সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০২:২৯ অপরাহ্ন

ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায়

মূল : মুহাম্মাদ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদক : আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ*


(৯ম কিস্তি)

দ্বিতীয় বিষয় : এমন কাজ হতে বিরত থাকা যেগুলো ছালাতে খুশূ‘-একাগ্রতা ও বিনয় আনয়নে বাঁধা দেয় ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং যেগুলো ছালাতে বিনয় ও একাগ্রতা বিনষ্ট করে।

(১৯) যে সকল বিষয় একজন মুছল্লীর ছালাতে মনোযোগ নষ্ট করে, সেগুলো দূর করা এবং ছালাতের স্থান থেকে সেগুলো দূর করা।

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ قِرَامٌ لِعَائِشَةَ سَتَرَتْ بِهِ جَانِبَ بَيْتِهَا فَقَالَ لها النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمِيْطِىْ عَنِّيْ فَإِنَّهُ لَا تَزَالُ تَصَاوِيْرُهُ تَعْرِضُ لِيْ فِىْ صَلَاتِىْ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর একটি পর্দা (নকশা করা অথবা রঙ্গিন পর্দা) ছিল, যা দ্বারা তিনি তার ঘরের এক পার্শ্বকে ঢেকে রাখতেন। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, কাপড়টি আমার থেকে সরিয়ে ফেল অর্থাৎ, কাপড়টি অপসারণ কর। কেননা ছালাতে তার ছবিগুলো সর্বদা আমার চোখে ভেসে ওঠে’।[১]

কাসিম (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণনা করেন,

أَنَّهُ كَانَ لَهَا ثَوْبٌ فِيْهِ تَصَاوِيْرُ مَمْدُوْدٌ إِلَى سَهْوَةٍ فَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي إِلَيْهِ فَقَالَ أَخِّرِيْهِ عَنِّي فَإِنَّهُ لَا تَزَالُ تَصَاوِيْرُهُ تَعْرِضُ لِيْ فِىْ صَلَاتِىْ

‘নিশ্চয় তার একটি ছবিযুক্ত কাপড় ছিল। যা একটি ঘরের দিকে ঝুলানো ছিল (এমন ছোট ঘর যা নীচু তথা কুঠরি ঘরের মত)। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেদিকে ফিরে ছালাত আদায় করতেন। তিনি বললেন, তা (ছবিযুক্ত কাপড়টি) আমার থেকে সরিয়ে ফেল। কেননা ছালাতে তার ছবিগুলো সর্বদা আমার চোখে ভেসে ওঠে। তাই আমি কাপড়টি সরিয়ে ফেলি এবং তা দ্বারা কয়েকটি বালিশ বানিয়ে নেই’।[২]

আলোচ্য বিষয়টির উপর প্রমাণ হিসাবে আরও একটি হাদীছ উল্লেখ করা যায়। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ছালাত আদায় করার জন্য কা‘বায় প্রবেশ করলেন, তখন তিনি সেখানে ভেড়ার দু’টি শিং দেখতে পেলেন। যখন তিনি ছালাত আদায় শেষ করলেন, তখন ওছমান আল-হাজাবীকে বললেন,

إِنِّىْ نَسِيْتُ أَنْ آمُرَكَ أَنْ تُخَمِّرَ الْقَرْنَيْنِ فَإِنَّهُ لَيْسَ يَنْبَغِى أَنْ يَكُوْنَ فِى الْبَيْتِ شَىْءٌ يَشْغَلُ الْمُصَلِّىَ

‘নিশ্চয় আমি তোমাকে শিং দু’টি ঢেকে রাখতে বলতে ভুলে গেছি। কেননা কা‘বা ঘরে এমন কোন জিনিস থাকা উচিত নয় যা একজন মুছল্লীকে ছালাতে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখে’।[৩]

উল্লিখিত বিষয়ের সাথে আরও যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয় সেগুলো হল- ঐ সকল স্থানে ছালাত আদায় করা হতে বিরত থাকা যেমন: মানুষের অতিক্রমের স্থান, এমন স্থান যেখানে মানুষরা শোরগোল ও হৈচৈ করে, কোন আলোচনার স্থান, অনর্থক কথাবার্তা ও মজলিসের স্থান এবং প্রত্যেক ঐ স্থান যেখানে মুছল্লির দৃষ্টিকে ব্যস্ত রাখে। অনুরূপভাবে যদি সম্ভবপর হয়, তাহলে অধিক গরম স্থান এবং অধিক ঠাণ্ডা স্থানে ছালাত আদায় করা হতে বিরত থাকা। কেননা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কারণেই গ্রীষ্মকালে যুহরের ছালাত ঠাণ্ডা অবস্থায় পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

إِنَّ الصَّلَاةَ فِيْ شِدَّةِ الْحَرِّ تَمْنَعُ صَاحِبُهَا مِنَ الْخُشُوْعِ وَالْحُضُوْرِ وَيَفْعَلُ الْعِبَادَةُ بِتَكَرُّهٍ وَتَضَجُّرٍ فَمِنْ حِكْمَةِ الشَّارِعِ أَنْ أَمَرَهُمْ بِتَأْخِيْرِهَا حَتَّى يَنْكَسِرُ الْحرّ فَيُصَلِّي الْعَبْدُ بِقَلْبٍ حَاضِرٍ وَيَحْصُلُ لَهُ مَقْصُوْد الصَّلَاة مِنَ الْخُشُوْعِ وَالْإِقْبَالِ عَلَى اللهِ تَعَالَى

‘নিশ্চয় গরমের দিনে মুছল্লিকে বিনয় ও একাগ্রতার সাথে ছালাত আদায় হতে গরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলত মুছল্লির কাছে ইবাদত অপসন্দনীয় এবং বিরক্তির কারণ হয়। এজন্যই শরী‘আত প্রণেতা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গরমের দিনে দেরী করে যুহরের ছালাত আদায় করতে বলেছেন এবং এর হিকমাত হল, যাতে করে গরম দূর হয়ে যায়। আর মুছল্লী প্রশান্তির অন্তর নিয়ে ছালাত আদায় করতে পারে এবং বিনয় ও একাগ্রতার সাথে ছালাত আদায় করার দ্বারা মুছল্লির উদ্দেশ্য অর্জিত হয় এবং ছালাত আল্লাহর নিকটে কবুলযোগ্য হয়’।[৪]

(২০) এমন কাপড়ে ছালাত আদায় না করা, যা নকশা করা, লেখা, রঙ করা, অথবা এমন কোন ছবি অঙ্কন করা, যা একজন মুছল্লির ছালাতে মনোযোগ বিনষ্ট করে।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّىْ فِىْ خَمِيْصَةٍ ذَاتِ أَعْلَامٍ فَنَظَرَ إِلَى عَلَمِهَا فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ قَالَ اذْهَبُوْا بِهَذِهِ الْخَمِيْصَةِ إِلَى أَبِىْ جَهْمِ بْنِ حُذَيْفَةَ وَائْتُوْنِىْ بِأَنْبِجَانِيِّهِ فَإِنَّهَا أَلْهَتْنِى آنِفًا فِىْ صَلَاتِىْ

‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি নকশা করা জামা পরিধান করে ছালাতে দণ্ডায়মান হন। ছালাতে তার মনোযোগ ঐ নকশার দিকে যায়। ছালাত শেষ করার পর তিনি বললেন, এই নকশা করা জামাটি নিয়ে আবূ জাহ্‌ম ইবনু হুযায়ফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর কাছে যাও এবং তার থেকে ‘আন্বাজানিয়্যাহ’ (এমন জামা যাতে কোন নকশা, দাগ বা বুটিকের কাজ নেই) জামা নিয়ে আস। কেননা এই জামাটি এখনই আমার ছালাতে মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছিল’। অপর এক বর্ণনায় আছে,

شَغَلَتْنِى أَعْلَامُ هَذِهِ

‘এই জামাটির নকশা আমাকে ব্যস্ত করে রেখেছিল’। অপর এক বর্ণনায় আছে,

كَانَتْ لَهُ خَمِيْصَةٌ لَهَا عَلَمٌ فَكَانَ يَتَشَاغَلُ بِهَا فِى الصَّلَاةِ

‘তার একটি নকশা করা জামা ছিল, যা ছালাতে তাকে অন্যমনস্ক করে রাখত’।[৫] সুতরাং যে সকল কাপড়ে ছবি অঙ্কিত আছে বিশেষ করে যাতে প্রাণীর ছবি আছে সে সকল কাপড় পরিধান করে ছালাত আদায় করা ঠিক নয়। অথচ বর্তমান সময়ে আমাদের মাঝে তা ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে।

(২১) খাবার সামনে উপস্থিত রেখে ছালাত আদায় না করা।

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَا صَلَاةَ بِحَضْرَةِ طَعَامٍ

‘খাবার উপস্থিত অবস্থায় ছালাত আদায় করা ঠিক নয়’।[৬] যখন মুছল্লির সামনে খাবার রাখা হয়, খাবার উপস্থিত করা হয় অথবা তার সামনে খাবার পেশ করা হয়, তখন সে প্রথমে খাবার খেয়ে নিবে। কেননা যদি সে খাবার গ্রহণ না করে ছালাতে দণ্ডায়মান হয়, তাহলে তার মনোযোগ খাবারের সাথে সংযুক্ত থাকবে। ফলে ছালাতে তার মনোযোগে বিঘ্নতা সৃষ্টি হবে। সুতরাং মুছল্লির জন্য আবশ্যক হল তাড়াহুড়া না করে প্রয়োজন সমাপ্ত করে ছালাতে দণ্ডায়মান হওয়া। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

إِذَا قُرِّبَ الْعَشَاءُ وَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَابْدَءُوا بِهِ قَبْلَ أَنْ تُصَلُّوْا صَلَاةَ الْمَغْرِبِ وَلَا تَعْجَلُوْا عَنْ عَشَائِكُمْ

‘যদি রাতের খাবার উপস্থিত হয় এবং ছালাত নিকটবর্তী হয়, তাহলে তোমরা ‘এশার ছালাত আদায়ের পূর্বে রাতের খাবার সেরে নাও। তোমরা রাতের ছালাত আদায়ে তাড়াহুড়া করো না’। অপর এক বর্ণনায় আছে,

إِذَا وُضِعَ عَشَاءُ أَحَدِكُمْ وَأُقِيْمَتِ الصَّلَاةُ فَابْدَءُوْا بِالْعَشَاءِ وَلَا يَعْجَلَنَّ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهُ

‘যদি তোমাদের কারো সামনে রাতের খাবার রাখা হয় এবং ছালাতের ইক্বামাত দেয়া হয়, তাহলে তোমরা প্রথমে রাতের খাবার খেয়ে নাও। খাবার খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা ছালাতের জন্য তাড়াহুড়া করো না’।[৭]

(২২) পেশাব অথবা পায়খানার বেগ অবস্থায় ছালাত আদায় না করা।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কোন মুছল্লী যখন পেশাব অথবা পায়খানার বেগ আটকে ছালাতে দাঁড়ায়, তখন ছালাতে তার একাগ্রতা ও মনোযোগ থাকে না। যেমন হাদীছে এসেছে,

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُصَلِّىَ الرَّجُلُ وَهُوَ حَاقِنٌ

‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেশাব-পায়খানা আটকে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন’।[৮] আলোচ্য হাদীছ হতে প্রতীয়মান হয় যে, যদি কোন মুছল্লির পেশাব অথবা পায়খানার বেগ আসে, তাহলে সে তার প্রয়োজন শেষ করার জন্য আগে পায়খানায় যাবে, যদিও এ ক্ষেত্রে তার জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় ছুটে যায়। কেননা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِذَا أَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يَذْهَبَ الْخَلَاءَ وَقَامَتِ الصَّلَاةُ فَلْيَبْدَأْ بِالْخَلَاءِ

‘তোমাদের কেউ যদি পায়খানায় যেতে চায় আর এমতাবস্থায় ছালাতের ইক্বামত হয়ে যায়, তাহলে সে প্রথমে পায়খানা সেরে নিবে’।[৯] বরং এরকম কোন অবস্থা যদি মুছল্লির ছালাতের মাঝেও হয় তবুও সে ছালাত ছেড়ে দিয়ে তার প্রয়োজন সেরে নিবে অতঃপর ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। কেননা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَا صَلَاة بِحَضْرَة طَعَام وَلَا وَهُوَ يُدَافِعُهُ الأَخْبَثَانِ

‘খাবার উপস্থিত রেখে ছালাত আদায় ঠিক নয় এবং পেশাব ও পায়খানাকে আটকে রেখে ছালাত আদায় ঠিক নয়’।[১০] ছালাত অবস্থায় পেশাব ও পায়খানা আটকে রাখা নিঃসন্দেহে ছালাতে মনোযোগ বিনষ্ট করে। অনুরূপভাবে এই হুকুম বায়ূ আটকে রেখে ছালাত আদায় করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

(২৩) তন্দ্রাচ্ছন্ন (হালকা ঘুম) অবস্থায় ছালাত আদায় না করা।

আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ فَلْيَنَمْ حَتَّى يَعْلَم مَا يَقُوْلُ

‘তোমাদের কেউ যদি ছালাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তাহলে সে যেন ততক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়, যতক্ষণ না সে কী পড়ছে, তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ, সে ঘুমিয়ে পড়বে যাতে করে তার ঘুম চলে যায় (ছালাতে তাকে ঘুমাতে না হয়)’।[১১] এর কারণ সম্পর্কে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ يُصَلِّى فَلْيَرْقُدْ حَتَّى يَذْهَبَ عَنْهُ النَّوْمُ فَإِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا صَلَّى وَهُوَ نَاعِسٌ لَا يَدْرِى لَعَلَّهُ يَسْتَغْفِرُ فَيَسُبَّ نَفْسَهُ

‘ছালাত অবস্থায় তোমাদের কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে সে যেন ঘুমের অবস্থা চলে না যাওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়ে নেয়। কেননা যে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছালাত আদায় করে সে জানে না সে কি ইস্তিগফার তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছে, না-কি নিজেকে গালি দিচ্ছে’।[১২]

আলোচ্য হাদীছ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ঘুমভাব নিয়ে ছালাত আদায় করা ঠিক নয়। কেননা সে ঘুমের ভাব অবস্থায় না জেনে কিংবা অসচেতন অবস্থায় নিজের বিরুদ্ধেই দু‘আ করে বসল অথচ তা হচ্ছে দু‘আ কবুলের সময়, তাই তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছালাত আদায় ঠিক নয়। এই হাদীছ ফরয ছালাতকেও অন্তর্ভুক্ত করে যখন ফরয ছালাত আদায়ের জন্য পর্যাপ্ত সময় অবশিষ্ট থাকে।[১৩]

(২৪) কথা বলতে ব্যস্ত অথবা ঘুমন্ত ব্যক্তির পেছনে ছালাত আদায় না করা।

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথা বলতে ব্যস্ত অথবা ঘুমন্ত ব্যক্তির পেছনে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

لَا تُصَلُّوْا خَلْفَ النَّائِمِ وَلَا الْمُتَحَدِّثِ

‘তোমরা কথা বলতে ব্যস্ত অথবা ঘুমন্ত ব্যক্তির পেছনে ছালাত আদায় কর না’।[১৪] কেননা কথা বলতে ব্যস্ত ব্যক্তি ছালাতরত মুছল্লিকে অমনোযোগী করে দেয় এবং ঘুমন্ত ব্যক্তির দ্বারা ছালাতে এমন কিছু আচরণ ছালাতে প্রকাশ পায়, যা ছালাতে বিঘ্নতা সৃষ্টি করে। ইমাম খাত্ত্বাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

أَمَّا الصَّلَاةُ إِلَى الْمُتَحَدِّثِيْنَ فَقَدْ كَرِهَهَا الشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ وَذَلِكَ مِنْ أَجْلِ أَنَّ كَلَامَهُمْ يُشْغِلُ الْمُصَلِّيْ عَنْ صَلَاتِهِ

‘ছালাত অবস্থায় কথা বলা ইমামকে সামনে রেখে ছালাত আদায় করাকে ইমাম শাফেঈ ও আহমাদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) অপসন্দ করেছেন। এর কারণ হচ্ছে যে, তাদের কথার দ্বারা ছালাতে মুছল্লী অন্যমনস্ক ও অমনোযোগী হয়ে পড়ে’।[১৫]

ঘুমন্ত ব্যক্তির পেছনে ছালাত আদায় করা অপসন্দনীয় কিংবা নিষেধ মর্মে বর্ণিত দলীলগুলোকে কতিপয় আহলুল ইলম দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তন্মধ্যে আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ), তিনি তার সুনান গ্রন্থে ‘ছালাত’ অধ্যায়ের ‘বিতর’ ছালাত পরিচ্ছেদ এবং ‘দু‘আ’ অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন। অনুরূপভাবে ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) ফাৎহুল বারী-তে ‘ছালাত’ অধ্যায়ের ‘ঘুমন্ত ব্যক্তির পেছনে ছালাত আদায়’ পরিচ্ছেদে আলোচনা করেছেন।

ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ছহীহ বুখারীতে ‘ছালাত’ অধ্যায়ের ‘ঘুমন্ত ব্যক্তির পেছনে ছালাত আদায়’ পরিচ্ছেদে বলেন, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّىْ وَأَنَا رَاقِدَةٌ مُعْتَرِضَةٌ عَلَى فِرَاشِهِ

‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছালাত আদায় করতেন আর আমি তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকাতাম’।[১৬] মুজাহিদ, তাঊস, মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) ঘুমন্ত ব্যক্তির পেছনে ছালাত আদায় করাকে অপসন্দ করেছেন এই ভয়ে যে, ঘুমন্ত ব্যক্তির দ্বারা ছালাতে এমন কিছু আচরণ প্রকাশ পায়, যা ছালাতে বিঘ্নতা সৃষ্টি করে।[১৭] আর যদি এরকম কোন আচরণ প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে ঘুমন্ত ব্যক্তির পেছনে ছালাত আদায় করা অপসন্দনীয় হবে না। আল্লাহ তা‘আলা অধিক অবগত।

(২৫) ছোট ছোট পাথর সরানোর কাজে ব্যস্ত না হওয়া।

ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) মু‘আইক্বীব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেছেন,

أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِى الرَّجُلِ يُسَوِّى التُّرَابَ حَيْثُ يَسْجُدُ قَالَ إِنْ كُنْتَ فَاعِلًا فَوَاحِدَةً

‘এক ব্যক্তি সিজদায় মাটি বা পাথর সরানোয় ব্যস্ত ছিল। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, যদি একাজ করতেই হয় তাহলে একবার কর’।[১৮] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَا تَمْسَحْ وَأَنْتَ تُصَلِّى فَإِنْ كُنْتَ لَا بُدَّ فَاعِلاً فَوَاحِدَةً تَسْوِيَةَ الْحَصَى

‘তুমি ছালাতরত অবস্থায় পাথর সরাবে না তথা পরিষ্কার করবে না আর যদি করতে বাধ্যই হও, তাহলে একবার করতে পার’।[১৯]

ছালাতে পাথর বা ময়লা সরানো বা পরিষ্কারে নিষেধাজ্ঞার কারণ হল- ছালাতে খুশূ‘-একাগ্রতা ও বিনয়াবনতাকে রক্ষা করা। যাতে করে ছালাতে অধিক কাজ না হয়ে যায়। বরং সিজদার স্থান যদি সমান করা বা পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয়, তাহলে ছালাত শুরুর পূর্বেই তা সমান করা বা পরিষ্কার করা উত্তম।

অনুরূপভাবে ছালাতে কপাল এবং নাক পরিষ্কার করা অপসন্দনীয় কাজের অন্তর্ভুক্ত। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটি ও পানি যুক্ত স্থানে সিজদা করেছেন এবং তার কপালে সেগুলোর চিহ্ন অবশিষ্ট ছিল। তিনি যতবার সিজদা থেকে উঠেছেন ততবার তার কপাল পরিষ্কার করেননি। কেননা ছালাতে খুশূ‘-একাগ্রতা ও বিনয়াবনতার উপস্থিতি কপালের ময়লা পরিষ্কার করাকে ভুলিয়ে দেয় এবং এসমস্ত কাজ হতে বিরত রাখতে সহায়তা করে। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

إِنَّ فِى الصَّلَاةِ شُغْلًا

‘নিশ্চয় ছালাতে ব্যস্ততা রয়েছে’।[২০] ইবনু আবী শায়বাহ আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

مَا أُحِبُّ أَنَّ لِيْ حُمْرَ النَّعَمِ وَأَنِّيْ مَسَحْتُ مَكَانَ جَبِيْنِي مِنَ الْحَصَى

‘নিশ্চয় আমি আমার সিজদার স্থান পরিষ্কার করাকে একটি লাল উট পাওয়ার বিনিময়ে হলেও অপসন্দ করি’। কাযী ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

كَرِهَ السَّلَفُ مَسْحُ الْجَبْهَةِ فِي الصَّلَاةِ قَبْلَ الْاِنْصِرَافِ

‘ছালাত শেষ হওয়ার পূর্বে কপালের ময়লা পরিষ্কার করাকে সালাফগণ অপসন্দ করতেন’।[২১] যে সকল বিষয় মুছল্লির ছালাতে মনোযোগ নষ্ট করে সেগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। আবার অপর মুছল্লির ছালাতে মনোযোগে বিঘ্নতা সৃষ্টি করে এমন সব কাজ হতে বিরত থাকাও একজন মুছল্লির একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

(২৬) কিরাআত তথা সূরা পড়তে গিয়ে অন্য মুছল্লির বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি (ডিস্টার্ব) না করা।

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

أَلَا إِنَّ كُلَّكُمْ مُنَاجٍ رَبَّهُ فَلَا يُؤْذِيَنَّ بَعْضُكُمْ بَعْضًا وَلَا يَرْفَعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِى الْقِرَاءَةِ أَوْ قَالَ فِى الصَّلَاةِ

‘সাবধান! নিশ্চয় তোমরা প্রত্যেকেই ছালাতে মহান আল্লাহর সাথে কথোপকথন করছ। সুতরাং তোমরা ছালাতে পরস্পরকে কষ্ট দিবে না। আর ছালাতে তোমাদের একজনের আওয়াজ অপরের চেয়ে যেন উঁচু না হয়’।[২২] অপর এক বর্ণনায় আছে,

لَا يَجْهَرُ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ بِالْقُرْآنِ

‘কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ একে অপরের চেয়ে যেন উঁচু না হয়’।[২৩]

(২৭) ছালাতে এদিক ওদিক তাকানো পরিত্যাগ করা।

আবূ যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَا يَزَالُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مُقْبِلًا عَلَى الْعَبْدِ وَهُوَ فِىْ صَلَاتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ فَإِذَا الْتَفَتَ انْصَرَفَ عَنْهُ

‘ছালাতের মধ্যে বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত এদিক সেদিক না তাকায়, ততক্ষণ পর্যন্ত মহান আল্লাহর দৃষ্টি তার দিকে থাকে (বা আল্লাহ তার সামনেই থাকেন)। সুতরাং যখন সে এদিক সেদিক তাকায়, তখন মহান আল্লাহ তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন’।[২৪]

ছালাতে দৃষ্টিকে এদিক সেদিক ফেরানো দু’ধরনের। যথা:

(ক) অন্তরকে মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্যের দিকে মনোনিবেশ করা।

(খ) দৃষ্টিকে এদিক সেদিক ফেরানো।

উল্লিখিত দু’টিই নিষিদ্ধ এবং এর ফলে ছালাতের প্রতিদান কমে যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ছালাতে এদিক সেদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ সম্পর্কে জিজ্ঞস করা হলে তিনি বলেন,

اِخْتِلَاسٌ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلَاةِ الْعَبْدِ

‘এটা এক ধরনের ছিনতাই। শয়তান বান্দার ছালাত হতে তা ছিনতাই করে নিয়ে যায়’।[২৫] যে ব্যক্তি ছালাতে তার দৃষ্টি বা অন্তরকে এদিক সেদিক ফেরায় তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যাকে বাদশাহ ডাকে অতঃপর সে বাদশাহর সামনে উপস্থিত হয়। বাদশাহ যখন তাকে সম্বোধন করে এবং তার সাথে কথা বলে, তখন সে বাদশাহর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে এদিক সেদিক তাকায়। সে তার অন্তরকে বাদশাহর থেকে ফিরিয়ে নেয় এবং সে বোঝে না বাদশাহ তার সাথে কী বিষয়ে কথা বলছে। কেননা তার অন্তর সেই সময় তার সাথে উপস্থিত নেই। সুতরাং এই ব্যক্তির সাথে বাদশাহ কেমন আচরণ করবে ধারণা করা যায়?

সুতরাং এরূপ আচরণকারী ব্যক্তির জন্য ফলাফল এমনটাই হওয়া উচিত যে, সে মহান আল্লাহ্ সামনে থেকে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে এবং সে আল্লাহর দৃষ্টি হতে অনেক দূরে নিক্ষিপ্ত হবে। সুতরাং এ ধরনের মুছল্লী কখনও ঐ মুছল্লির সমপর্যায়ের হবে না যে মুছল্লী তার ছালাতে আল্লাহর সামনে নিজেকে উপস্থাপন করে এবং মনে-প্রাণে আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্বকে অনুভব করে। যার জন্য সে দণ্ডায়মান হল তার দিকে সজাগ থাকে। ফলে তার অন্তর আল্লাহর ভয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং আল্লাহর জন্যই তার ঘাড়-মাথা ঝুঁকে পড়ে ও অবনত হয়। সে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর প্রতি মনোযোগ নিবিষ্ট করতে এবং অন্য কোন দিকে তাকাতে লজ্জাবোধ করে। সুতরাং তাদের উভয়ের ছালাত সমপর্যায়ের হতে পারে না।

তাদের উভয়ের ছালাতের মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে হাসান ইবনু আত্বিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

إن الرجلين ليكونان في الصلاة الواحدة وإن ما بينهما في الفضل كما بين السماء والأرض وذلك أن أحدهما مقبل بقلبه على الله عز وجل والآخر ساه غافل

‘দু’জন মুছল্লী একই ছালাত আদায় করছে অথচ তাদের উভয়ের ছালাতের পার্থক্যের ব্যবধান আসমান ও যমীনের মধ্যকার ব্যবধানের ন্যায়। কেননা তাদের একজন তার অন্তর দিয়ে নিজেকে আল্লাহর সামনে উপস্থাপন করছে পক্ষান্তরে অপরজন তার ছালাতে অমনোযোগী ও গাফেল হয়ে আছে’।[২৬]

তবে মুছল্লী যদি তার বিশেষ প্রয়োজনে দৃষ্টি অন্য দিকে নিক্ষেপ করে তাতে কোন সমস্যা নেই। আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) সাহ্‌ল ইবনুল হানযালিইয়্যাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,

ثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ يَعْنِى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَجَعَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّىْ وَهُوَ يَلْتَفِتُ إِلَى الشِّعْبِ

‘ফজরের ছালাতের ঘোষণা দেয়া হলে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছালাত আদায় করাবস্থায় পাহাড়ের চূড়ার দিকে তাকাচ্ছিলেন’। ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

وَكَانَ أَرْسَلَ فَارِسًا مِنَ اللَّيْلِ إِلَى الشِّعْبِ يَحْرِسُ

‘রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রিতে একজন অশ্বারোহীকে পাহাড়ের চূড়ায় পাহারা দেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন (তাই তিনি তার অবস্থা জানার জন্যই সেদিকে তাকাচ্ছিলেন)’।

অনুরূপভাবে উমামাহ বিনতে আবীল ‘আছকে ছালাতরত অবস্থায় বহন করা, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর জন্য দরজা খুলে দেয়া, মিম্বার থেকে নেমে ছাহাবীদেরকে ছালাত শিক্ষা দেয়া, সূর্যগ্রহণের ছালাতে আগে-পিছে সরে যাওয়া, শয়তানকে আটকে রাখা এবং তার গলা চেপে ধরা যখন শয়তান ছালাত নষ্ট করার ইচ্ছা করে, ছালাতে সাপ ও বিচ্ছুকে হত্যা করা, ছালাতে মুছল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে বাধা প্রদান করা এবং তাকে মোকাবেলা করার নির্দেশ প্রদান করা, ছালাতে মহিলাদের (ভুল হলে) হাত তালি দেয়ার নির্দেশ দেয়া; এরূপভাবে ছালাতের মাঝে কোন বিশেষ প্রয়োজনে ইঙ্গিত প্রদান করা, এগুলোর অনুমতি রয়েছে। আর যদি কোন মুছল্লী ছালাতে বিনা প্রয়োজনে উপরিউক্ত কাজগুলো করে, তাহলে তার জন্য তা অনর্থক, নিষিদ্ধ কাজের অন্তর্ভুক্ত হবে। যা ছালাতের মনোযোগকে বিনষ্ট করে দেয় এবং খুশূ‘-একাগ্রতা আনয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।[২৭]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* অধ্যয়নরত, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, ফাৎহুল বারী, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৩৯১।
[২]. ছহীহ মুসলিম, ৩/১৬৬৮।
[৩]. আবূ দাঊদ, হা/২০৩০; ছহীহুল জামে‘, হা/২৫০৪।
[৪]. আল ওয়াবিলুছ ছায়্যিব, পৃ. ২২।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৯১।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৬০।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৭৩; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭-৫৫৯।
[৮]. ইবনু মাজাহ, হা/৬১৭; ছহীহুল জামে‘, হা/৬৮৩২।
[৯]. আবূ দাঊদ, হা/৮৮; ছহীহুল জামে‘, হা/২৯৯।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৬০।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/২১০।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৯।
[১৩]. ফাৎহুল বারী, ‘ওযূ’ অধ্যায়ের ব্যাখ্যা, অধ্যায় : ‘ঘুম থেকে উঠে ওযূ করা’।
[১৪]. আবূ দাঊদ, হা/৬৯৪; ছহীহুল জামে‘, হা/৩৭৫, আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে হাসান বলেছেন।
[১৫]. ‘আওনুল মা‘বূদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৮৮।
[১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৫১২, ৯৯৭।
[১৭]. ফাৎহুল বারী, ‘ওযূ’ অধ্যায়ের ব্যাখ্যা, অধ্যায় : ‘ঘুম থেকে উঠে ওযূ করা’।
[১৮]. ফাৎহুল বারী, ৩য় খণ্ড, পৃ: ৭৯।
[১৯]. আবূ দাঊদ, হা/৯৪৬; ছহীহুল জামে‘, হা/৭৪৫২।
[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/১১৯৯; ফাৎহুল বারী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৭২।
[২১]. ফাৎহুল বারী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৭৯।
[২২]. আবূ দাঊদ, হা/১৩৩২; ছহীহুল জামে‘, হা/৭৫২।
[২৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০২২; ছহীহুল জামে‘, হা/১৯৫১।
[২৪]. আবূ দাঊদ, হা/৯০৯।
[২৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৫১, ‘আযান’ অধ্যায়, ‘ছালাতে এদিক সেদিক তাকানো প্রসঙ্গে আলোচনা’ পরিচ্ছেদ।
[২৬]. ইবনুল ক্বাইয়্যিম, আল-ওয়াবিলুছ ছায়্যিব, পৃ. ৩৬।
[২৭]. মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২২ তম খণ্ড, পৃ. ৫৫৯।




বিদ‘আত পরিচিতি (৩১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
শবেবরাত - আল-ইখলাছ ডেস্ক
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার (২য় কিস্তি) - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
বিদ‘আত পরিচিতি - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৭ম কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ভ্রান্ত ফের্কাসমূহের ঈমান বনাম আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ঈমান : একটি পর্যালোচনা - ড. আব্দুল্লাহিল কাফী বিন লুৎফর রহমান মাদানী
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
আশূরায়ে মুহাররম - আল-ইখলাছ ডেস্ক
তারুণ্যের উপর সন্ত্রাসবাদের হিংস্র ছোবল : প্রতিকারের উপায় - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আলো ও অন্ধকার (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
বিদ‘আত পরিচিতি (২৭তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন

ফেসবুক পেজ