উত্তর : তারতীলসহ ধীরস্থিরতার সাথে তেলাওয়াত করে তারাবীহর ছালাতে কুরআন খতম করা ভাল। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে তারাবীহর ছালাতে কুরআন খতমের বিষয়টি প্রমাণিত নয়। কারণ নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাত্র তিনদিন জামা‘আত সহকারে ক্বিয়ামুল লাইল কিংবা তারাবীহর ছালাত আদায় করেছিলেন। তবে তিনি এক রাক‘আতেই সূরা আল-বাক্বারাহ, সূরা আন-নিসা ও সূরা আলে ‘ইমরান পড়ে (ছহীহ মুসলিম, হা/৭৭২) বরং লম্বা ক্বিরায়াত ও খতমে কুরআনের দিকেই ইঙ্গিত করে গেছেন। তাছাড়া রামাযান মাসে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও জিবরীল (আলাইহিস সালাম) একে অপরকে কুরআন শুনাতেন (ছহীহ বুখারী, হা/৬, ১৯০২, ৩২২০, ৩৫৫৪, ৪৯৯৭; মুসলিম হা/৩২০৮)। ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তো এই লম্বা ক্বিরাআতে ক্লান্ত হয়ে ভেবেই বসেছিলেন যে, তিনি বসে যাবেন নতুবা এই ছালাতই ছেড়ে দিবেন (ছহীহ বুখারী, হা/১১৩৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৭৩)।
তারাবীহতে সালাফগণ কত চমৎকারভাবে কুরআন খতম করতেন তা ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন (জালাউল আফহাম, পৃ. ৪০২-৪০৩)। ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেন যে, ফযল ইবনু যিয়াদ আহমাদ ইবনু হান্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করেন, আমি কি তারাবীহর ছালাতে কুরআন খতম করব, না-কি বিতরের ছালাতে? প্রতুত্তরে তিনি বললেন, তারাবীহর ছালাতে’ (আল-মুগনী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৯৬)।
খতমে তারাবীহ সম্পর্কে শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ধীরস্থিরতার সাথে শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ চিন্তা করে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে খতম তারাবীহ পড়া ভালো। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) পসন্দ করতেন যে, রামাযান মাসে ইমাম মুক্তাদীদের পুরো কুরআন শুনাবে। এ আমল সালাফে ছালিহীনের যুগ থেকে চলে আসছে। কিন্তু একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা ও ধীরস্থিরতাকে ত্যাগ করে, দ্রুতগতিতে তুফানের বেগে তিলাওয়াত করে, খতম না করাই উত্তম’ (ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৩৩১-৩৩৩)।
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তারাবীহতে কুরআন খতম করা ইমামের প্রতি ওয়াজিব নয়। কেননা মহান আল্লাহ বলেন ‘তোমাদের জন্য যা সহজসাধ্য তাই পাঠ কর’ (সূরা আল-মুযযাম্মিল : ২০)। অতঃপর তিনি বলেন, ‘যদি ইমাম তারাবীহর ছালাতে এই উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করে যে, তার পিছনে অংশগ্রহণকারী মুছল্লীবৃন্দ মহান আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কিতাব শ্রবণ করবে তবে তা অতি উত্তম হবে’ (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দার্ব, ১৬১/১৬)। উল্লেখ্য, তারাবীহর ছালাত জামা‘আত সহকারে আদায় করা উত্তম (তিরমিযী, হা/৮০৬;, আবূ দাঊদ, হা/১৩৭৫, সনদ ছহীহ; ইসলাম সুওয়াল ও জাওয়াব, প্রশ্ন নং-৪৮৯৫৭ )।
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ, বগুড়া।