শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শানে আপত্তিকর কটুক্তি ও আমাদের করণীয়

-হাসিবুর রহমান বুখারী*


(২য় কিস্তি) 

জবাব (৪) : মক্কার কাফির ও মুশরিকরা নানাভাবে মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে প্রলোভন দেখিয়েও তারা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সাথে কোন সমঝোতা করতে পারেনি। মুহাম্মাদ (ﷺ) যদি নারীলোভী হতেন তবে তখনকার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আরবের সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের বিয়ে করতে পারতেন। তিনি তার কিছুই করেননি। কারণ, তাঁর মিশন ছিল সত্যের পথে আজন্ম সংগ্রামের। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে ‘সৃষ্টির দাসত্ব থেকে স্রষ্টার দাসত্বে’র দিকে নিয়ে যাওয়া। তাই তো সত্য প্রচারের জন্য অনমনীয় থেকে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার এক হাতে সূর্য আরেক হাতে চন্দ্র এনে দিলেও আমার দ্বীন থেকে আমি বিরত হব না। হয় আল্লাহ আমাকে জয়ী করবেন, নতুবা আমি শেষ হয়ে যাব। কিন্তু এ কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হব না’।[১] সর্বাধিক বিস্ময়কর ও মজার বিষয় হল যে, তৎকালীন যদি ৯ বছরের কোন মেয়েকে বিবাহ করা অসামাজিক কাজ হত, তাহলে যে কাফির ও মুশরিকরা প্রত্যেক পদে পদে রাসূল (ﷺ)-কে বদনাম, হেনস্থা ও অপমানিত করার জন্য ব্যতিব্যস্ত থাকত, তারা কি এই সুবর্ণ সুযোগ কখনো হাত ছাড়া করত?

ইসলাম ধর্ম, কুরআন, আল্লাহ তা‘আলা ও নবী করীম (ﷺ) সম্পর্কে কটুক্তি করার কারণ

ইদানিন্তনকালে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফির ও মুশরিকদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা ও ঘৃণা গভীরভাবে লালিত-পালিত হচ্ছে। ফলস্বরূপ তারা কখনো সৃষ্টিকুলের সর্বোত্তম মানব, স্রষ্টার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) সম্পর্কে আপত্তিকর, অবমাননাকর, কুৎসিত ও কদর্য মন্তব্য করছে। কখনো প্রকাশ্য দিবালোকে পবিত্র কুরআনুল কারীমের মানহানি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কখনো ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে, কখনো এঁদের জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসবাদী হিসাবে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করে বদনাম করার চেষ্টা করছে। মোটকথা তারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোন সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাই না। কিন্তু আপনি জানেন কি, তারা এমন কেন করে? আমাদের গবেষণা মতে, এজন্য প্রধানতঃ তিনটি কারণ আছে। যথা :

প্রথম কারণ : ধর্মীয় অনুভূতিকে ক্ষুব্ধ করা এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বা জনসাধারণের শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ করতে প্ররোচিত করা

বাস্তবিকপক্ষে কাফির ও মুশরিকরা এই সমস্ত সাম্প্রদায়িক, হিংসাত্মক ও উস্কানিমূলক মন্তব্য ও কর্মকা-ের মাধ্যমে আপামর মুসলিম জনতাকে উত্তেজিত করতে চায়। যাতে সাধারণ মুসলিমগণ আবেগপ্রবণ হয়ে এমন কিছু করে ফেলে যে, পরবর্তীতে ঐ অজুহাতে ষড়যন্ত্রকারী কাফির, মুশরিকরা মুসলিমদেরকে নির্বিচারে হত্যা করতে পারে, তাদের উপর গুলিবর্ষণ করতে পারে, কারাগারে বন্দী করতে পারে, ঘরবাড়ী বিধ্বংস করতে পারে। এই কথাগুলোর যথার্থতা কিন্তু প্রমাণিত। সদ্য অভিশপ্ত নুপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দাল যখন নবী করীম (ﷺ)-এর শানে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেছিল, তখন মুসলিমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছিল। ঝাড়খ-ের রাঁচি শহরের পুলিশ-প্রশাসন প্রতিবাদকারীদের নিয়ন্ত্রণ করার নামে ১৪ বছরের এক তরুণকে গুলি করে হত্যা করে। উত্তর প্রদেশের পুলিশ-প্রশাসন অসংখ্য তরুণদের জেলখানায় বন্দী করে তাদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালায়। প্রতিবাদকারীদের উপর লাঠিচার্জ করা হয়, কাঁদানে গ্যাস ছুড়া হয়, ছাত্র সংগঠক আফরীন ফাতিমার বাড়ীর উপর বুলডোজার চালিয়ে বিনষ্ট করা হয়, প্রতিবাদী অসংখ্য মুসলিম তরুণকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল! যে দু’জন মূল দোষী তারা কিন্তু এখনো জেলের বাইরে।

ফ্রান্সেও ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। ২০২০ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের ম্যাগাজিন শার্লি এবদো’র সর্বশেষ সংস্করণের প্রচ্ছদে প্রিয়নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে ব্যঙ্গ করে আঁকা ১২টি কার্টুন ছাপা হয়। এর পক্ষকাল পরে ফ্রান্সের একজন স্কুল শিক্ষক ক্লাসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা (Freedom of speech) সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মহানবীকে নিয়ে ব্যঙ্গ কার্টুন প্রদর্শন করে। সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরোধিতা করে। একজন ইমাম মসজিদ থেকে এর বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রতিবাদের ডাক দেন। ইতিমধ্যেই একজন তরুণ ঐ শিক্ষককে তরবারী দ্বারা জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। যদিও তাকে সেখানেই গুলি করে হত্যা করা হয়। তারপর থেকে সমগ্র ফ্রান্স জুড়ে চলেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সরকার ও বিভিন্ন উগ্র জাতীয়তাবাদীদের হামলা এবং কঠোর সব পদক্ষেপ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ঐ ইমামের মসজিদ বন্ধ করে দেয়, বিভিন্ন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়, চারদিকে ধর-পাকড় শুরু হয় এবং প্রকাশ্য জনসভায় সে মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ জারি রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

দ্বিতীয় কারণ : ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা

কাফির ও মুশরিকরা লক্ষ্য করছে যে, প্রতিনিয়ত ইসলামের সত্যতা, স্বচ্ছতা, নির্মলতা, উদারতা, মানবিকতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতি, সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের অনুপম নিদর্শন দেখে অনেকেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন এবং তাঁরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর সমগ্র বিশ্বের সামনে প্রকাশ্য ঘোষণা করেছেন যে, ‘ইসলামের মধ্যে যতটা সত্যতা, নির্মলতা, উদারতা ও  মানবিকতা রয়েছে, বিশ্বের অন্য কোন ধর্মের মধ্যে ততটা নেই’। যেমন ডা. জাকির নায়েকের ঘটনা, তাঁর পীস টিভির মাধ্যমে যখন বিশ্বের প্রতিটি ঘরে ঘরে ইসলামের সত্যতা ও অন্যান্য ধর্মের ভ্রষ্টতা প্রমাণিত হতে শুরু করে, শতশত মানুষ তাঁর বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করে, তখন ইসলামের শত্রুরা কিছু অসৎ ধর্মব্যবসায়ীদের নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিল। খুবই সাম্প্রতিককালে তামিলনাড়ুর একজন অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা (Motivational speaker) এবং শিক্ষিকা ফাতিমা সাবরীমালা প্রথম মক্কা সফরে গিয়ে তাঁর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণ সম্পর্কে বলেন,

I asked myself why there is so much hatred against Muslims in the world? I started reading the Quran as a neutral person. Then I came to knwo the truth. Nwo I love Islam more than myself. ‘আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম যে, পৃথিবীতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এত ঘৃণা, বিদ্বেষ, বিরোধিতা কেন?  সুতরাং আমি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কুরআন পড়া শুরু করলাম। অতঃপর আমি সত্যটা জানতে পারি। এখন আমি ইসলামকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি’।

এ ধরনের ঘটনাগুলো অবলোকন করার পর স্বভাবতই কাফির-মুশরিকদের অন্তরে ভীতি সঞ্চারিত হতে শুরু করে। তারা চিন্তা করতে থাকে যে, ইসলামের এই উত্তাল তরঙ্গকে যদি এখনি স্তব্ধ করা না যায়, তাহলে অচিরেই হয়তো পৃথিবীতে মুসলিমদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে! হয়তো সকলেই ইসলামকে সত্য ও পবিত্র হিসাবে জানতে ও মানতে শুরু করবে! তাই তারা বেছে নেয় গাল-মন্দ ও কুৎসা রটনা সহ বিভিন্ন অশালীন কথার দ্বারা এঁদের নির্মল চরিত্রে কালিমা লেপনের ঘৃণ্য পথ। তাদের বিশ্বাস এভাবেই হয়তো এঁদের ধরাশায়ী করা সম্ভব। তাদের অলীক কল্পনা হয়তো ভিন্নধর্মাবলম্বী লোকেরা দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করতে এসে এঁদের বদনাম শুনে ইসলাম গ্রহণ না করেই পালিয়ে যাবে। আলহামদুলিল্লাহ্, এতদসত্ত্বেও কিন্তু ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে ভীড় বাড়তেই আছে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা অঙ্গীকার করে বলেছেন,

یُرِیۡدُوۡنَ  لِیُطۡفِـُٔوۡا  نُوۡرَ اللّٰہِ  بِاَفۡوَاہِہِمۡ وَ اللّٰہُ  مُتِمُّ  نُوۡرِہٖ  وَ لَوۡ  کَرِہَ  الۡکٰفِرُوۡنَ

‘তারা আল্লাহর জ্যোতিকে তাদের মুখ দিয়ে (অর্থাৎ কটুক্তি ও নিন্দনীয় কথাবার্তা দ্বারা) নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর জ্যোতিকে পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেনই, যদিও অবিশ্বাসীরা তা অপসন্দ করে’ (সূরা আছ-ছফফ : ৮)। উর্দূ কবি বলেন,

اسلام کی فطرت میں قدرت نے لچک دی ہے اتنا ہی یہ اُبھرے گا جتنا کہ دباؤ گے

‘ইসলামের প্রকৃতি বা স্বভাবে আল্লাহ তা‘আলা এমন এক নমনীয়তা দিয়েছেন, একে যতই চেপে রাখার চেষ্টা করা হবে ততই উথলে উঠবে বা উচ্ছলিত হবে’।

তৃতীয় কারণ : ইসলাম ও মুসলিমদের বিরোধিতার মাধ্যমে নিজেকে প্রসিদ্ধ করা, সোস্যাল মিডিয়ায় চর্চিত হওয়া এবং খবরের হেডলাইন বা শিরোনামে আসা অথবা নিজের রাজনৈতিক ভাবীকাল পরিপক্ক করা

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ ইসলামোফোবিক ঘটনার মূল নেপথ্যে রয়েছে নিজেকে প্রচার করার প্রচেষ্টা, নিজের ডুবন্ত রাজনৈতিক জীবনকে পুনরুজ্জীবিত করা, নিজের অপরাধ গুলোকে পরিষ্কার করার লক্ষ্যে ইসলাম বিরোধী সরকারের দৃষ্টিতে সৎ সাজার প্রয়াস। যেখানে মুসলিমরা সংখ্যালঘু সেখানে এরূপ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে খুব সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে হিরো হওয়া যায়। ২০১৪ এর পর থেকে ভারতবর্ষের রাজনীতিতে এক জঘন্য পরিবর্তন এসেছে। সাম্প্রদায়িকতা, গোঁড়ামি, বিভাজন, ভ্রষ্টাচার, অশালীনতা, নৈতিক বিকৃতি এদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজমান। তখন থেকেই ইসলাম ও মুসলিমদের বারংবার টার্গেট করা হচ্ছে। কখনো গরু পাচারের নামে ‘মব লিঞ্চিং’ (সড়ন ষুহপযরহম) করা হচ্ছে, কখনো চুরির নামে নির্দোষ মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। ‘অচিরেই মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে ভারতবর্ষ থেকে সমস্ত হিন্দুদের বিতাড়িত করবে’! এই রকম কৃত্রিম গুজব ছড়িয়ে হরিয়ানা প্রদেশের শম্ভু নামের এক হিংস্র পশু মালদা জেলার এক নিরীহ মুসলিম শ্রমিককে বেলচা দিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করার স্ব-ভিডিও ইন্টারনেট আপলোড করেছিল। আশ্চর্যের বিষয় হল যে, এই বর্বর নরপশুটির কিন্তু এখনো ফাসি হয়নি! হবেই বা কেন! আইন তো তাদের হাতেই। হয়তো কিছুদিন পর কোন ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে নিজেকে পাগল প্রমাণিত করে জেল থেকে মুক্ত হয়ে যাবে!

পরিশেষে এই সমস্ত সংখ্যালঘু বিদ্বেষী হিংস্র মানুষগুলোই একদিন দেশের নেতা হয়ে যাবে! যেমন খোদ উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ছাত্রাবস্থা থেকেই আদিত্যনাথ ছিল জাতপাত ও বর্ণভেদের ঘোর সমর্থক। সমানভাবে সে ছিল ঘোর নারী ও মুসলিম বিদ্বেষী। উত্তরখণ্ডের ‘হেমবতীনন্দন বহুগুণা গাড়োয়াল ইউনিভার্সিটি’-তে বি.এসসি প্রথম বর্ষে পড়ার সময় এক দলিত শিক্ষকের ক্লাস বয়কট করে সে ঐ ইউনিভার্সিটির অন্যান্য সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতভাই শিক্ষক ও ছাত্রদের কাছে হিরো বনে যায়। এটা তার প্রথম আত্মপ্রকাশ। এরপর সব বর্ণবাদীরা তাঁকে কাছে টানতে থাকে এবং উপরে তুলতে সহযোগিতা করে। অযোধ্যায় রামজন্মভূমি মন্দির প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য ১৯৯০ সালে গৃহত্যাগ করে এবং গোরক্ষনাথ মঠের প্রধান গুরু মহন্ত আদিত্যনাথের কাছে আশ্রয় নেয়। গুরু মহন্ত আদিত্যনাথের মৃত্যুর পর যোগী আদিত্যনাথ ঐ মঠের মহন্ত (প্রধান) হয়। এই গোরক্ষনাথ মঠ শুদ্র-দমনকারী হিসাবে ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছে। গোরক্ষনাথ মঠের স্ব-প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা অসংখ্য দলিত গ্রাম পুড়িয়েছে, দলিতদের প্রতি অবর্ণনীয় অত্যাচার করেছে, বহু দলিত নারীকে গ্রাম থেকে তুলে এনে মঠের মধ্যে ধর্ষণ ও খুন করেছে। এরপর থেকে যোগীর ক্ষমতা ও প্রভাব অনেক গুণ বেড়ে যায়। উত্তরপ্রদেশ চষে বেড়িয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করতে থাকে। তার ঝাঁঝালো বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দলিত বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ উগরে দিতে থাকে। ফলে প্রথম থেকেই সে সমাজকে একটা সোজা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। উত্তরপ্রদেশে শুরু হয় একের পর এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এ পর্যন্ত যোগীর বিরুদ্ধে ৬২টি দাঙ্গা বাধানোর অভিযোগ, ১৭ টি খুনের অভিযোগ, যার মধ্যে ৮টি দলিত পরিবারকে খুন রয়েছে।[২] এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে অন্যের সম্পত্তি দখল, অপহরণ, সম্মানহানি, দেশদ্রোহিতা, ষড়যন্ত্র, অস্ত্র রাখা ইত্যাদির মত অসংখ্য ফৌজদারী মামলা।

দলিতদের প্রতি আদিত্যের ভাবনা অতি ভয়ংকর, ‘দলিতরা দাস হয়েই জন্মেছে, তাই দাসত্ব করাই তাদের পবিত্র কর্তব্য’।[৩] দলিত নারী সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য গোরক্ষনাথ মঠে বসেই জানিয়েছেন, ‘দলিত নারী ধর্ষণ করা পাপ নয়, কারণ তার শরীর অপবিত্র হলেও যোনি অপবিত্র নয়’।[৪] আর ‘লাভ জিহাদ’ সম্পর্কে তো তার সেই বিখ্যাত উক্তি আছেই, ‘কোন হিন্দু মেয়েকে মুসলিম ছেলে বিয়ে করলে হিসাব করে সমস্ত হিন্দু ছেলেকে গুণে গুণে ১০০ মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করা উচিত’। মুসলিম নারী সম্পর্কে আরো বিস্ফোরক মন্তব্য করে ২০১৪ সালে, ‘কবর থেকে তুলে মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণ করা হবে’। তাই মেয়েদের মুখে অ্যাসিড ছোঁড়ার ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের কাছে হাসতে হাসতে বলে, ‘অতি মামুলি ঘটনা বলতে পারেন। লোকে অ্যাসিড ছোঁড়ে কেন, সে তো জানা কথা, প্রেম প্রস্তাব পাঠিয়ে ব্যর্থ হলে। ছেলেরা জোয়ান হলে প্রেম করতে চাইবে, তাতে আপত্তি করে কোন্ আহাম্মক’? সমগ্র মুসলিম সমাজই তাঁর কাছে অতীব ঘৃণার পাত্র।

২০০৭ সালে জানুয়ারী মাসে গোরক্ষপুরে মুসলিমদের মহরম উৎসবকে কেন্দ্র করে আদিত্যের গোরক্ষ বাহিনী প্রশাসনের উপর বোমা মারে ফলস্বরূপ ঐ অঞ্চলে বিশাল বড়ো দাঙ্গা শুরু হলে যোগী আদিত্যকে জেলে ঢোকানো হয়। এর ফলে তার সশস্ত্র বাহিনী মুম্বাই থেকে গোরক্ষপুর গামী ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে ৮ জনের মৃত্যু ঘটে এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়। অথচ এরকম একজন হিংস্র মানব আজ উত্তরপ্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী হয়ে বসে আছে! বিগত আট বছর ধরে এমনি চলছে, কট্টর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্ধেষী অসংখ্য নরপিশাচ, নরাধম, ঘাতক, ধর্ষক ও হত্যাকারীর বিরুদ্ধে সমস্ত তথ্য ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ক্লিনচিট দেয়া হয়েছে।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* মুর্শিদাবাদ, ভারত।

তথ্যসূত্র :
[১]. সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩১৪।
[২]. টচ প্রশাসনিক রিপোর্ট, ৩/২/২০১৬, দ্য টেলিগ্রাফ।
[৩]. ৩/৮/১৯৯৫, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, লক্ষ্ণৌ সম্মেলনের বক্তব্য।
[৪]. সন্ন্যাসাশ্রম ও আদিত্যের মানব ভাবনা, শিরোনামে ১৩/১/২০২১ বর্তমান পত্রিকায় প্রকাশিত।




প্রসঙ্গসমূহ »: সাময়িক প্রসঙ্গ
ক্যাসিনো : মদ্যপ, জুয়াড়ি ও যৌনাচারের আখড়া - আব্দুল্লাহ আল-মামুন
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শানে আপত্তিকর কটুক্তি ও আমাদের করণীয় (শেষ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
নির্যাতিত মানুষের আর্তচীৎকার ও আল্লাহর সাহায্য - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও প্রতিকার : একটি পর্যালোচনা - মুহাম্মাদ আমীনুল ইসলাম
ইসলামে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক - তানযীল আহমাদ
করোনা ভাইরাস - আব্দুল্লাহ আল-মামুন
মানব বিধ্বংসী এনার্জি ড্রিংকস - এহসান বিন মুজাহির
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শানে আপত্তিকর কটুক্তি ও আমাদের করণীয় - হাসিবুর রহমান বুখারী
কাশ্মীর দখল : মুসলিমমুক্ত করার নীলনকশা - মুহাম্মাদ আমীনুল ইসলাম
ইহুদী ও পশ্চিমা পরাশক্তির ধূর্তামি এবং ফিলিস্তিনের পরিণতি - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শানে আপত্তিকর কটুক্তি ও আমাদের করণীয় (২য় কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ধর্ষন : বিকৃত মানসিকতার ভয়ংকর আক্রমণ - আব্দুল্লাহ আল-মামুন

ফেসবুক পেজ