উত্তর : বন্ধক বলতে বুঝায় ঐ জিনিসকে যা নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণের দলীল হিসাবে নিরাপত্তা স্বরূপ (security) ঋণদাতার নিকট রাখা হয়ে থাকে। কারণ পরবর্তীতে ঋণগ্রহীতা যদি নির্ধারিত দিনে ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম না হয় তাহলে উক্ত বন্ধকী জিনিস থেকে বা তার বিক্রয়মূল্য থেকে প্রদত্ত ঋণ আদায় করা যেতে পারে (আল-মাউসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ২/৪৩১-৪৩২ পৃ.)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, বন্ধকদাতার উপর যে ঋণ রয়েছে তার জামানত ও নিরাপত্তার দলীল স্বরূপ ইসলাম বন্ধকী পদ্ধতিকে অনুমোদন দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ عَلٰی سَفَرٍ وَّ لَمۡ تَجِدُوۡا کَاتِبًا فَرِہٰنٌ مَّقۡبُوۡضَۃٌ ‘আর যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোন লেখক না পাও, তাহলে হস্তান্তরকৃত বন্ধক রাখা বিধেয়’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৮৩)। অর্থাৎ যদি ঋণ প্রদানের সময় সাক্ষী ও লেখক না পাওয়া যায়, তবে সিকিউরিটি স্বরূপ কোন জিনিস বন্ধক রাখা জায়েয। বন্ধক বলতে ঋণদাতার নিকট জমাকৃত বা অর্পিত মালকে বুঝায়। অতঃপর যদি ঋণগ্রহীতা নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ না করে, তাহলে উভয়ের সম্মতিক্রমে অথবা বিচারকের নির্দেশে উক্ত বন্ধককৃত মাল বিক্রয় করে ঋণ পরিশোধ করা হবে (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ র্দাব ইবনু বায, ১৯/২০০-২০১ পৃ.)।
ঋণের নিরাপত্তা স্বরূপ জমি-জায়গা, গৃহ, বৃক্ষ, দোকান, গাড়ী, পোশাক, অলংকার অথবা এছাড়া অন্য কিছু বন্ধক রাখা দোষনীয় নয়। কিন্তু যদি বন্ধকগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত উক্ত জমি চাষ করে লাভবান হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, তবে তা সূদ হিসাবে বিবেচিত হবে, আর এটি নাজায়েয। কেননা এর অর্থ এটিই যে, সে ঋণ প্রদানের বিনিময় স্বরূপ তার থেকে লাভবান হচ্ছে। সুতরাং এটি জায়েয নয়। এ রকম হারাম বাহানা বা কৌশল থেকে সতর্ক থাকা অপরিহার্য। রাসূল (ﷺ)-এর ছাহাবীগণ ঋণ প্রদানের বিনিময় স্বরূপ ঋণগ্রহীতার নিকট থেকে কোন কিছু গ্রহণ করা সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। কেননা এটি সূদের অন্তর্ভুক্ত। জমি বা বৃক্ষ থেকে উৎপন্ন ফসলে বন্ধকগ্রহীতার কোন অংশ নেই। বরং উক্ত ফসল বা ফল জমির মূল মালিকের হবে, অথবা ঋণদাতা ইজারা বা লীজ (Lease) হিসাবে চাষ করতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই এলাকার বাজারদর হিসাবে লীজের মূল্য মূল মালিককে প্রদান করতে হবে অথবা সেই পরিমাণ ঋণ বিয়োগ করতে হবে (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ইবনু বায, ১৯/২০০-২০৪ পৃ.; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৯/৩১০-৩১১ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৮৩৩২১)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ঋণদাতার জন্য ঋণগ্রহীতার নিকট ঋণ প্রদানের বিনিময়ে লাভবান হওয়ার শর্তারোপ করা জায়েয নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, كُلُّ قَرْضٍ جَرَّ نَفْعًا فَهُوَ رِبًا ‘এমন প্রত্যেকটি ঋণ যা লাভ আনয়ন করে সেটিই সূদ’। আলেমগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। সুতরাং ঋণ প্রদানের বিনিময়ে জমি থেকে উৎপন্ন ফসল দ্বারা লাভবান হওয়া জায়েয নয়। কেননা বন্ধকের উদ্দেশ্যে হল মালের নিরাপত্তা ও ঋণ আদায়ে সহায়তা করা, লাভবান করা নয়’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৪/১৭৭-১৭৮ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : মানিক, ময়মনসিংহ।