শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন
উত্তর : স্ত্রী ও দুই কন্যার নির্ধারিত অংশ দেয়ার পর অবশিষ্ট অংশে ‘আছাবাহ’ হিসাবে ভাই ও বোনেরা অংশীদার হবে। কন্যার অংশ : এক্ষেত্রে মেয়েরা মোট পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ (২/৩) পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, فَاِنۡ کُنَّ نِسَآءً فَوۡقَ اثۡنَتَیۡنِ فَلَہُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَکَ ۚ وَ اِنۡ کَانَتۡ وَاحِدَۃً  فَلَہَا النِّصۡفُ ‘কিন্তু দু’য়ের অধিক কন্যা থাকলে, তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ, আর মাত্র একটি কন্যা থাকলে, তার জন্য অর্ধাংশ’ (সূরা আন-নিসা : ১১)। অর্থাৎ কোন ছেলে যদি না থাকে, তাহলে মালের দুই-তৃতীয়াংশ (মালকে তিনভাগ করে দু’ভাগ) দুই অথবা ততোধিক মেয়েদেরকে দেয়া হবে। আর যদি মেয়ে কেবল একজনই হয়, তাহলে সে অর্ধাংশ (দুই ভাগের এক ভাগ) পাবে।

জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, সা‘দ ইবনু রাবী‘ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর স্ত্রী সা‘দের ঔরসজাত তাঁর দুই কন্যাসহ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এরা সা‘দ ইবনু রাবী‘র দুই মেয়ে। এদের বাবা উহুদের যুদ্ধে আপনার সাথে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন। এদের সমস্ত ধন-সম্পদ এদের চাচা নিয়ে নিয়েছে, এদের জন্য সামান্য কিছুও রাখেনি। এদের কোন ধন-সম্পদ না থাকলে এদের বিয়েও তো হবে না’। তিনি বললেন, ‘এ বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলাই সমাধান করে দিবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মীরাছ বণ্টন বিষয়ক আয়াত অবতীর্ণ হয়। তাদের চাচাকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডেকে এনে বললেন, সা‘দের দুই মেয়েকে দুই-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি এবং তাদের মাকে এক-অষ্টমাংশ সম্পত্তি দিয়ে দাও, তারপর যেটুকু অবশিষ্ট থাকবে তা তোমার’ (তিরমিযী, হা/২০৯২; আবূ দাঊদ, হা/২৮৯১; ইবনু মাজাহ, হা/২৭২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৮৪০, সনদ হাসান)। মোদ্দাকথা হল, দু’জন বা দু’য়ের অধিক মেয়ে হলে, মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে দুই-তৃতীয়াংশই পাবে। অবশিষ্ট মাল ‘আছাবাহ’ হিসাবে (সবচেয়ে নিকটাত্মীয় উত্তরাধিকারী) জাতীয় ওয়ারিছদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

স্ত্রীর অংশ : সন্তানের উপস্থিতিতে স্ত্রী পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ (১/৮) পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমাদের সন্তান না থাকলে তাদের (অর্থাৎ স্ত্রীদের) জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ, আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের (অর্থাৎ স্ত্রীদের) জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ। তোমরা যা অছিয়ত কর তা কার্যকর ও ঋণ পরিশোধ করার পর’ (সূরা আন-নিসা : ১২)। অর্থাৎ যদি স্বামী মারা যায় এবং তার কোন সন্তান না থাকে, তবে ঋণ পরিশোধ ও অছিয়ত কার্যকর করার পর স্ত্রী মোট সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে। আর যদি মৃত স্বামীর সন্তান থাকে, এ স্ত্রীর গর্ভজাত হোক কিংবা অন্য স্ত্রীর, তবে ঋণ পরিশোধ ও অছিয়ত কার্যকর করার পর স্ত্রী এক-অষ্টমাংশ পাবে। স্ত্রী একাধিক হলেও উপরিউক্ত বিবরণ অনুযায়ী এক অংশ সকল স্ত্রীর মধ্যে সমহারে বণ্টন করা হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক স্ত্রীই যে এক-চতুর্থাংশ কিংবা এক-অষ্টমাংশ পাবে তা নয়, বরং সবাই মিলে এক-চতুর্থাংশ কিংবা এক-অষ্টমাংশে অংশীদার হবে। স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা তাদের অন্যান্য ওয়ারিছের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

উল্লেখ্য, প্রথমে দেখা উচিত যে, স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করা হয়েছে কি-না, যদি না হয়, তবে অন্যান্য ঋণের মতই প্রথমে মোট পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে মোহরানা পরিশোধ করার পরে ওয়ারিছদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। মোহরানা পরিশোধ করার পর যদি মৃত স্বামীর সম্পত্তি অবশিষ্ট না থাকে, তবে অন্যান্য ঋণের মত সম্পূর্ণ সম্পত্তি মোহরানা বাবদ স্ত্রীকে সমর্পণ করা হবে এবং কোন ওয়ারিছই অংশ পাবে না। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘শর্তসমূহের মধ্যে যা পূর্ণ করার সর্বাধিক দাবী রাখে তা হল- সেই শর্ত যার দ্বারা তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছ’ (বুখারী, হা/২৭২১, ৫১৫১; মুসলিম, হা/১৪১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩০৪; উছায়মীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১৮তম খণ্ড, পৃ. ৩১; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৮১; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৯তম খণ্ড, পৃ. ৫৬)।

অতঃপর অবশিষ্ট সম্পত্তি ‘আছাবাহ’ হিসাবে ভাই ও বোনেরা পাবে এবং বোনেরা ভাইদের অর্ধেক পাবে (ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৩৫৯৭৬৪)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যদি ভাই-বোন উভয়ই থাকে, তবে এক পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমান। তোমরা পথভ্রষ্ট হবে এ আশঙ্কায় আল্লাহ তোমাদেরকে পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছেন এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সবিশেষ অবহিত’ (সূরা আন-নিসা : ১৭৬)।


প্রশ্নকারী : মিরাজুল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ, ভারত।





প্রশ্ন (২৩) : সুস্থ সক্ষম পিতা-মাতার জন্য বদলি ওমরাহ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৩): ফিতরা পরিশোধ করার সময় পঠিতব্য বিশেষ কোন দু‘আ আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : মাহরাম ছাড়া কোন মহিলা হজ্জ করতে যেতে পারবে কি? বুদ্ধিমান বালক কি মাহরাম হতে পারে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : আমার মা অসহায়। তাকে দেখার কেউ নেই। অন্যদিকে আমার স্বামী স্বাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও মাকে সহযোগিতা করতে চায় না। আমি কি স্বামীর সংসার থেকে গোপনে আমার মাকে সহযোগিতা করতে পারব? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : ক্বাযা ছালাতের সুন্নাত আদায় করতে হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৫) : আল্লাহ তা‘আলার বাণী- ‘নিশ্চয় আপনি যাকে ভালোবাসেন ইচ্ছে করলেই তাকে হেদায়াত দিতে পারবেন না’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ৫৬) এবং তাঁর বাণী: ‘নিশ্চয় আপনি সরল পথের দিকে হেদায়াত করেন’ (সূরা আশ-শূরা : ৫২)। উক্ত আয়াতদ্বয়ের মাঝে সমন্বয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : অপবিত্র অবস্থায় অসুস্থতার কারণে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করলে পরে গোসল করার সময় কি ফরয গোসলের নিয়ত করতে হবে? কনকনে ঠাণ্ডার কারণে ফরয গোসলে কষ্ট বোধ হলে শুধু ওযূ করে ছালাত আদায় করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : জামা‘আতের এক রাক‘আত ছুটে গেলে ইমামের সাথে শেষ রাক‘আতে তাওয়াররুক করতে হবে কি এবং উঠে রাফ‘ঊল ইয়াদাইন করতে হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করেছেন কি-না? দলীলসহ জানতে চাই। - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪৫) : সুলায়মান (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রী কতজন ছিলেন? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : ক্বিয়ামতের মাঠে কুরবানীর পশুর লোম, শিং ও ক্ষুর  উপস্থিত হবে। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩১) : ইসলামিক বিধান অনুসারে মৃত মহিলা তার পিতা হতে প্রাপ্ত সম্পত্তির হকদার কি শুধু সন্তানেরা, নাকি তার স্বামীও? যদি স্বামী হকদার হয় এবং পরবর্তীতে বিয়ে করে তবে প্রাপ্ত সে সম্পত্তি কি তার দ্বিতীয় স্ত্রী বা তার সন্তানেরা পাবে? নাকি শুধু তার প্রথম স্ত্রীর সন্তানেরা পাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ