উত্তর : শরী‘আতের মূলনীতি হল- لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ ‘কোন মুসলিমের সম্পদ তার সন্তুষ্টি ছাড়া হালাল নয়’ (ছহীহুল জামে, হা/৭৬৬২, সনদ ছহীহ)। এ মূলনীতির আলোকে পাইরেটেড বা ক্র্যাক করা সফটওয়্যার ব্যবহারের বিধান বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো প্রাসঙ্গিক হয়:
১. চুক্তি ও অধিকারের লঙ্ঘন: বাণিজ্যিক সফটওয়্যারগুলোর ক্ষেত্রে নির্মাতা কোম্পানি সাধারণত ব্যবহারকারীদের একটি নির্দিষ্ট লাইসেন্স বা চুক্তির আওতায় সফটওয়্যার ব্যবহারের অনুমতি দেয়। পাইরেটেড বা ক্র্যাক সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে ঐ চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়, যা প্রতারণা ও অন্যের অধিকার হরণ করার শামিল। ইসলাম অন্যের অধিকার লঙ্ঘনকে হারাম করেছে।
২. হাক্কুল ইবাদ বা মানুষের অধিকারের বিষয়: পাইরেটেড সফটওয়্যার সাধারণত সফটওয়্যার কোম্পানির মালিকানা হয় এবং এটি তাদের মেহনত ও বিনিয়োগের ফল। ইসলামে মানুষের মালিকানাধীন সম্পদ অন্যের জন্য হালাল নয়, যদি না মালিক স্বেচ্ছায় তা দান বা হেবা করে দেয়। যেহেতু সফটওয়্যার নির্মাতারা তাদের পণ্যের বিনিময়ে মূল্য নির্ধারণ করেছেন, তাই বিনা অনুমতিতে তা ব্যবহার করা তাদের হক লঙ্ঘনের শামিল।
৩. হারাম উপায়ে সম্পদ উপার্জন: যারা পাইরেটেড সফটওয়্যার বিক্রি করে, তারা মূলত অন্যের মালের উপর অন্যায়ভাবে হাত দিচ্ছে এবং তা দিয়ে ব্যবসা করছে। ইসলামে হারাম পদ্ধতিতে উপার্জিত সম্পদ গ্রহণ ও উপার্জন করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, كلُّ جَسَدٍ نبتَ مِنْ سُحْتٍ فالنارُ أولَى بِهِ ‘যে গোশত হারাম উপার্জন থেকে গঠিত হয়েছে, তার জন্য জান্নাত উপযুক্ত নয়’ (ছহীহুল জামে‘, হা/৪৫১৯, সনদ ছহীহ)।
৪. আইনি এবং সামাজিক পরিণতি: কিছু দেশে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারে আইনগত শাস্তি রয়েছে, যা একজন মুসলিমের জন্য দুর্নাম ও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি এটি সফটওয়্যার নির্মাতাদের ক্ষতির কারণ হয়, যা নৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিন্দনীয়। তবে যদি সফটওয়্যার নির্মাতা অনুমতি দেয় অর্থাৎ কিছু সফটওয়্যার নির্মাতা ব্যক্তিগত বা শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে বিনামূল্যে সফটওয়্যার ব্যবহারের অনুমতি দেয়। যদি তারা স্পষ্টভাবে অনুমতি দিয়ে থাকে, তবে তা ব্যবহার করা বৈধ হবে।
প্রশ্নকারী: তাহসিন আল-মাহী, রাজশাহী।