উত্তর : কবরের উপর বাড়ী নির্মাণ করা বড় অন্যায়ের কাজ। সালাফগণ বলেন, সমগ্র উম্মতের সর্বসম্মতিক্রমে কবরের উপর ঘর-বাড়ি নির্মাণ, পাকা করা, তার উপর লেখা, ছালাত আদায় করা, প্রদীপ জ্বালানো হারাম’ (ইক্বতিযাউছ ছিরাত্বিল মুস্তাক্বীম, ২/২৬৭; মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৪/৩১৮, ২৭/৪৪৮ ও ৩১/১১; তাফসীরে কুরতুবী, ১০/৩৮১; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৩/২২১; মাজম্ঊূ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ১৭/২১২; তালখীছু আহকামিল জানায়িয, পৃ. ৮৪)। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, نَهَى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ ‘রাসূল (ﷺ) কবর পাকা করতে, কবরের উপর বসতে ও কবরের উপর গৃহ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের কারো জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর বসে থাকা এবং তাতে তার কাপড় পুড়ে গিয়ে শরীরের চামড়া দগ্ধীভূত হওয়া কবরের উপর বসার চেয়ে উত্তম’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭১)। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, لَا تَجْلِسُوْا عَلَى الْقُبُوْرِ وَلَا تُصَلُّوْا إِلَيْهَا ‘তোমরা কখনো কবরের উপর বসবে না এবং কবরের দিকে মুখ করে ছালাতও আদায় করবে না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭২)।
দ্বিতীয়তঃ এমতাবস্থায় উক্ত কাজের জন্য কঠোরভাবে তওবাহ করার পর দু’টি করণীয় রয়েছে। ১- ক্ববরের উপর নির্মিত বাড়িকে ভেঙ্গে ফেলা। কেননা রাসূল (ﷺ) ক্ববরের উপর নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। ২- পুরাতন ঐ ক্ববরকে খনন করে অবশিষ্ট অংশগুলো সসম্মানে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা। যেমন বিভিন্ন ফক্বীহ ও শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘নিঃসন্দেহে কবর খনন করা নিষিদ্ধ, তবে বিশেষ প্রয়োজনে পুরাতন কবরকে এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা জায়েয’ (কুয়েতী ফিক্বহ বিশ্বকোষ, ৩২/২৫২ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩০৬৩৫৫)। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘আমার পিতার সাথে (একই কবরে) অন্য এক লোককে দাফন করা হয়েছিল। তাই আমি তার মরদেহকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার ইচ্ছা করলাম। অতঃপর ছয় মাস পর আমি পিতার মৃতদেহকে তুললাম (এবং অন্যত্র দাফন করলাম)। (যেহেতু তিনি উহুদের দিন শহীদ হয়েছিলেন তাই) তাঁর শরীরের কোন অংশই পরিবর্তন হয়নি। কেবল দাড়ির কিছু চুল মাটির সংস্পর্শে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছিল’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৫১, ১৩৫২)। উক্ত হাদীছের ভিত্তিতে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) অনুচ্ছেদ রচনা করেন, ‘কোন কারণে মৃতদেহকে ক্ববর বা লাহ্দ হতে বাহির করা যাবে কি?’ (অধ্যায় নং-২৩, অনুচ্ছেদ নং-৭৭)। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীছ প্রমাণ করে যে, বিশেষ প্রয়োজনে মরদেহ বাহির করা জায়েয (ফাৎহুল বারী, ৩/২১৫ পৃ.)। মুআ‘বিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কূপ খননের উদ্দেশ্যে ক্ববর স্থানান্তরিত করেছিলেন (কিতাবুল জিহাদ, পৃ. ৯৮; মাওয়াহিবুল জালীল, ৬/২০ পৃ.)।
উল্লেখ্য, শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘কবর স্থানান্তরিত করার সময় অবশ্যই সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অত্যন্ত যত্ন সহকারে অবশিষ্ট অংশগুলো বহন করতে হবে। যাতে মৃতদেহের কোন প্রকারের অসম্মান না হয় (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩০৬৩৫৫)। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, كَسْرُ عَظْمِ الْمَيِّتِ كَكَسْرِهِ حَيًّا ‘মৃত ব্যক্তির হাঁড়ভাঙ্গা যেন তার জীবিত কালের হাঁড় ভাঙ্গার মতই’ (আবূ দাঊদ, হা/৩২০৭; ইরওয়াউল গালীল, ৩/২১৩ পৃ.)। ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘জীবিত ব্যক্তির হাঁড় ভাঙ্গলে যেরূপ গোনাহ হয়, মৃত ব্যক্তির হাঁড় ভাঙ্গলেও তদ্রুপ গোনাহ হয়’ (আত-তামহীদ, ১৩/১৪৪ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ গোলাম রব্বানী, সাঘাটা, গাইবান্ধা।