَمْ تَكُنْ سُنّةَ الظّهْرِ، بَلْ هِيَ صَلَاةٌ مُسْتَقِلّةٌ كَانَ يُصَلّيهَا بَعْدَ الزّوَالِ
‘এটা বলা যাবে যে, এই চার রাক‘আত ছালাত যোহরের সুন্নাত নয়, বরং তা স্বতন্ত্র ছালাত, যা রাসূল (ﷺ) সূর্য ঢলে যাওয়ার পরই পড়ে নিতেন (যাদুল মা‘আদ, ১/২৯৮ পৃ.)। তিনি আরও বলেন,
فَتَكُوْنُ هَذِهِ الْأَرْبَعُ الّتِيْ قَبْلَ الظّهْرِ وِرْدًا مُسْتَقِلّا سَبَبُهُ انْتِصَافُ النّهَارِ وَزَوَالُ الشّمْسِ... أَنّ انْتِصَافَ النّهَارِ مُقَابِلٌ لِانْتِصَافِ اللّيْلِ وَأَبْوَابُ السّمَاءِ تُفَتّحُ بَعْدَ زَوَالِ الشّمْسِ وَيَحْصُلُ النّزُوْلُ الْإِلَهِيّ بَعْدَ انْتِصَافِ اللّيْلِ فَهُمَا وَقْتَا قُرْبٍ وَرَحْمَةٍ هَذَا تُفَتّحُ فِيهِ أَبْوَابُ السّمَاءِ وَهَذَا يَنْزِلُ فِيْهِ الرّبّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إلَى سَمَاءِ الدّنْيَا
‘এই চার রাক‘আত স্বতন্ত্র ছালাত যা তিনি সূর্য ঢলার পর পড়তেন। আর এই স্বতন্ত্র আমলটি করার পেছনে কারণ হল, এটি দিনের ঠিক মধ্যভাগ ও সূর্য ঢলার সময়। এর রহস্য হল-আল্লাহ ভালো জানেন- এটি দিনের মধ্যভাগ যার অবস্থান রাতের ঠিক মধ্যভাগের বিপরীতে। দিনের মধ্যভাগে সূর্য ঢলার পর আসমানের দরজা সমূহ খোলা হয় আর রাতের মধ্যভাগের পর মহান আল্লাহর অবতরণ ঘটে। সুতরাং এ দু’টি আল্লাহর নৈকট্য ও রহমতের সময়। দিনের মধ্যভাগে আসমানের দরজাগুলো উন্মুক্ত হয় আর রাতের মধ্যভাগে মহান রব দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন (যাদুল মা‘আদ, ১/২৯৮ পৃ.)। আল্লামা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন, هذه سنة الزوال، وهي غير سنة الظهر ‘এটা যাওয়ালের ছালাত, যোহরের পূর্বের সুন্নাত নয়’ (মির‘আতুল মাফাতীহ ৪/১৪৬ পৃ.)। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ হাসনাত, কুড়িগ্রাম।