উত্তর : নিঃসন্দেহে এটি সূদী কারবারের অন্তর্ভুক্ত। প্রথমতঃ এটি ব্যবসা নয়। কেননা চাকুরী কখনো ব্যবসা হতে পারে না। বরং এটি নির্ধারিত লভ্যাংশের উপর ঋণ দেয়া-নেয়া। অথচ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
فمتى كان مقصود المتعامل: دراهم بدراهم إلى أجل ... فإنه رب
‘যখন ব্যাপারী বা বিনিয়োগকারীর নিয়ত হয়, ‘একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকার বিনিময়ে টাকা উপার্জন করা..., তাহলে তা সূদ’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৯/৪৩২-৪৩৩ পৃ.)। দ্বিতীয়তঃ এটি জুয়া ও প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত। কেননা এক্ষেত্রে চাকুরী পেলে বিনিয়োগকারী লাভবান হবে আর না পেলে বা প্রতারণার শিকার হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আর এটাই তো জুয়া ও প্রতারণা। অথচ জুয়াকে শরী‘আতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে (ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ, ১৫/১৯১ পৃ., ফৎওয়া নং-৫৮৪৭; সূরা আল-মায়িদাহ: ৯০)। মূলত মুশারাকাহ হল অংশহারে ব্যবসা। যাতে লাভও অংশহারে বণ্টন হবে (ইরওয়াউল গালীল, হা/১৪৬৮)। অর্থাৎ কয়েকজনের টাকা জমা করে ব্যবসা করা এবং লভ্যাংশ জমাকৃত অর্থ অনুপাতে বণ্টন করা (দারাকুৎনী, হা/৩০৭৭)। যৌথ ব্যবসার মুশারাকাহ বা শরিকানা ব্যবসা পদ্ধতি ইসলামে বৈধ। যাতে উভয়ে সম্পদে ও শ্রমে আনুপাতিক অংশীদার হবে (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ১৪/২৯৯-৩০০ পৃ.)।
মুশারাকার বৈধতার জন্য কিছু শর্ত আছে। যথা (১) অর্থ বিনিয়োগকারীকে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে পূর্ব নির্ধারিত টাকা লভ্যাংশের নামে দেয়া যাবে না, প্রতি মাসে আপনাকে ৫০০ বা ১০০০ দেবো, এরকম টাকা নির্ধারণ করা যাবে না, বরং উভয়ের সম্মতিতে লভ্যাংশের একটি পার্সেন্টেজ নির্ধারণ করতে হবে, অর্ধাংশ, তৃতীয়াংশ, অথবা চতুর্থাংশ এবং যখন যেমন মুনাফা হবে, সেই হারে-ই তারা ভাগাভাগি করবে। (২) নগদ বিনিয়োগ করতে হবে। (৩) বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখ থাকতে হবে। যাতে হিসাব রাখা সহজ হয়। (৪) ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতানুযায়ী নিঃশর্ত বিনিয়োগ হতে হবে। বিনিয়োগকারী শ্রমিকের উপর কোনরূপ শর্তারোপ করতে পারবে না। যেমন কোন জায়গায়, কোন জিনিসের, কোন সময়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতানুযায়ী শর্ত ও নিঃশর্ত দু’টিই জায়েয। (৫) কর্মী, শ্রমিক বা আমলকারী শুধু লভ্যাংশের অংশীদার হবে। আর ক্ষতি বা লোকসানের দায়ভার শুধু বিনিয়োগকারী বহন করবে। আদতে কিন্তু দু’জনেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এক্ষেত্রে কর্মীর কর্ম আর বিনিয়োগকারীর অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি আমলকারীকেও অর্থের ক্ষতি বহন করতে হয়, তাহলে এমন মুদারাবা বাতিল হিসাবে পরিগণিত হবে। (৬) কোন কারণে মুদারাবার চুক্তি ভঙ্গ করলে সমস্ত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারী পেয়ে যাবে, শ্রমিক শুধু তার শ্রমের পারিশ্রমিক পাবে (আল-ইসতিযকার, ২১/১২৪; আল-ইক্বনা‘ ফী মাসাঈলিল ইজমা‘, ২/২০০; আল-মুগনী, ৫/৪০; ফিক্বহুস সুন্নাহ, ৩/২০৫-২০৭; বাদায়িঊছ ছানাঈ, ৬/৮৫-৮৬; আল-মাজমূঊ শারহুল মুহাযযাব, ১৪/৩৬৬; আল-ইনছাফ, ৫/৪২৯; শারহু মুনতাহাল ইরাদাত, ২/২১৮; ফাতাওয়া আল-জামিউল কাবীর ইবনে বায অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২২৬২২)।
ইসলাম মুযারাবা লেনদেন বৈধ করেছে। ইসলাম সূদবিহীন অর্থ ব্যবস্থা প্রচলনে মুদারাবা তথা অংশীদারিত্ব ব্যবসা জায়েয করেছে। এতে একজনের মূলধন থাকবে এবং অন্যজন ব্যবসায়ে কাজ করবে। আর এভাবে অর্জিত লভ্যাংশ উভয়ের মধ্যকার চুক্তি অনুসারে পাবে। তবে ব্যবসায়ে ক্ষতি হলে মূলধন বিনিয়োগকারীর ওপর বর্তাবে। আর শ্রমদাতার ওপর ক্ষতির ভাগ বর্তাবে না, যেহেতু তার কষ্ট ও শ্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই সে অর্থের ক্ষতির অংশীদার হবে না। মোদ্দাকথা হল প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতি বাইয়ে মুশারাকাহ বা মুযারাবার অন্তর্ভুক্ত নয়।
প্রশ্নকারী : মোঃ তামিম হুসাইন, ভূরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম।