বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২১ অপরাহ্ন
উত্তর : প্রথমতঃ ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলিম শাসকের হাতে মুসলিমদের বায়‘আত করা অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

وَإِنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِيْ وَسَيَكُوْنُ خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُوْنَ‏‏ قَالُوْا فَمَا تَأْمُرُنَا قَالَ فُوْا بِبَيْعَةِ الْأَوَّلِ فَالْأَوَّلِ أَعْطُوْهُمْ حَقَّهُمْ فَإِنَّ اللهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا اسْتَرْعَاهُمْ‏‏.‏

‘আমার পরে কোনও নবী‎র আগমন ঘটবে না। বরং খলীফাগণ হবেন এবং তাঁরা সংখ্যায় অনেক হবেন’। তখন ছাহাবীগণ বললেন, ‘তাহলে আপনি (এ ব্যাপারে) আমাদেরকে কী নির্দেশ দিচ্ছেন’? তিনি বললেন, ‘যার হাতে প্রথম বায়‘আত বা আনুগত্যের শপথ করবে, তাঁরই আনুগত্য করবে এবং তাদেরকে তাদের হক প্রদান করবে। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন ঐ সকল বিষয়ে, যার দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৫৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪২; ইবনু মাজাহ, হা/২৮৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৯৬০)। অন্যত্রে ফিতনা ও বিশৃঙ্খলার যুগ সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে তিনি বলেন,

‏تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِيْنَ وَإِمَامَهُمْ فَقُلْتُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا إِمَامٌ قَالَ‏ فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ عَلَى أَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ.‏

‘তখন তোমরা মুসলিমদের দল ও তাঁদের ইমামকে আঁকড়ে ধরবে’। আমি বললাম, ‘যদি মুসলিমদের কোন দল ও ইমাম না থাকে’? তিনি বলেন, তখন তুমি তাদের সকল দল-উপদল ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং আমৃত্যু বৃক্ষমূল দাঁতে আঁকড়ে ধরে হলেও দ্বীনের উপর অটল থাকবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৬০৬, ৩৬০৭, ৭০৮৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৭; আবূ দাঊদ, হা/৪২৪৪; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৭৯, ৩৯৮১)।

উপরিউক্ত হাদীছে ‘ইমাম’ বলতে ইসলামী খলীফা বা শাসককে বুঝানো হয়েছে  (সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৭৩৯)। ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইসলামী খলীফা বা আমীরুল মুমিনীন নির্বাচিত হলে সেদিনই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে (এবং আনুগত্যের বায়‘আত নিতে হবে)’ (আল-আহকামুস সুলতানিয়্যা, পৃ. ২০-২৩)।

দ্বিতীয়তঃ ইসলামী খলীফা বা মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান ব্যতীত অন্য কোন সাধারণ ইসলামী সংগঠনের নেতা বা আমীরের হাতে বায়‘আত করা নিষিদ্ধ। যেমন শায়খ ছালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিমদের রাষ্ট্র প্রধান ব্যতীত অন্য কারো হাতে বায়‘আত করা যাবে না। বিভিন্ন সংগঠনের আমীরের হাতে বায়‘আত করা বিদ‘আত। এটিই বিভক্তির মূল কারণ। একই শহর ও দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের উপর অপরিহার্য যে, তাঁদের বায়‘আত একই শাসকের জন্য নির্দিষ্ট হবে। একাধিক বায়‘আত জায়েয নয়’ (আল-মুনতাক্বা ফাতাওয়া শায়খ ছালিহ আল-ফাওযান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৬৭)।

শায়খ ছালেহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘...তবে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান বা মুসলিম দেশের সরকার ছাড়া অন্য কারো হাতে বায়‘আত করা বৈধ নয়। কেননা আমরা যদি প্রত্যেকের পৃথক পৃথক বায়‘আতের কথা বলি, তাহলে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে যাবে এবং প্রত্যেকটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত আমীর সৃষ্টি হবে। মূলত এটিই হচ্ছে বিভক্তি...’ (লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৪১-১৪৩, প্রশ্ন নং-৮৭৫ এবং প্রশ্ন নং-২৭, ৫৪, ১৬২ দ্র.)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘সফরে থাকা অবস্থায় আমীর বা দলনেতা নির্বাচন করার দলীল পাওয়া যায়। কিন্তু মুক্বীম অবস্থায় নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষের আমীর নির্বাচনের প্রমাণে কোন দলীল পাওয়া যায় না। ... তাই মুক্বীম অবস্থায় আমীর হিসাবে কারো হাতে বায়‘আত করে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের মত তার অনুসরণ করা বিদ‘আত’ (শারহু ছহীহিল বুখারী, পৃ. ৪৮৮-৪৮৯)।

সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘মুক্বীম অর্থাৎ শহর বা দেশে অবস্থান কালে রাষ্ট্রপ্রধান বা তাঁর নিযুক্ত কোন ব্যক্তিই আমীর হবে’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৩তম খণ্ড, পৃ. ৪০২-৪০৩)। শায়খ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, البيعة لا تكون إلا لولي أمر المسلمين ‘মুসলিমদের রাষ্ট্রপ্রধান ব্যতীত অন্য কারো হাতে বায়‘আত করা যাবে না’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৩২০)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘শারহু ছহীহিল মুসলিম’-এর মধ্যে বলেন,

وما ورد في الأحاديث من ذكر البيعة فالمراد بيعة الإمام،...فهذا كله في بيعة الإمام ولا شك

‘হাদীছসমূহের মধ্যে বায়‘আত সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তার অর্থ ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বায়‘আত করা...। নিঃসন্দেহে সব হাদীছই মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের বায়‘আতের সাথে সম্পর্কিত (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৪, ১৪৫১, ১৮৫৩-এর ব্যাখ্যা দ্র.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৩২০)। এ মর্মে শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কোন দল কর্তৃক কাউকে আমীর বানিয়ে তার অনুসরণ করা মারাত্মক ভুল। ওলামায়ে কিরামের উচিত জনসম্মুখে প্রকৃত বাস্তবতা তুলে ধরা। প্রত্যেকটি জামা‘আত ও সংগঠনের সাথে আলোচনা করা এবং সবাইকে আল্লাহ নির্দেশিত ও রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদর্শিত সরল পথে চলার আহ্বান করা। যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে এবং ব্যক্তিস্বার্থে বা অন্য কোন কারণে নিজের একগুঁয়েমি বজায় রাখবে, তার বিষয়টি জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেয়া এবং তাদেরকে তার থেকে সতর্ক করা অপরিহার্য। তাহলে যারা তার সম্পর্কে জানে না, তারা তার থেকে দূরে থাকতে পারবে। ফলে সে কাউকে আল্লাহ নির্দেশিত সরল পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না’ (ইবনু বায, মাজমূউ ফাতাওয়া, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৩৬-১৩৭)।


প্রশ্নকারী : কামরুল ইসলাম, ঢাকা।





প্রশ্ন (৩৪) : মসজিদের বিল্ডিংয়ের যেকোন তলায় পরিবারসহ ইমামের থাকার ব্যবস্থা করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : কিছু বক্তা বলছেন, অবুঝ বাচ্চাদের শরীরে তা‘বীয বেঁধে দেয়া যাবে। জনৈক ছাহাবী বাচ্চাদের তা‘বীয দিতেন। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৭) : মহিলার পেটে বাচ্চা থাকলে কি ত্বালাক্ব পতিত হয়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : হজ্জের সময় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করতে হয় কী কারণে? সেখানে কি শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়েছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : মসজিদ কে কি masque বলা যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৬) : কুরআন তেলাওয়াতের পরে ‘ছাদাক্বাল্লা-হুল ‘আযীম’ বলা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : বিভিন্ন ভাষায় রচিত গল্প, নাটক, উপন্যাসের বই বিক্রি করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : ‘চিরস্থায়ী জাহান্নামী’-এর অর্থ কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : ‘আহলেহাদীছ’ নামে কোন মসজিদের নামকরণ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৯) : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পাঠ করতে ভুলে যাবে, সে জান্নাতের পথ ভুলে যাবে’ মর্মে বর্ণনাটি কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : হজ্জ বা উমরাহ পালনোত্তর নারীদের চুল কাটার পদ্ধতি কেমন? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩১) : দুই সিজদার মাঝখানে যে দু‘আ পড়া হয় সেটি ওয়াজিব, না-কি সুন্নাত? এই দু‘আ পড়েছি নাকি পড়িনি এমন সন্দেহ হলে সাহু সিজদা দিতে হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ