উত্তর : আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, মু‘আবিয়াহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মসজিদে একটি হালাক্বার উদ্দেশ্যে বের হলেন। অতঃপর তিনি বললেন, কিসে তোমাদেরকে এখানে বসিয়েছে? তাঁরা বললেন, আমরা আল্লাহর যিক্র করতে বসেছি। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! এছাড়া আর কোন বিষয় তোমাদেরকে বসায়নি? তাঁরা বললেন, আল্লাহর শপথ! এছাড়া অন্য কোন বিষয় আমাদেরকে বসায়নি। তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে অপবাদ দেয়ার উদ্দেশ্যে শপথ প্রার্থনা করিনি। কারণ একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর ছাহাবীদের একটি ‘হালাক্বা’র নিকটে গিয়ে বললেন, কিসে তোমাদের বসিয়েছে? তাঁরা বললেন, আমরা বসেছি আল্লাহর যিকির ও তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। যেহেতু তিনি আমাদেরকে ইসলামের দিকে পথ দেখিয়েছেন এবং আমাদের উপর তিনি ইহসান করেছেন। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! তোমাদেরকে কি শুধু এ বিষয়েই বসিয়েছে? তাঁরা বললেন, আল্লাহর শপথ! আমাদেরকে একমাত্র ঐ বিষয়-ই বসিয়েছে। তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে অপবাদ দেয়ার জন্য শপথ করতে বলিনি; বরং আমার নিকট জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এসে আমাকে অবহিত করেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা ফিরিশতাগণের নিকট তোমাদের মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০১; ২৬৯৯-২৭০০) ।
উক্ত হাদীছ প্রসঙ্গে শায়খ উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখান থেকে সম্মিলিতভাবে উচ্চৈঃস্বরে যিকির করা প্রমাণিত হয় না। হতে পারে তাঁরা পালাক্রমে পড়তেন, একজনের পড়া শেষ হলে অপরজন শুরু করতেন অথবা কোন একজন পড়তেন আর বাকি সকলে শুনতেন অথবা একসঙ্গে বসে প্রত্যেকেই মনে মনে যিকির করতেন (উছাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ র্দাব, ১৯/৩০ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৫৪২১৩)।
কোন হাদীছে গলা ফাটিয়ে, চিৎকার করে ‘ইল্লাল্লাহ’ বা ‘ইল্-ইল্’ হু হু ধ্বনিতে যিকির করার কথা বলা হয়নি। বরং এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন কোন উপত্যকায় আরোহণ করতাম, তখন ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম। আর আমাদের আওয়াজ অতি উঁচু হয়ে যেত। নবী (ﷺ) আমাদেরকে বললেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হও। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না। বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৯৯২, ৪২০২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০৪)। অন্যত্র আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে ই‘তিকাফ কালে ছাহাবীদেরকে উচ্চৈঃস্বরে ক্বিরাআত পড়তে শুনে পর্দা সরিয়ে বললেন, ‘জেনে রাখো! তোমাদের প্রত্যেকেই স্বীয় প্রতিপালকের সাথে চুপিসারে আলাপে রত আছো। কাজেই তোমরা পরস্পরকে কষ্ট দিও না এবং পরস্পরের সামনে ক্বিরাআতে বা ছালাতে আওয়াজ উঁচু কর না’ (আবূ দাউদ, হা/১৩৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৮৯৬, সনদ ছহীহ)।
ছাহাবীগণ ছিলেন নবীগণের পর সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ মানব এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সর্বাধিক অনুগত ও আদর্শ প্রেমিক। তাঁরা কিন্তু এই হাদীছগুলোকে আমাদের মত করে বোঝেননি। বরং তাঁরা হালাক্বাহ বলতে বুঝেছিলেন দ্বীনি মজলিস, কুরআন তিলাওয়াতের মাহফিল, প্রশিক্ষণ কর্মশালা ইত্যাদিকে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ছাহাবীগণ কখনো কখনো একত্রিত হতেন এবং তাঁদের একজনকে পড়তে বলতেন আর বাকি সকলেই তা শুনতেন। ওমর ফারুক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতেন, ‘আমাদের প্রতিপালককে স্মরণ করাও’ অতঃপর তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতেন আর উপস্থিত সকলেই তা মনোযোগ সহকারে শুনতেন’ (ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২২/৫২১ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আহমাদুল্লাহ, রাজবাড়ী।