শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন
উত্তর : ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলার দর্শনের দিক দিয়ে লোকেরা তিনভাগে বিভক্ত হবে। খাঁটি কাফির, খাঁটি মুমিন এবং মুনাফিক্ব। খাঁটি কাফির কখনই আল্লাহকে দেখতে পাবে না। আল্লাহ বলেছেন, کَلَّاۤ اِنَّہُمۡ عَنۡ رَّبِّہِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّمَحۡجُوۡبُوۡنَ ‘কখনো না, অবশ্যই তারা (কাফিররা) সেদিন তাদের প্রতিপালক (দর্শন) থেকে পর্দাবৃত থাকবে’ (সূরা আল-মুতাফ্ফিফীন : ১৫)। পক্ষান্তরে খাঁটি মুমিনরা ক্বিয়ামত দিবসে ও জান্নাতে আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভ করবে। যেমন তিনি বলেন, ‘সেদিন বহু মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ২২-২৩)। অপরদিকে মুনাফিক্বরা শুধু ক্বিয়ামত দিবসেই আল্লাহ তা‘আলার দর্শন পাবে। এরপর তারা তাঁকে আর দেখতে পাবে না। এটি তাদের জন্য খুবই কষ্টকর হবে। দেখা পাওয়ার পর অন্তরালে চলে যাওয়াটা তাদের জন্য অসম্ভব যন্ত্রণাদায়ক হবে (লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১১৬৬৪৪, ১/২৭৩ পৃ.)।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ক্বিয়ামত দিবসে কাফিররা আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাবে কি-না এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। হিজরী তৃতীয় শতকের পর থেকে এই মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এ সম্পর্কে তিনটি মতামত পাওয়া যায়। (১) কাফিররা কোন অবস্থাতেই আল্লাহকে দেখতে পাবে না। পরবর্তী যুগের অধিকাংশ আলিমের এটিই মত এবং পূর্ববর্তীদের মতামতগুলোও এই মতটিকে সমর্থন করে। (২) ক্বিয়ামত দিবসে হিসাব গ্রহণের সময় আল্লাহ তা‘আলা মুমিনগণ, মুনাফিক্বরা ও কিছু আহলে কিতাবদের সম্মুখে প্রকাশিত হবেন। অতঃপর হিসাব গ্রহণ সমাপ্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিক্বদের অন্তরালে চলে যাবেন। এরপর তারা আর তাঁকে দেখতে পাবে না। (৩) সেদিন কাফিররা ভীতিকর অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলাকে অবহিতকরণ কারী, শাস্তি প্রদানকারী, কষ্টপ্রদান কারী ও আযাব প্রদানকারী রূপে দেখবে। ঠিক যেমন চোর বিচারকের দিকে তাকিয়ে দেখে। অতঃপর তিনি তাদের ভয়ভীতি ও ক্লেশকে বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে তাদের থেকে আড়ালে চলে যাবেন। এটি আবুল হাসান ইবনু সালিম (রাহিমাহুল্লাহ) ও তাঁর অন্যান্য সাথীদের মতামত (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৬/৪৮৬-৪৮৮ পৃ.)।

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, ছাহাবীগণ নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা কি ক্বিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেন, মেঘমুক্ত পুর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর? তাঁরা বললেন, না, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে তেমনিভাবে দেখতে পাবে। ক্বিয়ামতের দিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যে যার উপাসনা করতে সে যেন তার অনুসরণ করে। তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ ত্বাগূতের অনুসরণ করবে। আর বাকী থাকবে শুধু এই উম্মত, তবে তাদের সাথে মুনাফিক্বরাও থাকবে। তাঁদের মাঝে এ সময় আল্লাহ তা‘আলা আগমন করবেন এবং বলবেন, ‘আমি তোমাদের রব’। তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের প্রতিপালক আগমন না করবেন, ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব। আর তাঁর যখন আগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা আগমন করবেন এবং বলবেন, ‘আমি তোমাদের রব’। তারা বলবে, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব’ (ছহীহ বুখারী, হা/৮০৬, ৪৫৮১, ৬৫৭৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২-১৮৩, ৩৪০)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘অবশেষে বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ‘ইবাদতকারীগণ। তাদের সৎ ব্যক্তি ও গুনাহগার সকলেই। তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হবে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে আটকে রেখেছে? অথচ অন্যরা চলে গেছে। তারা বলবে, আমরা একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে শুনেছি যে, যারা যাদের ‘ইবাদত করত তারা যেন ওদের সঙ্গে যায়। আমরা অপেক্ষা করছি আমাদের রবের। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘এরপর মহাক্ষমতাশালী আল্লাহ তাদের কাছে আসবেন। এবার তিনি সে আকৃতিতে আসবেন না, যেভাবে তাঁকে প্রথমে ঈমানদারগণ দেখেছিলেন। এসে তিনি ঘোষণা দেবেন- আমিই তোমাদের রব, সবাই তখন বলে উঠবে, হ্যাঁ আপনিই আমাদের প্রতিপালক’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭৪৩৯-৭৪৪০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩)।

উক্ত হাদীছদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা এই উম্মতের মুমিন ও মুনাফিক্বদের নিকট দু’বার প্রকাশিত হবেন। প্রথমবার অন্য রূপ ধারণ করে আর দ্বিতীয়বার প্রকৃত রূপে। কিছু আলেম এখান থেকে মুনাফিক্বদের দর্শনের কথা প্রমাণ করতে চেয়েছেন। পক্ষান্তরে কাফিরদের দর্শনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৫৬৪৫৫)।  শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কুরআন, ছহীহ হাদীছ ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ইজমা অনুযায়ী বিচার দিবসে ও জান্নাতে মুমিনদের আল্লাহ তা‘আলার দর্শন প্রাপ্তির বিষয়টি সুন্নাত থেকে প্রমাণিত ও সর্বজনবিদিত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সেদিন বহু মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ  : ২২-২৩)।

আর পরকালে ও জান্নাতে মুমিনরা যে আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভ করবে, এ সম্পর্কে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, وَاعْلَمُوْا أَنَّكُمْ لَنْ تَرَوا رَبَّكُمْ حَتَّى تَمُوْتُوْا ‘জেনে রাখো! মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তোমরা (মুমিনরা) তোমাদের রবকে দেখতে পাবে না’ (তাখরীজু কিতাবিস সুন্নাহ, হা/৪২৯; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামি‘, হা/২৯৬৩; ইবনু হাজার, আল-গুনইয়াতু ফী মাসআলাতির রুইয়্যাহ, ১/২৪ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ১/১০০ পৃ.)। পক্ষান্তরে কাফিররা কিন্তু আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে সক্ষম হবে না (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২৪/৪১২ পৃ.)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ সম্পর্কে কোন স্পষ্ট দলীল না থাকাটাই মতপার্থক্যের মূল কারণ। অধিকাংশ আলিম বলেন, ‘কুরআন, ছহীহ হাদীছ ও সালাফে ছালিহীনের আলোচনাতে শুধু মুমিনদের দর্শন লাভই প্রমাণিত হয়েছে। কাফিরদের দর্শন লাভ সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য প্রমাণিত নয়’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৬/৫০২-৫০৩ পৃ.)। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কাফিররা আল্লাহর দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে।


প্রশ্নকারী : শেখ সাইফুদ্দীন, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।





প্রশ্ন (৪) : সফরে দুই ওয়াক্তের ছালাত একত্রে দুই-দুই রাক‘আত করে জমা ও ক্বছর করতে হয়। কেউ যদি আশঙ্কা করে যে সে সময় মত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে না, তাহলে মাগরিব ছালাত জামা‘আতে আদায়ের পর এশার দুই রাক‘আত পড়ে জমা করতে পারবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : ‘যে ব্যক্তি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুউওতা ইল্লাবিল্লাহ’ পাঠ করবে, তার যাবতীয় বিপদাপদ দূর করবে। যার সর্বনিম্ন হল দারিদ্র্যতা মোচন করা’ (তিরমিযী, ৩/১৮৬) মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩২) : ‘দেবর মৃত্যু সমতুল্য’ এই হাদীছের তাৎপর্য কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : কোন টাকা বা মূল্যবান বস্তু পাওয়া গেলে কী করা উচিত? অনেকেই বলেন, ফকীরকে বা মসজিদে দিয়ে দিতে। এটি কতটুকু সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : দাড়ি একমুষ্টি রেখে বাকি অংশ কাটা যাবে কি? যেখানে ছহীহ বুখারীর ৫৮৯২ নম্বর হাদীছে এসেছে, ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহ আনহুমা) সূত্রে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের উল্টো করবে- দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে। ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহ আনহুমা) যখন হজ্জ বা ওমরাহ করতেন, তখন তিনি তাঁর দাড়ি মুষ্টি করে ধরতেন এবং মুষ্টির বাইরে যতটুকু বেশি থাকত, তা কেটে ফেলতেন। এছাড়া আরো হাদীছ এসেছে। এই বিষয়ে সঠিক সমাধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : যাকাতের টাকা কি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের (যারা গরীব, বেতনের টাকা দিয়ে চলতে কষ্ট হয়) তাদের দেয়া যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : ইসলামে হিল্লা বিয়ে কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৩) : ‘স্ত্রীকে খুশি করার জন্য এবং যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্ব প্রকাশের জন্য দাড়িতে কলপ ব্যবহার করা যায়’ মর্মে বর্ণিত বর্ণনাটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : বিভিন্ন দল ও গ্রুপের মধ্যে যে মতভেদ বিরাজমান সেক্ষেত্রে একজন মুসলিমের অবস্থান কী হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : মৃত বা জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলী ওমরাহ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : শায়খ ড. রাবী ইবনে হাদী আল মাদখালী সম্পর্কে জানতে চাই। তিনি সালাফী মানহাজ থেকে বের হয়ে গেছেন এমন দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : অনেক মানুষদের দেখা যায় যে, লোকে কী বলবে এই চিন্তা করে হালাল কাজ থেকে দূরে থাকে। লোকে কী বলবে তাই চাচাতো ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করতে সম্মত হয় না ইত্যাদি। এরূপ ভাবা কি শরী‘আত সম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ