প্রশ্ন (১): ইসলামী রাষ্ট্রে বা ইসলামী (এনজিও) সংস্থার অধীনে যে সমস্ত ওয়াক্বফের সম্পত্তি একত্রিত হয়, পরবর্তীতে ওই সম্পত্তি থেকে বিনিয়োগ করা হলে তাতে কি যাকাত ওয়াজিব হবে?
উত্তর : ওয়াক্বফের সম্পত্তিতে কোন যাকাত নেই। যেহেতু এ সম্পত্তি কারো ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নয়। চাই সে সম্পত্তি বিনিয়োগে লাগানো হোক কিংবা না লাগানো হোক। যদি ওয়াক্বফকৃত সম্পত্তি বিনিয়োগে লাগানো হয়, সে ক্ষেত্রে এর আয় ওয়াক্বফ্কারী যে খাতগুলো নির্ধারণ করে গেছেন সে খাতগুলোতে বণ্টন করা হবে। যেমন গরীব, মিসকীন, বয়োবৃদ্ধ মানুষ, মাদরাসার দুঃস্থ তালিবুল ইলম প্রমুখ। কিন্তু যে ব্যক্তি ওয়াক্বফ খাত থেকে কোন সম্পদ পেল সেটা যদি নিছাব পরিমাণ হয় কিংবা অন্য সম্পদের সাথে মিলে নিছাব পরিমাণ হয় এবং এর এক বছর পূর্ণ হয় তাহলে তাকে এ সম্পদের যাকাত দিতে হবে। যেহেতু এটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পদ এবং যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী এতে পূর্ণ হয়েছে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১১৮৩০৯)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, ‘কোন একটি সম্প্রদায় একটি ফান্ড (তহবিল) গঠন করেছে। এ ফান্ডকে তারা গোত্রের উপর যে সব দিয়াত বা রক্তমূল্য ধার্য করা হয়, সেগুলো পরিশোধের জন্য নির্ধারিত করে রেখেছে। এই ফান্ডের গচ্ছিত অর্থ দিয়ে তারা ব্যবসাতে বিনিয়োগ করেছে। এত্থেকে যা লাভ হয় সেটাও রক্তমূল্য পরিশোধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। উক্ত অর্থ ও লভ্যাংশের উপর কি যাকাত ফরয হবে? আর যদি ব্যবসা না করা হয় তাহলেও কি যাকাত লাগবে? গোত্রের লোকেরা কি এ ফান্ডে তাদের স্বর্ণ-রৌপ্যের যাকাত দিতে পারবেন? উত্তরে তাঁরা বলেন, প্রথমতঃ প্রশ্নে উল্লেখিত কথাগুলো যদি বাস্তব হয়, তাহলে উল্লেখিত সম্পদের উপর যাকাত আসবে না। যেহেতু এ অর্থ ওয়াক্বফকৃত সম্পত্তির মত, চাই সেটা অলস অর্থ হোক কিংবা ব্যবসাতে বিনিয়োগকৃত অর্থ হোক। দ্বিতীয়তঃ এ তহবিলে যাকাতের অর্থ দেয়া জায়েয হবে না। কেননা এ তহবিল গরীবদের জন্য নির্ধারিত নয়। কিংবা যাকাত বণ্টনের অন্যান্য কোন খাতের জন্যেও নির্ধারিত নয় (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৯/২৯১ পৃ.)।
শায়খ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে সমস্ত এনজিও বা সংস্থার সদস্যরা মাসিক চাঁদা দেয় এবং উক্ত চাঁদার অর্থ বিপদগ্রস্ত লোকেদের, রক্তমূল্য পরিশোধের জন্য এবং বিয়ে করার জন্য কারো ঋণের প্রয়োজন হলে তাকে ঋণ দেয়ার জন্য একত্রিত করা হয়, ‘এ তহবিলের অর্থের উপর যাকাত নেই। কেননা এটি সদস্যদের মালিকানাধীন নয়। বরং এ অর্থের নির্দিষ্ট কোন মালিক নেই। আর যে অর্থের নির্দিষ্ট কোন মালিক নেই সে অর্থের উপর যাকাত নেই’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ১৮/১৮৪ পৃ.)। মোদ্দাকথা হল রাষ্ট্রীয় সম্পদ, বাইতুল মাল (অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের মাল) এবং ওয়াক্বফকৃত সম্পদের উপর যাকাত নেই। যেহেতু এসব সম্পদের নির্দিষ্ট কোন মালিক নেই, চাই এসব সম্পদ বিনিয়োগে খাটানো হোক কিংবা না হোক।
প্রশ্নকারী : আযীযুর রহমান, খুলনা।