উত্তর : এটা প্রতারণা এবং কাবীরা গোনাহের শামিল। নবী করীম (ﷺ) বলেন, ‘কোন লোক যদি নিজ পিতা সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও অন্য কাউকে তার পিতা বলে দাবী করে, তবে সে আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করল এবং যে ব্যক্তি নিজেকে এমন বংশের সঙ্গে বংশ সম্পর্কিত দাবী করল যে বংশের সঙ্গে তার কোন বংশ সম্পর্ক নেই, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৫০৮, ৩৫০৯, ৬০৩৫)। অন্যত্র বলেন, مَنْ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيْهِ وَهُوَ يَعْلَمُ فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ ‘যে ব্যক্তি জেনে-শুনে অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবী করে, তার জন্য জান্নাত হারাম’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪৩২৬, ৬৭৬৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৩)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতার বংশ পরিচয় বাদ দিয়ে অন্য বংশের হওয়ার দাবি করে অথবা নিজের প্রকৃত অভিভাবক ও পরিবারকে বাদ দিয়ে অন্যের পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করে, তার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবিরাম অভিশাপ বর্ষিত হতে থাকবে’ (আবূ দাঊদ, হা/৫১১৫, সনদ ছহীহ; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২০/৩৭১-৩৭৩ পৃ.)।
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘হাদীছগুলোতে অন্যকে পিতা বলে সম্বোধন করার নিষেধাজ্ঞা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, জেনে-শুনে নিজের পিতার বংশ পরিচয় গোপন রেখে অন্যের বংশ পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করা’ (ফাৎহুল বারী, ৬/৫৪১ পৃ.; ঊমদাতুত ক্বারী, ১৬/৮০, ২৩/২৬২ পৃ.)।
দ্বিতীয়তঃ নিছক সম্মানার্থে কাউকে বাবা-মা বলে সম্বোধন করা জায়েয। কেননা এটি সৌহার্দ ও উত্তম শিষ্টাচারের নিদর্শন। যেমন রাসূল (ﷺ)-এর স্ত্রীগণের সম্মানার্থে তাঁদেরকে মুমিনদের মা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নবী, মুমিনদের নিকট তাদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয় এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা-স্বরূপ’ (সূরা আল-আহযাব : ৬; সূরা ইউসুফ : ৯৯-১০০)। অনুরূপভাবে নিজ জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলার কথাও এসেছে (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৩৩; সূরা আল-হজ্জ : ৭৮)। নবী করীম (ﷺ)-এর স্ত্রীগণ জননী না হয়েও মুমিনদের মাতা। অনুরূপভাবে তিনিও মুমিনদের জনক না হয়েও পিতা। অন্যদিকে প্রকৃত সন্তান না সত্ত্বেও স্বয়ং নবী (ﷺ) আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ‘হে আমার সন্তান!’ বলে সম্বোধন করতেন (ছহীহ মুসলিম, হা/২১৫১)। সুতরাং যদি কাউকে বাবা-মা ডাকার দ্বারা বংশপরিচয় গোপন করা বা সম্পর্ক ছিন্ন করা না হয়, সেক্ষেত্রে কাউকে বাবা-মা বলে সম্বোধন করাতে কোন সমস্যা নেই।
প্রশ্নকারী : সাইফুর রহমান, সিলেট।