মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ অপরাহ্ন
উত্তর : হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তনকারী হাজীদের আন্তরিকভাবে অভ্যর্থনা জানানো এবং আত্মীয়-স্বজনদের খাওয়ান জায়েয। অভ্যাস, আচার-আচরণ ও রীতিনীতির মূল হল হালাল, যতক্ষণ না তা শারঈ দলীল দ্বারা নিষিদ্ধ প্রমাণিত হবে। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তনকারী হাজীর জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করা এবং সেই উপলক্ষে খাবার তৈরি করে মানুষকে খাওয়ানো জায়েয। আমরা কিভাবে বলতে পারি যে, মানুষের জন্য খাবার তৈরি করা জায়েয নয়?! অথচ ছহীহ সুন্নাহ হতে প্রমাণিত যে, ছাহাবীগণ হজ্জ, উমরাহ অথবা ব্যবসায়িক সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারী মুসাফিরকে অভ্যর্থনা জানাতেন। যেমন ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন ‘হজ্জ থেকে আগমনকারী হাজীদেরকে স্বাগত জানানো’ নামে (অধ্যায় নং-২৬, অনুচ্ছেদ নং-১৩)। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) মক্কায় এলে আব্দুল মুত্তালিব গোত্রীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে স্বাগত জানায়। তিনি একজনকে তাঁর সাওয়ারীর সামনে ও অন্যজনকে পেছনে তুলে নেন (ছহীহ বুখারী, হা/১৭৯৮, ৫৯৬৮, ৫৯৬৬)। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী, শায়খ ইবনুল মুনীর ও শিহাবুদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-ক্বাসত্বালানী (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, ‘এ হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তনকারী হাজীদের অভ্যর্থনা জানানো জায়েয (ফাৎহুল বারী, ৩/৬১৯; ইরশাদুস সারী, ৩/২৭৮ পৃ.)।

আব্দুল্লাহ ইবনু জা‘ফার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী করীম (ﷺ) যখন সফর হতে প্রত্যাবর্তন করতেন তখন আমাদের দ্বারা তাকে স্বাগতম জানানো হত। একদা আমাকে এবং হাসান অথবা হুসাইনের দ্বারা স্বাগতম জানানো হল। আমাদের একজনকে তাঁর সম্মুখে বসালেন, আর অন্যজনকে তাঁর পশ্চাতে। এভাবে আমরা মদীনায় প্রবেশ করলাম (ছহীহ মুসলিম, হা/২৪২৮)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘নাক্বী‘আহ (نَقِيعَة) অর্থাৎ সফর থেকে আগত ব্যক্তির পক্ষ থেকে খাবার তৈরি করে খাওয়ানো মুস্তাহাব। যেমন রাসূল (ﷺ) যখন মদীনায় ফিরতেন, তখন তিনি একটি উট অথবা একটি গরু যব্হ করতেন (আল-মাজমূঊ, ৪/৪০০ পৃ.)। অনুরূপভাবে শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘হাজীদের উদ্দেশ্যে ওয়ালীমাহ অর্থাৎ দাওয়াত খাওয়ানো এবং হাজীদের প্রত্যাবর্তনকালে তাঁদেরকে আন্তরিকভাবে অভ্যর্থনা বা সন্মান জানানো দোষনীয় নয়। কিন্তু অপচয় থেকে কঠোরভাবে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। কেননা অপচয় করা সর্বসম্মতিক্রমে নিষিদ্ধ। সেটি এ উপলক্ষে হতে পারে অথবা অন্য কোন উপলক্ষে। আল্লাহ তা‘আলা অপচয়কারীদেরকে পসন্দ করেন না (সূরা আল-আ‘রাফ : ৩১)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ২৭; লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, ১২/১৫৪ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৯৭৮৭৯)।

সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের পর মানুষকে খাওয়ানো এটি আরবদের প্রাচীনকালের অভ্যাস। যাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘নাক্বী‘আহ’ বলা হয়। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর গ্রন্থ আল-মাজমূঊ-এর মধ্যে বলেন, ‘নাক্বী‘আহ (نَقِيعَة) অর্থাৎ সফর থেকে আগত ব্যক্তির পক্ষ থেকে খাবার তৈরি করে আত্মীয়-স্বজন ও অতিথিদেরকে খাওয়ানো মুস্তাহাব। তবে কঠোরভাবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন এটি তার উপর বোঝা না হয়ে যায়। সেই সঙ্গে অপচয় থেকে বাঁচা অপরিহার্য’ (ঊমদাতুল ক্বারী, ১৫/১৬; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৪৭০১৭)। জাবীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ لَمَّا قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ نَحَرَ جَزُوْرًا أَوْ بَقَرَةً ‘আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যখন মদীনায় ফিরতেন, তখন তিনি একটি উট অথবা একটি গরু যব্হ করতেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩০৮৯)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইবনু বাত্ত্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের পর মানুষকে খাওয়ানো মুস্তাহাব এবং এটি সালাফদের আমলের অন্তর্ভুক্ত’ (ফাৎহুল বারী, ৬/১৯৪ পৃ.)। অনুরূপভাবে হাজীদের নিকট দু‘আর আবেদন করা জায়েয। সালাফে ছালিহীন হাজীদের দু‘আকে খুবই গুরুত্ব দিতেন (আল-ইক্বনা‘আ, ১/৩৯৭; মাত্বালীবু আওলান নূহা, ২/৪৪৪ পৃ.)।

প্রশ্নকারী : রিযওয়ান, রাজশাহী।





প্রশ্ন (৩২) : হতাশা থেকে মুক্তির উপায় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৩) : জনৈক যুবক ভাই ফাসেকী জীবন ছেড়ে দ্বীনের পথ অবলম্বন করেছেন। প্রশ্ন হল- দ্বীনের পথে অবিচল থাকার জন্য ঐ যুবকের প্রতি কী উপদেশ দেয়া যেতে পারে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৪) : জনৈক ব্যক্তির পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়রা পীরতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এমনকি কালেমার ভিতরে পীরের নামযুক্ত করে যিকির করে। তারা মাজারপূজা করে। প্রশ্ন হল- তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং -এর কাজ করার বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : কোন দেশের রাষ্টপ্রধানের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ইসলামে কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৫) : অনিচ্ছাকৃত সূদের অংশ পেলে তা কী করব? নিকট গরিব আত্মীয়দের মাঝে ছাওয়াবের আশা ব্যতীত সূদের টাকা দেয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১০) : আমি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। আমাকে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মানুষ ও প্রাণীর ছবি সম্বলিত ডিজাইন করতে হয়। ইসলামী শরী‘আতে এটা কি বৈধ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩১) : মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরি, না-কি নূরের তৈরি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : অনেক দ্বীনি ভাই টাখনুর নিচের অতিরিক্ত অংশটা গুটিয়ে রাখে। তাদেরকে কেটে ফেলার কথা বললে, তারা বিভিন্ন শায়েখের বক্তব্য শুনায় এবং বলে পায়ের ক্ষেত্রে গুটিয়ে রাখলে সমস্যা নেই। এই দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : ইসলামে হালাল ও হারাম কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : কারো খাবার হালাল না-কি হারাম এটা যদি জানা না যায়, তাহলে তার খাবার গ্রহণ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : ছালাত আদায় করার সময় কারো জামায় যদি প্রাণীর ছবি থাকে তাহলে কি তার ছালাত আদায় হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ