বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ অপরাহ্ন
উত্তর : ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলার দর্শনের দিক দিয়ে লোকেরা তিনভাগে বিভক্ত হবে। খাঁটি কাফির, খাঁটি মুমিন এবং মুনাফিক্ব। খাঁটি কাফির কখনই আল্লাহকে দেখতে পাবে না। আল্লাহ বলেছেন, کَلَّاۤ اِنَّہُمۡ عَنۡ رَّبِّہِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّمَحۡجُوۡبُوۡنَ ‘কখনো না, অবশ্যই তারা (কাফিররা) সেদিন তাদের প্রতিপালক (দর্শন) থেকে পর্দাবৃত থাকবে’ (সূরা আল-মুতাফ্ফিফীন : ১৫)। পক্ষান্তরে খাঁটি মুমিনরা ক্বিয়ামত দিবসে ও জান্নাতে আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভ করবে। যেমন তিনি বলেন, ‘সেদিন বহু মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ২২-২৩)। অপরদিকে মুনাফিক্বরা শুধু ক্বিয়ামত দিবসেই আল্লাহ তা‘আলার দর্শন পাবে। এরপর তারা তাঁকে আর দেখতে পাবে না। এটি তাদের জন্য খুবই কষ্টকর হবে। দেখা পাওয়ার পর অন্তরালে চলে যাওয়াটা তাদের জন্য অসম্ভব যন্ত্রণাদায়ক হবে (লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১১৬৬৪৪, ১/২৭৩ পৃ.)।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ক্বিয়ামত দিবসে কাফিররা আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাবে কি-না এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। হিজরী তৃতীয় শতকের পর থেকে এই মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এ সম্পর্কে তিনটি মতামত পাওয়া যায়। (১) কাফিররা কোন অবস্থাতেই আল্লাহকে দেখতে পাবে না। পরবর্তী যুগের অধিকাংশ আলিমের এটিই মত এবং পূর্ববর্তীদের মতামতগুলোও এই মতটিকে সমর্থন করে। (২) ক্বিয়ামত দিবসে হিসাব গ্রহণের সময় আল্লাহ তা‘আলা মুমিনগণ, মুনাফিক্বরা ও কিছু আহলে কিতাবদের সম্মুখে প্রকাশিত হবেন। অতঃপর হিসাব গ্রহণ সমাপ্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিক্বদের অন্তরালে চলে যাবেন। এরপর তারা আর তাঁকে দেখতে পাবে না। (৩) সেদিন কাফিররা ভীতিকর অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলাকে অবহিতকরণ কারী, শাস্তি প্রদানকারী, কষ্টপ্রদান কারী ও আযাব প্রদানকারী রূপে দেখবে। ঠিক যেমন চোর বিচারকের দিকে তাকিয়ে দেখে। অতঃপর তিনি তাদের ভয়ভীতি ও ক্লেশকে বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে তাদের থেকে আড়ালে চলে যাবেন। এটি আবুল হাসান ইবনু সালিম (রাহিমাহুল্লাহ) ও তাঁর অন্যান্য সাথীদের মতামত (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৬/৪৮৬-৪৮৮ পৃ.)।

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, ছাহাবীগণ নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা কি ক্বিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেন, মেঘমুক্ত পুর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর? তাঁরা বললেন, না, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে তেমনিভাবে দেখতে পাবে। ক্বিয়ামতের দিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যে যার উপাসনা করতে সে যেন তার অনুসরণ করে। তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ ত্বাগূতের অনুসরণ করবে। আর বাকী থাকবে শুধু এই উম্মত, তবে তাদের সাথে মুনাফিক্বরাও থাকবে। তাঁদের মাঝে এ সময় আল্লাহ তা‘আলা আগমন করবেন এবং বলবেন, ‘আমি তোমাদের রব’। তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের প্রতিপালক আগমন না করবেন, ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব। আর তাঁর যখন আগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা আগমন করবেন এবং বলবেন, ‘আমি তোমাদের রব’। তারা বলবে, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব’ (ছহীহ বুখারী, হা/৮০৬, ৪৫৮১, ৬৫৭৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২-১৮৩, ৩৪০)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘অবশেষে বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ‘ইবাদতকারীগণ। তাদের সৎ ব্যক্তি ও গুনাহগার সকলেই। তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হবে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে আটকে রেখেছে? অথচ অন্যরা চলে গেছে। তারা বলবে, আমরা একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে শুনেছি যে, যারা যাদের ‘ইবাদত করত তারা যেন ওদের সঙ্গে যায়। আমরা অপেক্ষা করছি আমাদের রবের। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘এরপর মহাক্ষমতাশালী আল্লাহ তাদের কাছে আসবেন। এবার তিনি সে আকৃতিতে আসবেন না, যেভাবে তাঁকে প্রথমে ঈমানদারগণ দেখেছিলেন। এসে তিনি ঘোষণা দেবেন- আমিই তোমাদের রব, সবাই তখন বলে উঠবে, হ্যাঁ আপনিই আমাদের প্রতিপালক’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭৪৩৯-৭৪৪০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩)।

উক্ত হাদীছদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা এই উম্মতের মুমিন ও মুনাফিক্বদের নিকট দু’বার প্রকাশিত হবেন। প্রথমবার অন্য রূপ ধারণ করে আর দ্বিতীয়বার প্রকৃত রূপে। কিছু আলেম এখান থেকে মুনাফিক্বদের দর্শনের কথা প্রমাণ করতে চেয়েছেন। পক্ষান্তরে কাফিরদের দর্শনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৫৬৪৫৫)।  শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কুরআন, ছহীহ হাদীছ ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ইজমা অনুযায়ী বিচার দিবসে ও জান্নাতে মুমিনদের আল্লাহ তা‘আলার দর্শন প্রাপ্তির বিষয়টি সুন্নাত থেকে প্রমাণিত ও সর্বজনবিদিত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সেদিন বহু মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ  : ২২-২৩)।

আর পরকালে ও জান্নাতে মুমিনরা যে আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভ করবে, এ সম্পর্কে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, وَاعْلَمُوْا أَنَّكُمْ لَنْ تَرَوا رَبَّكُمْ حَتَّى تَمُوْتُوْا ‘জেনে রাখো! মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তোমরা (মুমিনরা) তোমাদের রবকে দেখতে পাবে না’ (তাখরীজু কিতাবিস সুন্নাহ, হা/৪২৯; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামি‘, হা/২৯৬৩; ইবনু হাজার, আল-গুনইয়াতু ফী মাসআলাতির রুইয়্যাহ, ১/২৪ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ১/১০০ পৃ.)। পক্ষান্তরে কাফিররা কিন্তু আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে সক্ষম হবে না (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২৪/৪১২ পৃ.)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ সম্পর্কে কোন স্পষ্ট দলীল না থাকাটাই মতপার্থক্যের মূল কারণ। অধিকাংশ আলিম বলেন, ‘কুরআন, ছহীহ হাদীছ ও সালাফে ছালিহীনের আলোচনাতে শুধু মুমিনদের দর্শন লাভই প্রমাণিত হয়েছে। কাফিরদের দর্শন লাভ সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য প্রমাণিত নয়’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৬/৫০২-৫০৩ পৃ.)। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কাফিররা আল্লাহর দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে।


প্রশ্নকারী : শেখ সাইফুদ্দীন, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।





প্রশ্ন (৭) : সানস্ক্রিন ক্রীম সূর্যের ক্ষতিকর আলো থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং এতে ত্বক ফর্সা হওয়ার লেয়ার থাকে। পুরুষের জন্য এ ধরনের ক্রীম ব্যবহার করা কি বৈধ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : পিতা-মাতার জন্য কুরআনে বর্ণিত দু‘আ ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি ছগীর’ রয়েছে। কিন্তু মৃত আত্মীয়-স্বজন বা মৃত কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য আরবীতে কোন দু‘আ আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদের নিকট থেকে পরীক্ষার ফী বাবদ যে অর্থ গ্রহণ করা হয়ে থাকে, সেই অর্থ কি শিক্ষকদের মধ্যে বণ্টন করা যাবে? উল্লেখ্য, শিক্ষকগণ নির্ধারিত হারে বেতন পেয়ে থাকেন। - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন করার সঠিক নিয়ম কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে আঙ্গুলের নখ বড় করার বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩১) : প্রচলিত চার মাযহাব কি স্ব স্ব ইমাম সৃষ্টি করেছেন, না-কি তাঁদের মৃত্যুর পরে তৈরি হয়েছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : মক্কা বা মদীনায় কেউ মারা গেলে ক্বিয়ামতের দিন নিরাপদ অবস্থায় উঠবে এবং আমার শাফা‘আত তার জন্য ওয়াজিব হবে যাবে (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৬১০৪)। উক্ত বর্ণনা কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : জনৈক আলেম বলেছেন যে, যঈফ হাদীছ মানা যাবে যদি তা সমাজের উপকার হয়। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৯) : জামা‘আতে ছালাত আদায়ের সময় ইমাম ও মুক্তাদী কখন কাতারে দাঁড়াবে এবং ইক্বামত কখন দিতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম কাকে বস্ত্র পরিধান করানো হবে? কেউ কেউ বলে যে, ‘বস্ত্র পরিধান করেই রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিয়ামতের দিন উঠবেন’, একথা কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : হায়েযগ্রস্ত নারী ক্বদরের রাতগুলো কিভাবে জাগবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : দাঁত সাজানো কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ