উত্তর : শী‘আরা যে ‘তাক্বিয়া’ নীতি অবলম্বন করে তা হারাম। তাদের নিকট ‘তাক্বীয়া’ (التقية)-এর অর্থ হল- নির্ভেজাল মিথ্যা অথবা সুস্পষ্ট মুনাফিকী (কপটতা)। অর্থাৎ মুখে এক আর অন্তরে আরেকটি, যার ভিতরের অবস্থা বাহ্যিক প্রকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ‘তাক্বিয়া’ চরম গোপনীয়তা রক্ষা করার নীতি। শী‘আরা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের প্রতি ভয়ানক শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। কিন্তু বাহ্যিক আচরণে সেটা প্রকাশ করে না। আর এটাকেই তারা তাক্বীয়া বলে থাকে। শী‘আদের নিকট তাক্বীয়া দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিরুদ্ধে শত্রুতা করার জন্যই তারা উক্ত নীতি আবিষ্কার করেছে।
তাক্বিয়ার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে শী‘আরা অনেক মিথ্যা ও উদ্ভট কথা সমাজে চালু করেছে। যেমন- আবূ ‘আব্দিল্লাহ বলেন, ‘হে আবূ ওমর! নিশ্চয় দ্বীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাক্বিয়ার অন্তর্ভুক্ত, যার ‘তাক্বিয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর মদ ও মোজার উপর মাসাহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যেই ‘তাক্বিয়া’ আছে’ (উছূলুল কাফী, পৃ. ৪৮২)। আবূ জা‘ফর বলেন, ‘তাক্বিয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাক্বিয়া’ নেই, তার ঈমান নেই’ (উছূলুল কাফী, পৃ. ৪৮৪)। আবূ আব্দিল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাক্বিয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ যার ‘তাক্বিয়া’ নেই, তার ঈমান নেই’ (উছূলুল কাফী, পৃ. ৪৮৩)। আবূ আব্দিল্লাহ বলেন, ‘আমার পিতা বলতেন, ‘তাক্বিয়া’র চেয়ে আমার চক্ষু অধিক শীতলকারী বস্তু আর কী হতে পারে! নিশ্চয় ‘তাক্বিয়া’ হল মুমিনের জান্নাত’ (উছূলুল কাফী, পৃ. ৪৮৪)।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তাক্বিয়া মুনাফিকের নিদর্শনসমূহের অন্যতম। বস্তুত এটাই প্রকৃত নিফাক বা দ্বিচারিতা’ (ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ২৬৩)। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তারা তাদের মুখে যা বলে, তা তাদের অন্তরসমূহে নেই। আর তারা যা গোপন করে সে সম্পর্কে আল্লাহ অধিক অবগত’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৬৭)। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘চারটি (দোষ) যার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে, সে খাঁটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে এ দোষগুলোর একটি বর্তমান রয়েছে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকীর একটি স্বভাব থেকে যায়। এর মধ্যে একটি হল মিথ্যা বলা’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৫৮, ১১৩)।
উল্লেখ্য যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক সত্য গোপন করা যায়। যেমন আল্লাহ বলেন,
لَا یَتَّخِذِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الۡکٰفِرِیۡنَ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَلَیۡسَ مِنَ اللّٰہِ فِیۡ شَیۡءٍ اِلَّاۤ اَنۡ تَتَّقُوۡا مِنۡہُمۡ تُقٰىۃً ؕ وَ یُحَذِّرُکُمُ اللّٰہُ نَفۡسَہٗ ؕ وَ اِلَی اللّٰہِ الۡمَصِیۡرُ
‘মুমিনগণ যেন মুমিনদেরকে ছাড়া অবিশ্বাসী-কাফেরদেরকে অভিভাবক বা অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এরূপ করবে, তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের কাছ থেকে কোন ভয়ের আশঙ্কা কর (তাহলে আত্মরক্ষার জন্য বৈধ কৌশল অবলম্বন করতে পার)। আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন (সূরা আলে ‘ইমরান : ২৮)।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ লোকদেরকে অনুমতি দেন, যারা কোন শহরে কোন সময় অবিশ্বাসীদের অনিষ্ট হতে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে সাময়িকভাবে তাদের সঙ্গে মৌখিক বন্ধুত্ব স্থাপন করে কিন্তু তাদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা রাখে না। আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘কোন কোন গোত্রের সাথে আমরা প্রশস্ত বদনে মিলিত হই, কিন্তু আমাদের অন্তর তাদের প্রতি অভিশাপ দেয়। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘শুধু মুখে বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে হবে, কিন্তু কাজে-কর্মে এরূপ অবস্থাতেও কখনও তাদের সহযোগিতা করা যাবে না’ (তাফসীর ইবনু কাছীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০; মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১৮৬-১৮৭)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘কেউ বিশ্বাস স্থাপন করার পরে আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর ক্রোধ এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি, তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরী করতে বাধ্য করা হয়েছে, অথচ তার চিত্ত ঈমানে অবিচল’ (সূরা আন-নাহল : ১০৬)।
তবে উক্ত আয়াতের অর্থ এই নয় যে, প্রাণ বাঁচানোর জন্য কুফরী কথা বলা বাঞ্ছনীয়। বরং এটি নিছক একটি ‘রুখছাত’ তথা সুবিধা দান ছাড়া আর অন্য কিছুই নয়। যদি অন্তরে ঈমান অক্ষুণ্ণ রেখে মানুষ বাধ্য হয়ে এ ধরনের কথা বলে, তাহলে তাকে কোন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে না।
প্রশ্নকারী : রূহুল আমীন, ফরীদপুর।