উত্তর : বরকতের আশায় মসজিদ, বাড়ি কিংবা দোকানের দেওয়ালে আল্লাহর নামসমূহ, কুরআনুল কারীমের আয়াতের অংশ অথবা হাদীছের অংশ লিপিবদ্ধ করা বা ঝুলিয়ে রাখা বিদ‘আত ও অপসন্দনীয় কাজ। এটি সালাফে ছালিহীনের নীতি বিরোধী কাজ (আল-মাজমূঊ লিননাবাবী, ২/৭০; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ র্দাব ইবনে উছাইমীন, ১/১২৯; লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-১৯৭, প্রশ্ন নং-৮; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২৭৯৮৭)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘বাড়ি, মাদরাসা, অফিস বা দোকানের দেওয়ালে কুরআনুল কারীমের কোন সূরা বা আয়াত ঝুলিয়ে রাখাতে বিবিধ অকল্যাণ ও ক্ষতি রয়েছে। যথা :
(১) কেউ কেউ দেওয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য টাঙিয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা কিন্তু কুরআনুল কারীমকে দেওয়ালের শোভা বৃদ্ধি করার জন্য বা টাঙিয়ে রাখার জন্য অবতীর্ণ করেননি। এতো এক মহা উপদেশমালা, যা আল্লাহ্ তা‘আলা নবী (ﷺ)-এর উপর মু‘জিজা স্বরূপ অবতীর্ণ করেছেন।
(২) অনেকেই আবার বরকত প্রাপ্তির জন্য টাঙিয়ে থাকে। অথচ এটি বিদ‘আত! কেননা তিলাওয়াতে ফযীলত ও বরকত রয়েছে, শুধু টাঙিয়ে রাখার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। বরং এর মধ্যে কুরআনুল কারীমের অবমাননা রয়েছে।
(৩) আল্লাহ তা‘আলা যে মহান উদ্দেশ্য কুরআনুল কারীমকে অবতীর্ণ করেছেন, এর মাধ্যমে সেই মহান উদ্দেশ্য ব্যহত হয়। নবী (ﷺ), খুলাফায়ে রাশিদীন, ছাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈগণ এবং তাবি‘ তাবিঈদের যুগে এর প্রচলন ছিল না। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যে, আন্দালুস এবং তুরস্কের লোকেরা কুরআনের আয়াত দ্বারা মসজিদ ও বাড়ির দেওয়াল সুসজ্জিত করার প্রচলন শুরু করে।
(৪) অনেক সময় এটি শিরকের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। কেননা অনেকেই ধারণা করে যে, এটি তাদেরকে বিপদাপদ থেকে নিরাপদ রাখবে এবং এর ফলে ব্যবসায় বরকত হবে। অথচ কল্যাণ-অকল্যাণের একমাত্র মালিক আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা।
(৫) অনেকে এগুলোকে স্বর্ণ দ্বারা লিপিবদ্ধ করে। অনেকে লেখাটিকে বৃক্ষ, সাজদারত মানুষ বা অন্য কিছুর আকৃতি দেয়ার চেষ্টা করে। এবং এমন রচনাশৈলীতে লেখে যা পড়াও যায় না। সুতরাং মুসলিমদের উচিত কুরআনুল কারীমকে যথারীতি তিলাওয়াত করা এবং সেই মোতাবেক আমল করা (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৪/৫৮ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৫৪)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি আরো বলেন, ‘মসজিদের দেওয়ালে কুরআনের আয়াত লেখা জায়েয নয়। কারণ এগুলো নিষিদ্ধ কাজের অন্তর্ভুক্ত’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৫/১৯০ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ শাহনেওয়াজ, সাজেক, বান্দরবান।