বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৩:১৯ অপরাহ্ন
উত্তর : শারঈ পন্থায় ভুলের সমালোচনা করা যাবে। মানুষ হিসাবে একমাত্র রাসূল (ﷺ)-ই নিষ্পাপ। মুসলিম শাসকেরাও মানুষ হিসাবে ভুল করতে পারেন। নিঃসন্দেহে তাদের অনেক ভুল রয়েছে। তারা কেউ নিষ্পাপ নন। কিন্তু আমরা তাদের ভুলকে নিন্দার ক্ষেত্র মনে করে তাদের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিব না, তারা প্রকাশ্য কুফরী না করা পর্যন্ত আমরা তাদের আনুগত্য করব। যেমনটা নবী (ﷺ) আদেশ করেছেন’ (আক্বীদাতুত্ব ত্বাহাবী, পৃ. ৩৭৯)। আব্দুল্লাহ‌ ইব‌নে মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘আমার পরে তোমরা অবশ্যই ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতা লক্ষ‍্য করবে এবং এমন কিছু বিষয় দেখতে পাবে, যা তোমরা অপসন্দ করবে। তখনও তোমরা তাদের হক্ব পূর্ণরূপে আদায় করবে, আর তোমাদের হক্ব আল্লাহ‌র কাছে চাইবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫২; তিরমিযী, হা/২১৯০)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যে লোক নিজ আমীরের কাছ থেকে অপসন্দনীয় কিছু দেখবে সে যেন তাতে ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে লোক সুলতানের আনুগত্য হতে এক বিঘতও বিচ্ছিন্ন হবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫৩, ৭০৫৪, ৭১৪৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৭)।

উল্লেখ্য, মুসলিম শাসকের ভুল বা অন্যায় কার্যকলাপের জন্য প্রতিবাদ করা যাবে এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি যেন সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকেন, কিন্তু তার আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিদ্রোহ করা যাবে না, করলে অমুসলিমের মৃত্যুবরণ করতে হবে। মুসলিমদের ঐক্য বজায় রাখা ও মুসলিম দেশের প্রতিরক্ষার লক্ষ্যে রাসূল (ﷺ) তাদের ব্যাপারে এমনটিই নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই আলেমগণ, উপদেষ্টাগণ ও সৎ লোকেরা শাসককে উপদেশ প্রদান করবেন (আল ফাত্হ, ৫/১৩ ও ৮/১৩ পৃ.)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সৎ কাজের আদেশ প্রদান এবং অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদানের মাধ্যম হল নম্রতা। এজন্য বলা হয়,  ‘তোমার সৎ কাজের আদেশ যেন সৎ পন্থায় হয় এবং অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদান যেন অসৎ পন্থায় না হয়। যেহেতু সৎকাজের আদেশ প্রদান করা এবং অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদান করা ওয়াজিব ও অন্যতম পসন্দনীয় কাজ।

সুতরাং এর উপকারিতা অবশ্যই অনিষ্টের উপর প্রাধান্য পাবে। বরং আল্লাহ তা‘আলা যা কিছুর নির্দেশ প্রদান করেছেন সেগুলোই সৎকর্ম। আল্লাহ সৎকর্ম ও তার সম্পাদনকারীর প্রশংসা করেছেন এবং অনেক স্থানে বিশৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলাকারীর নিন্দা করেছেন। আল্লাহর নির্দেশিত পন্থা ছাড়া অন্য কোন পন্থায় সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের বাধা প্রদান কতই না মারাত্মক হতে পারে। মুমিন বান্দার উপর আবশ্যক হল, সে আল্লাহর বান্দাদের অধিকারের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করবে। মানুষকে হিদায়াত প্রদান করার দায়িত্ব তার উপর অর্পিত নয়’ (আল-আমরু বিল মা‘রূফ ওয়া আন-নাহ্য়ু ‘আনিল মুনকার, পৃ. ১৯; মানহাজ আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ, প্রশ্নোত্তর নং-১৮)।

ছাহাবীগণ, তাবিঈগণ ও তাবি‘-তাবিঈগণের যুগের যুদ্ধগুলো কোনটিই ‘সরকার পরিবর্তনের জন্য’ সুপরিকল্পিত বিদ্রোহ ছিল না। তাঁরা ‘সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বা কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দেয়ার’ পরে সরকার পরিবর্তনের জন্য বিদ্রোহ বা যুদ্ধ করেননি। মূলত এগুলো ছিল সরকারের কর্তৃত্ব স্বীকারের আগে স্ব স্ব ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ, অথবা দু’পক্ষেরই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের দাবির কারণে, কখনো বা পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে অনিচ্ছাকৃত যুদ্ধ’ (তাহযীব ইবনে আসাকীর, ৭/৪০৮-৪১০ পৃ.)।

একদা শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, মিম্বারের উপর (মঞ্চে) শাসকদের সমালোচনা করা কী সালাফদের মানহাজ (কর্মপন্থা)? শাসকদেরকে উপদেশ প্রদানের নিয়ম কী? উত্তরে তিনি বলেন, ‘জনগণের মাঝে শাসকদের ভুল-ত্রুটিগুলো প্রসিদ্ধ করা, এ ব্যাপারে মঞ্চে সমালোচনা-পর্যালোচনা করা সালাফদের মানহাজ নয়। কেননা এর দ্বারা অনুমানের ভিত্তিতে অনেক কথা বলা হয়ে থাকে যার দ্বারা শুধু ক্ষতিই হয়, মোটেও কোন লাভ হয় না। বরং এক্ষেত্রে সালাফদের অনুসরণীয় রীতি হলো তাদের ও শাসকদের মাঝের বিষয়াবলিতে শাসককে উপদেশ দেয়া, শাসকদের নিকট পত্র লেখা, যে আলিমগণ শাসকদের সাথে যোগাযোগ রাখে তাদের সাথে যোগাযোগ করা, যাতে তারা শাসকদের দৃষ্টিকে কল্যাণের দিকে ফিরিয়ে দেন’ (হুকূকুর রা‘ঈ ওয়ার রয়িয়্যাহ, পৃ. ২৭; আল-মা‘লূম মিন ওয়াজিবিল ‘আলাকহ বাইনাল হাকিমি ওয়াল মাহকুম, পৃ. ২২)।

শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘প্রজার উপর শাসকের অধিকার হল, তারা শাসকদেরকে উপদেশ প্রদান করবে, তাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবে, তারা কোন ভুল-ত্রুটি করে বসলে তাদের ভুল-ত্রুটিকে সমালোচনা করার ও তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করার সিঁড়ি হিসাবে নিবে না। কেননা এর দ্বারা জনগণের মনে শাসকদের প্রতি ঘৃণা ও অপসন্দের উদ্রেক হয়। তাদের ভালো কাজগুলোও জনগণের নিকট অপসন্দনীয় হয়ে যায়। মানুষ তাদের কথা শ্রবণ করা ও তাদের আনুগত্য করা বর্জন করে। প্রত্যেক উপদেশ দাতার জন্য, বিশেষত শাসকদেরকে উপদেশ প্রদানকারীর জন্য আবশ্যক হল, উপদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করা, আল্লাহর পথে হিকমাহ এবং উত্তম উপদেশের দ্বারা আহ্বান করবেন। এই সম্মানিত আলিমগণ তাদের কথাকে রাসূল (ﷺ)-এর প্রদর্শিত রীতি এবং সালাফে ছালিহীনের রীতি অনুযায়ী উপস্থাপন করেন, (হুকূকুর রা‘ঈ ওয়ার রয়িয়্যাহ, পৃ. ১১)।

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুহাল্লাব বলেছেন, ‘তারা উসামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে চেয়েছিল যেন তিনি উছমান (ﷺ)-এর সাথে আলোচনা করেন, তিনি তার বিশেষ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। যারা ওয়ালিদ ইবনে ‘উকবাহর বিষয়ে তার সাথে মতানৈক্য করেছিল। তার শরীরে মদের গন্ধ পাওয়া গিয়েছিল। এ খবরটি ছড়িয়ে পড়ল। সে ছিল উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বৈপিত্রীয় ভাই। তিনি তাকে আমিল নিয়োগ দিয়েছিলেন। উসামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি বিশৃঙ্খলার দরজা খোলা ছাড়াই তার সাথে কথা বলেছি অর্থাৎ প্রকাশ্যে শাসকদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার দরজা উন্মুক্ত করা ছাড়াই, যাতে মুসলিমদের ঐক্য বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়”। ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘উসামার উদ্দেশ্য হল যে, তিনি শাসকের মন্দ দিক নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করার পরিণামের কথা ভেবে প্রকাশ্যে সমালোচনার দরজা উন্মুক্ত করেননি। বরং তিনি এ ব্যাপারে কোমল হয়ে গোপনে উপদেশ প্রদান করেছেন। আর গোপনে প্রদেয় উপদেশই গ্রহণ করার বেশি উপযোগী’ (ফাৎহুল বারী, ১৩/৫২ পৃ.)। ইমাম ইবনু রজব হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিম নেতাদের জন্য উপদেশ প্রদানের পদ্ধতি হল তাদেরকে হক্ব (সঠিক) বিষয়ে সাহায্য করা ও তাদের আনুগত্য করা, তাদের সে হক্ব কাজের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রদান করা, সমবেদনা ও কোমলতার সাথে তাদেরকে সতর্ক করা, তাদের তাওফীকের জন্য দু‘আ করা এবং অন্যদেরকে তাদের কল্যাণ কামনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা’ (জামি‘উল উলূম ওয়াল হিকাম, পৃ. ১১৩)।


প্রশ্নকারী : রিযওয়ান, ঢাকা।





প্রশ্ন (৫২) : যে ব্যক্তি রামাযান, শাওয়াল, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ছিয়াম পালন করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (আহমাদ, হা/১৫৪৭২) মর্মে বর্ণনাটি কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৯ বছর। প্রথম সন্তান মেয়ে হয়ে মারা গেছে। এটা কি আমার জন্য কোন বিপদ? সন্তান লাভের কোন বিশেষ আমল আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১০) : বদ নযর কি সত্য? আর যদি বদ নযর লেগেই যায়, তাহলে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : বিবাহের পূর্বে স্বামী/স্ত্রীর মধ্যে একজন অথবা উভয়জন ছালাত আদায় না করলে কি বিবাহের চুক্তি বাতিল হয়ে যায়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের মাঠে স্থাপিত মীযানকে অস্বীকার করে তার পরিণাম হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : ফিতরা কি ঈদের ছালাতের পূর্বেই বণ্টন করে দিতে হবে? না-কি ঈদের পরেও করা যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৯) : কুরবানীর পশুর বয়স কত বছর হলে কুরবানী করা যায়? পশুর দুধের দাঁত পড়ার পর নতুন দাঁত উঠা কি শর্ত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : বদলি হজ্জ যার পক্ষ থেকে করা হয় তিনি কী পরিমাণ নেকী পাবেন? অনুরূপ যিনি বদলি হজ্জ করে দেন তিনি কী পরিমাণ নেকী পাবেন? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২১) : কোনটা নফসের ধোঁকা আর কোনটা শয়তানের ধোঁকা এটা কিভাবে বুঝা যাবে? নফসের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার পথ কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩২) : এক রাক‘আত বিতরের ছালাত আদায় করার প্রমাণ জানতে চাই? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৯) : মৃত্যু যন্ত্রণা কি গুনাহগুলোকে হালকা করবে? অনুরূপভাবে রোগ-বিমার কি গুনাহকে কিছুটা লাঘব করে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : ঈদের দিনে কুরবানীর পশুর রক্ত ঝরানোর চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক পসন্দনীয় কোন আমল নেই। সে ক্বিয়ামত দিবসে উক্ত পশুর শিং, খুর, লোম প্রভৃতি নিয়ে উপস্থিত হবে এবং তার রক্ত যমীনে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নির্ধারিত মর্যাদার স্থানে পতিত হয়। অতএব তোমরা প্রফুল্লচিত্তে কুরবানী কর’। হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ