উত্তর : উক্ত দাবীর পক্ষে কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই। কারণ ইমামগণ সর্বদা কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অনুসরণ করতেন এবং জনসাধারণকে দলীল ভিত্তিক আমল করার জন্য উৎসাহিত করতেন। আর ছহীহ দলীল থেকে যেটা পাওয়া যায় তা হল, ১১ রাক‘আত। যেমন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযান মাসে এবং রামাযানের বাইরে ১১ রাক‘আতের বেশি ছালাত আদায় করতেন না’ (ছহীহ বুখারী, হা/১১৪৭, ২০১৩, ৩৫৬৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৩৮)। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও ১১ রাক‘আত তারাবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাও ছহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৩৭৯, ১/১১৫ পৃ.; মিশকাত হা/১৩০২, পৃ. ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, ৩/১৫২ পৃঃ, হা/১২২৮)।
অন্যদিকে ২য় খলীফা ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ২০ রাক‘আত তারাবীহ চালু করেছিলেন মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তা যঈফ বা জাল হিসাবে প্রমাণিত। অর্থাৎ এ দাবীর ছহীহ কোন ভিত্তি নেই (বায়হাক্বী, হা/৪৬১৭, মুনকার; আল-বাইছুল হাছীছ, পৃ. ৪৮)। এ প্রসঙ্গে শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দীর্ঘ আলোচনার পর বলেছেন, لم يثبت أن عمر صلاها عشرين ‘ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষ থেকে ২০ রাক‘আত সাব্যস্ত হয়নি’ (ছালাতুত তারাবীহ, পৃ. ৫৭)।
ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-কে তারাবীহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি ২০ রাক‘আতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন (আল-আরফুশ শাযী, শরহে তিরমিযী, পৃ. ১০১ ও ১৬৬)। কিন্তু উক্ত বক্তব্য ইমাম আবু হানীফা থেকে প্রমাণিত নয়। আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী বলেন, ‘উক্ত কথা আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে পৌঁছায়নি’ (ঐ, পৃ. ১৬৬ দ্র.)। ইমাম মালেকের পক্ষে ২০ নয়; ৩৬ রাক‘আতের কথা বলা হয়। কিন্তু এটাও সঠিক নয়। কারণ তিনি বিতর সহ ১১ রাক‘আতের হাদীছ বর্ণনার একজন রাবী। ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের (রাহিমাহুল্লাহ) ব্যাপারে ২০ রাক‘আতের পক্ষে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না। ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) ২০ রাক‘আতের হাদীছকে روي শব্দ উল্লেখ করে দুর্বল বলার চেষ্টা করেছেন। আর ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) নির্দিষ্ট কোন রাক‘আতের পক্ষে কথা বলেননি (বিস্তারিত দেখুন : ‘তারাবীহর রাক‘আত সংখ্যা : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক বই)। মূলত এগুলো সব অন্ধভক্তদের সৃষ্টি কল্পিত কাহিনী ও ইমামদের নামে মিথ্যাচার।
প্রশ্নকারী : মুজাহিদ, গাবতলী, বগুড়া।