উত্তর : হেজবতু তওহীদ একটি ভ্রান্ত ফের্কা। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি করোটিয়া, টাঙ্গাইলের পন্নী পরিবারে ১৯২৫ সনের ১১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার।
এই ফের্কার প্রধান টার্গেট এবং সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলেন সকল আলেম সমাজ। তাদের সকল বক্তব্য ও লেখনির মূল কথা হল- আলেম সমাজই বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ লোক। এরাই ইসলামকে বিকৃত করেছে। এই আলেম সমাজের হাত থেকে রক্ষার জন্য ‘এমামুয যামান’ (পন্নী) এর আনুগত্য করতে হবে। তারা যুবতী মেয়েদেরকে তাদের প্রচার কাজে ব্যবহার করে থাকে। নিম্নে তাদের বিভিন্ন ভ্রান্ত বিশ্বাস উল্লেখ করা হল-
(ক) তারা মনে করে, মানুষের ভিতরে আছে আল্লাহ্র রূহ, আল্লাহর আত্মা, এজন্য মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব (আসুন-সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১১)। (খ) ‘দ্বীনের মূলনীতি হল জেহাদ ও কেতাল (সংগ্রাম ও সশস্ত্র সংগ্রাম)। এই দুই মূলনীতি যদি মূলনীতি হিসাবে না থাকে তবে বাকি আর যা কিছু আছে সবই বৃথা ও অর্থহীন’ (এসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃ. ২৯)। (গ) ছালাত হচ্ছে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করার ট্রেনিং কোর্স (প্রাগুক্ত)। (ঘ) মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রেসালাত পূর্ণ করতে পারেননি (আকিদা, পৃ. ১২)। (ঙ) তারা মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দাওয়াতকে সশস্ত্র সংগ্রাম হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। তাদের ব্যাখ্যানুযায়ী নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন সশস্ত্র যোদ্ধা ছিলেন এবং একদল সশস্ত্র যোদ্ধা বাহিনী তৈরি করেছেন। এমনকি এই সশস্ত্র সংগ্রামকে তারা সুন্নাহ হিসাবে আখ্যা দিয়েছে (প্রাগুক্ত, পৃ. ১২-১৩)। (চ) তারা বর্তমানে অনুসরণীয় ইসলামকে অস্বীকার করে বলে, ‘বর্তমানে সারা দুনিয়ায় এসলাম হিসাবে যে ধর্মটি চালু আছে সেটি আল্লাহর দেয়া প্রকৃত এসলাম নয়, বরং প্রকৃত এসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত (আল্লাহ্র মো‘জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ, ১০)। (ছ) তারা বলে, প্রকৃত ইসলামকে তাদের ইমাম মু‘জেযার মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। ‘গত ২ ফেব্রুয়ারী, ২০০৮ তারিখে হেযবুত তওহীদ ও তাঁর এমামকে সত্যায়ন করার জন্য আল্লাহ নিজে ১০ মিনিট ৯ সেকেন্ডের মধ্যে অন্তত আটটি মো‘জেজা সংঘটিত কোরলেন’ (আল্লাহ্র মো‘জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ১০-১৪)। (জ) তারা মনে করে, আল্লাহ সত্যায়ন কোরেছেন যে, আমাদের এমামুয্যামান তাঁরই মনোনীত সত্য এমাম। হেযবুত তওহীদ যেমন হক্ব, তেমনি তাঁর এমামও হক্ব’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫)। (ঝ) তারা তাদের ইমামের বক্তব্যকে সরাসরি আল্লাহ্র কথা বলে দাবি করে (প্রাগুক্ত, পৃ. ২৫-২৬)। (ঞ) তারা তাদের ইমামের বক্তব্যকে কুরআনের সাথে তুলনা করে (প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৪)। (ট) তারা দাবি করে যে, হেযবুত তওহীদের জনৈক ভক্ত আল্লাহকে দেখেছেন (প্রাগুক্ত, পৃ. ৮৬)। (ঠ) তারা দাজ্জাল সংক্রান্ত হাদীছগুলোকে রূপক অর্থে গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ ফ-এর সুন্নাতকে অস্বীকার করে থাকে (প্রাগুক্ত, পৃ. ৬, ১১)। (ড) তারা ইমাম মাহদী-এর আগমনকে অস্বীকার করে (প্রাগুক্ত, পৃ. ১২)।
উক্ত আক্বীদাসমূহ সবই ভ্রান্ত। যেগুলো ইসলামের অপব্যাখ্যা ও মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তার বর্হিপ্রকাশ মাত্র। যা সালাফে ছালেহীনের বুঝের বিপরীত বুঝ। তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে ইসলামকে বিকৃত করেছে। সুতরাং হেযবুত তওহীদের শয়তানী প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকা প্রতিটি মসুলিমের ঈমানী দায়িত্ব।
প্রশ্নকারী : হাফিযুর রহমান, দিনাজপুর।