সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০২:৪১ অপরাহ্ন
উত্তর : বায়ে মুয়াজ্জাল (بيع المؤجل) বলতে বাকিতে বা ধারে ক্রয়-বিক্রয় করাকে বুঝায়। অর্থাৎ নগদে এক দাম আর বাকীতে আরেক দাম। এরূপ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ। হাদীছে এসেছে, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ইহুদীর নিকট হতে নির্দিষ্ট মেয়াদে মূল্য পরিশোধের শর্তে অর্থাৎ ধারে খাদ্য ক্রয় করেন এবং তার নিকট নিজের লোহার বর্ম বন্ধক রাখেন (ছহীহ বুখারী, হা/২০৬৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬০৩)।

ঋণ বা কর্য পরিশোধ করার পদ্ধতি দু’টি। ১. নির্দিষ্ট দিনে এক সঙ্গে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা, যা উক্ত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় এবং ২. নির্ধারিত মেয়াদে নির্দিষ্ট সংখ্যক কিস্তিতে উক্ত ঋণ পরিশোধ করা, যা নিম্নের হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, বারীরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) আমার কাছে এসে বলল, আমি আমার মুক্তিপণ হিসাবে মালিক পক্ষের সাথে নয় উক্বিয়াতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি (১ উকিয়া =৪০ দিরহাম) এবং কিস্তি (Installment) স্বরূপ প্রতি বছর এক উক্বিয়া করে দেয়ার অঙ্গীকার করেছি অর্থাৎ নয় বছরে নয়টা কিস্তি। অতএব আপনি (এ ব্যাপারে) আমাকে সাহায্য করুন... (ছহীহ বুখারী, হা/২১৬৮, ২৫৬৩, ২৭২৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫০৪; আবূ দাঊদ, হা/৩৯৩০)।

তবে বাকিতে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে কি না? মানে একই জিনিস নগদে ১০০ টাকায় আর ধারে  ১১০ টাকায় বিক্রয় করা যাবে কি-না? বর্তমানে সিংহভাগ কোম্পানী বিশেষ করে মোটরযান কোম্পানীগুলোতে এই পদ্ধতি চালু রয়েছে। এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে কিছুটা মতভেদ রয়েছে। কিছু সংখ্যক আলেম এটাকে নাজায়েয বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ আলেম এটাকে জায়েয বলেছেন, যার মধ্যে ইসলামের চার ইমাম রয়েছেন। হাম্বালী মাযহাব (ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যা, ২৯তম খণ্ড, পৃ. ৪৯৯), শাফিঈ মাযহাব (আল-ওয়াজিয, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৫), মালিকী মাযহাব (বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১০৮), হানাফী মাযহাব (বাদাঈ আস-সানাঈ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৮৭)। তাদের দলীল হল, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ...

‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা’ (সূরা আন-নিসা : ২৯)। এ আয়াত সাধারণভাবে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতিক্রমে কম- বেশিকে জায়েয করেছে। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত,

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَهُ أَنْ يُجَهِّزَ جَيْشًا فَنَفِدَتْ الْإِبِلُ فَأَمَرَهُ أَنْ يَأْخُذَ فِيْ قِلَاصِ الصَّدَقَةِ فَكَانَ يَأْخُذُ الْبَعِيْرَ بِالْبَعِيْرَيْنِ إِلَى إِبِلِ الصَّدَقَةِ.

‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে একটি অভিযানের জন্য সৈন্য প্রস্তুত করার নির্দেশ দিলেন। সৈন্য প্রস্তুতে উটের অভাব দেখা দিল। তিনি তাকে যাকাতের উট প্রাপ্তি সাপেক্ষে ধার নিতে বললেন। তদনুযায়ী তিনি যাকাতের উট প্রাপ্তি সাপেক্ষে দু’টি করে উটের বিনিময়ে একটি করে উট গ্রহণ করলেন’ (আবূ দাঊদ, হা/৩৩৫৭, শুয়াইব আল-আরনাউত হাদীছটিকে হাসান বলেছেন; ইরওয়াউল গালীল, হা/১৩৫৮-এর আলোচনা দ্র.; ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১৯তম খণ্ড, পৃ. ১০৭; মাজমূঊ নাবাবী, ৯ম খণ্ড, পৃ. ৩৯৯)।

এ প্রসঙ্গে শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)  বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতিতে নগদের তুলনায় বাকিতে বেশি জায়েয আছে’ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৩১; ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৩৯৭৩)। শায়খ উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

ذلك جائز، لا بأس به؛ لدخوله في عموم قوله تعالي ..... وهذا المشتري عرضت عليه السلعة بثمنين: ثمن النقد، والثمن المؤجل، و لنفرض أن ثمن النقد مائة، وأن المؤجل مائة و خمسون، فأخذ بالمؤجل في نفس المجلس، و ذهب بالسلعة، فثبت في ذمته مئة وخمسون علي وجه التحديد و التعين، فهذا بيع لا بأس به، لأن المشتري خير بين هذا، أو هذا

‘এটি বৈধ, এতে কোন সমস্যা নেই। কেননা এটি সাধারণ বাণিজ্যের অন্তর্ভুক্ত, যেমন আল্লাহ বলেন, আল্লাহ্‌ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৭৫)। অন্যত্র বলেন, হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নির্ধারিত সময়ের জন্য পরস্পর ঋণের লেনদেন করবে, তখন তা লিখে রাখবে (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৮২)। এখানে ক্রেতাকে দুই ধরনের মূল্যে পণ্যটি সরবরাহ করা হচ্ছে- (ক) নগদ মূল্যে (খ) ধার বা বাকিতে। আমরা ধরে নিচ্ছি, নগদ মূল্য ১০০ টাকা, আর ধারের মূল্য ১৫০ টাকা। ঐ বৈঠকেই ক্রেতা ধারের মূল্য ১৫০ টাকাতে ক্রয় করে পণ্যটি নিয়ে চলে গেলেন ৷ অতএব এখন তার দায়িত্বে নির্ধারিত মেয়াদে ১৫০ টাকা ঋণ প্রতিষ্ঠিত হল ৷ এ জাতীয় ক্রয়-বিক্রয়ে কোন সমস্যা নেই। কেননা এখানে ক্রেতাকে ১০০ ও ১৫০ টাকার মধ্যে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ র্দাব, ৯/৫৭ পৃঃ)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া বোর্ডও উক্ত ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ বলে ফৎওয়া প্রদান করেছে (ফাতাওয়া লাজনাহ আদ-দায়িমাহ্, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১৫৬)। উল্লেখ্য যে, এটা কেবল ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তৃতীয়পক্ষ বা মধ্যসত্ত্বভোগী কেউ এখানে সম্পৃক্ত হতে পারবে না। যেটা বর্তমানে ব্যাংক, বীমা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করছে। এটা সূদের অন্তর্ভুক্ত (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৮৮)। আল্লাহই অধিক অবগত।


প্রশ্নকারী : আল-আমীন, নওগাঁ।





প্রশ্ন (৩৩) : কারো সাথে আলাপ করার পর বিদায়ের সময় ‘আল্লাহ হাফেয’ বলা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : কুরআন নিয়ে শপথ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩) : আমার এলাকার জনৈক ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতও আদায় করেন আবার মসজিদের বাইরে গিয়ে গীবতও করেন। তার ছালাত হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : ‘তাক্বিয়া’ করা কোন্ ক্ষেত্রে হারাম? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : ত্বালাক্বপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্যের কাছে রেখে হালালা করা কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : কিছু সংখ্যক কাফির শত্রুকে হত্যা করার জন্য তথাকথিত শহীদী হামলার নামে নিজেকে বিস্ফোরিত করার বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের কান্নার কারণে মৃত ব্যক্তিকে কবরে শাস্তি দেয়া হয় কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩) : মেয়েদের ক্ষেত্রে আপন দাদার আপন ভাই ও ছেলেদেরে ক্ষেত্রে আপন দাদার আপন বোন কি মাহরাম? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৬) : মুছল্লীদের সুবিধার্থে ও তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে শুক্রবারে কোন সময়কে ইলম শিখার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট করে নিলে বিদ‘আত হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪৬) : ঈদ মাঠে মিম্বার নিয়ে যাওয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : জনৈকা মেয়ে সালাফী মানহাজের অনুসারী। কিন্তু পিতা-মাতা পীরের মুরীদ এবং প্রকাশ্য শিরকের সাথে জড়িত। তারা এমন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চায় যে ছালাতও আদায় করে না, তার মধ্যে দ্বীনের কিছুই নেই। শুধু টাকা-পয়সার জন্য বিয়ে দিতে চায়। মেয়েটি এমন ছেলের সাথে বিবাহে রাযী নয়। অন্যদিকে মেয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২১) : জনৈক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘ঈমানকে মাখলূক বললে কাফির হবে’। এ ব্যাপারে আমাদের আক্বীদা কেমন হবে? অন্তরের বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়ন এগুলো কী মাখলূক? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কী হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ