উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত কথাটি সঠিক নয়। কেননা এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে যে উক্তিটি বর্ণনা করা হয়ে থাকে, তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আর এ কথা সর্বজনবিদিত যে, যঈফ হাদীছের আলোকে শরী‘আতের কোন বিধান প্রতিষ্ঠিত হয় না। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়ে থাকে যে, তিনি বলেছেন, ‘হিজড়ারা জিনের সন্তান। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে জিজ্ঞেস করা হল যে, এটা কী করে সম্ভব? উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) ঋতুবতী স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং যখন কোন ব্যক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে আসে তখন শয়তান তার উপর বিজয়ী হয়। ফলস্বরূপ স্ত্রী গর্ভবতী হয় এবং হিজড়া সন্তান প্রসব করে’ (আকামুল মারযান ফী আহকামিল জান্ন, ১/৯৩ পৃ.)। ইবনু আদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘বর্ণনাটি জাল ও বানোয়াট’ (আল-কামিল ফিয যু‘আফা, ৬/২৯৫ পৃ.)। ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘বর্ণনাটি মুনকার বা প্রত্যাখ্যাত’ (মীযানুল ই‘তিদাল, ৪/৩৬৩ পৃ.)। ইমাম নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘বর্ণনাটি মুনকার বা অস্বীকৃত’ (আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ, ৬০/৭৯ পৃ.)।
ইসলাম এদের মানবসন্তান হিসাবেই আখ্যায়িত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির কাউকে পুরুষ, কাউকে নারী, আবার তাঁর কুদরতের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ কাউকে বানিয়েছেন একটু ভিন্ন করে, যেন বান্দা তাঁর একচ্ছত্র ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে যে, তিনি সব বিষয়ে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি যেমন স্বাভাবিক সুন্দর সৃষ্টি করতে সক্ষম, তেমনি এর ব্যতিক্রম সৃষ্টি করতেও সক্ষম। আর এমনই এক বৈচিত্রময় সৃষ্টি লিঙ্গ প্রতিবন্ধী বা হিজড়া। এরাও পূর্ণাঙ্গদের ন্যায় সমান মর্যাদার অধিকারী মানব। ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়া, বিকলাঙ্গ বা পূর্ণাঙ্গ হওয়াটা মর্যাদা-অমর্যাদার মাপকাঠি নয়। বরং তাক্বওয়াই হল মান-মর্যাদা আর শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি (সূরা আল-হুজুরাত : ১৩; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৩২০০৮৯)।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ শাহিন, ভোলা।