উত্তর : গণতন্ত্র (Democracy) শব্দটি আরবী নয়। এটি গ্রিক ভাষার শব্দ। শব্দটি Demos & Kratia শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। Demos শব্দের অর্থ সাধারণ মানুষ বা জনগণ আর Kratia শব্দের অর্থ শাসন বা ক্ষমতা। সুতরাং উভয় শব্দের মিলিত অর্থ দাঁড়ায় সাধারণ মানুষ বা জনগণের শাসন ক্ষমতা। গণতন্ত্র একটি মানব রচিত ধর্মহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা।
গণতন্ত্র ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক একটি মতবাদ। এই তন্ত্রে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা জনগণের হাতে অথবা তাদের নিযুক্ত প্রতিনিধি (পার্লামেন্ট সদস্য)-এর হাতে অর্পণ করা হয়। তাই এ মতবাদের মাধ্যমে গায়রুল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। অর্থাৎ জনগণ ও জনপ্রতিনিধির শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। যে আইন ও শাসন জনগণ মেনে চলতে বাধ্য, যদিও মানব প্রকৃতি ও ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তবুও। উদাহরণস্বরূপ এই তন্ত্রের অধীনে গর্ভপাত করা, সমকামিতা, সূদী মুনাফার বিধান ইত্যাদি জারী করা হয়েছে। অথচ ইসলামে এগুলো হারাম ও বাতিল। জনগণের আইনে ব্যভিচার ও মদ্যপানকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। অথচ ইসলামে এগুলো চূড়ান্তভাবে হারাম করা হয়েছে। এ ধরণের অসংখ্য সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে।
মূলকথা এই তন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদেরকে প্রতিহত করা হয়। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে জানিয়েছেন, ‘হুকুম বা শাসনের মালিক একমাত্র তিনি এবং তিনিই হচ্ছেন উত্তম হুকুমদাতা বা শাসক’ (সূরা আল-গাফির : ১৩)। পক্ষান্তরে অন্যকে তাঁর শাসনে অংশীদার করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং জানিয়েছেন তাঁর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা কেউ নেই। তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেয়ার অধিকার নেই (সূরা ইউসুফ : ৪০)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘আল্লাহ কি হুকুমদাতাদের শ্রেষ্ঠ নন?’ (সূরা আত্ব-ত্বীন : ০৮)। তিনি আরো বলেন, তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি নিজ হুকুমে কাউকে অংশীদার করেন না (সূরা আল-কাহ্ফ : ২৬)। ঈমানদাগণ সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্র আইনের চেয়ে উত্তম কোন আইন নেই। আল্লাহর আইন বিরোধী সকল বিধান জাহিলী বিধান (সূরা আল-মায়িদাহ : ৫০)।
আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকুলের স্রষ্টা। তিনি জানেন, কোন্ বিধান তাদের জন্য উপযুক্ত, কোন্ বিধান তাদের জন্য উপযুক্ত নয়। নিজের জন্য কোনটা উপযোগী মানুষ সেটাই জানে না, তাহলে অন্যের জন্য কোনটা উপযুক্ত সেটা কি করে জানবে। এ কারণে যে দেশগুলোতে জনগণের প্রণীত আইনে শাসন চলছে সে দেশগুলোতে বিশৃঙ্খলা, চারিত্রিক অবক্ষয়, সামাজিক বিপর্যয় ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না।
‘মাউসূআতুল আদইয়ান ওয়াল মাযাহিব আল-মুআসিরা’ গ্রন্থে (২য় খণ্ড, পৃ. ১০৬৬-১০৬৭-তে) এসেছে, ‘কোন সন্দেহ নেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আল্লাহর আনুগত্য ও আইনপ্রণয়ন অধিকারের ক্ষেত্রে একটি নব্য শিরকের স্বরূপমাত্র। যেহেতু এ প্রক্রিয়ায় স্রষ্টা হিসাবে আল্লাহর আইন প্রণয়ন করার একক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করা হয় এবং মাখলুককে এ অধিকার প্রদান করা হয় (সূরা আল-আন‘আম : ৫৮; ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-৯৮১৩৪)।
শায়খ আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইসলাম ও গণতন্ত্র দু’টি বিপরীতমুখী ব্যবস্থা। যা কখনো এক হবার নয়। একটি আল্লাহর উপর ঈমান ও আল্লাহ নির্দেশিত পন্থায় জীবন পরিচালনার নির্দেশ দেয়, অপরটি ত্বাগূতের (আল্লাহ বিরোধী অনুশাসন) প্রতি ঈমান ও তদনুযায়ী জীবন পরিচালনার উপর নির্ভরশীল (সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, রেকর্ড নং-৩৫৩)।
আল্লাহর উপর ঈমান ও রাসূলদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনার পর আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন গ্রহণ করার প্রবণতাকে আল্লাহ তা‘আলা ‘বিস্ময়কর’ ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি। কিন্তু তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে’ (সূরা আন-নিসা : ৬০)। তাই গণতন্ত্র পদ্ধতি ইসলাম বিরোধী এবং এর দ্বারা নির্বাচিত সরকারের ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের আনুগত্য করা যাবে না।
প্রশ্নকারী : আবূ সাঈদ সাকিব, বেগম রোকেয়া বিশ্ব. রংপুর।