উত্তর : ঐতিহাসিকদের মতে ভারতের নদীয়া যেলায় এর জন্ম। পরবর্তীতে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া গ্রাম হয় বাউল মতবাদের কেন্দ্রস্থল। ‘বাউল’ শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ আছে। ডঃ পঞ্চানন সাহা বলেন, হিন্দী শব্দ ‘বাউরা’ বা উন্মাদ থেকে বাউল কথাটি এসেছে বলে অনেকে মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন যে, সংস্কৃত ‘বাতুন’ থেকে বাউল শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। অন্যদিকে ছূফীরা সাধু ফকীরকে বলে আউলিয়া। এই আউলিয়া শব্দটি থেকে উদ্ধৃত ‘আউল’ শব্দটি ‘বাউল’ শব্দটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই বাউলরা জাত-গাত-হিন্দু মুসলমানে বিচার করে না (হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক নতুন ভাবনা, পৃ. ৭৭)। ঈশ্বরপুরী, চৈতন্যদেব (১৪৮৪-১৫২৩ খৃ.), অদ্বৈতাচার্য হরি গুরু প্রমুখের মাধ্যমে এর সূচনা। বাউল ফকীর লালন শাহ (১৭৭৪-১৮৯০ খৃ.)-এর মাধ্যমে আনুমানিক ১৮১৫-১৮৮৬ সালে এই দর্শনের বিস্তৃতি ঘটে। তাদের আক্বীদা হল-
(ক) বাউলরা তাদের গুরুকে ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা করে। তারা গুরুর মধ্যে বিধাতার প্রতিমূর্তি দেখতে পায় (ভারতীয় সাংস্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব, পৃ. ১১১; বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৮৮)।
(খ) অধ্যাপক আবু জাফর বলেন, লালন তার কিছু গানে সাম্যের কথা বললেও তার গানের একটি বিরাট অংশ খুবই গর্হিত ও বিকৃত যৌনাচারের রূপক স্বরূপ। তার মতে, লালন আসলে গানের নামে ছূফীতত্ত্ব ও মরমিয়া আধ্যাত্মিকতার নামে পর্ণোগ্রাফির দক্ষ কুশলী উপস্থাপক ছিলেন। গুপ্ততত্ত্বের ছদ্মাবরণে লালন দেহতত্ত্বের নামে এক কদর্য যৌনাচারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বাউলদের এক অংশ এখন লাউয়ের খোল নিয়ে গেরুয়া পরিধান করে সাধনসঙ্গিনী নিয়ে ভিক্ষা করে বেড়ায়। অধ্যাপক আবু জাফরের মতে ‘লালন একটি চিরস্থায়ী ফিতনা’ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ৪৪ বর্ষ, ১ম সংখ্যা, পৃ. ২৩৩)।
(গ) বাউলদের গানে যে লতা ও ত্রিবেনী শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়, তার এক বিশেষ তাৎপর্য আছে। অভিধান খুললে এর তাৎপর্য জানা যায় না। বাউল বা তান্ত্রিক সাহিত্যে লতার পারিভাষিক অর্থ হল নারীর যৌনাঙ্গ (লোকায়ত দর্শন, পৃ. ৩৯০)। বাউল দরবেশদের মধ্যে ‘লতাসিদ্ধি’ বলে একটি কাণ্ড আছে। তাদেরকে ছালাতের কথা বললে তারা উত্তর দেয়, ইবলীস সব জায়গায় সিজদা করেছে আমরা সিজদা করব কোথায়? তাহলে কোথায় সিজদা করতে হবে- এই কথাটা আর সহজে বলবে না। তবে শিষ্য হয়ে একান্ত ভক্ত হতে পারলে তখন বলবে, ইবলীস ঐ একটা জায়গা বাদ রেখেছে ওখানেই সিজদা করতে হবে। ওটা হল ঐ ‘লতা’। বাউল ছূফীরা এভাবেই লতাসিদ্ধি পালন করে থাকে (উল্টা বুঝিল রাম ও সাধু সাবধান, পৃ. ৬৭)।
অতএব এই দর্শনের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে মুসলিম বলে গণ্য হওয়ার কোন সুযোগ নেই। মুসলিমের জন্য ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বিতীয় মতবাদের অনুসরণ করা হারাম (সূরা আলে ইমরান : ১৯ ও ৮৫)।
প্রশ্নকারী : সাদিয়া তাবাসসুম, মোহাম্মাদপুর, ঢাকা।