উত্তর : কুরবানী করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ’। ইমাম তিরমিযী, ইমাম ইবনে হায্ম, ইমাম ইবনে কুদামাহ ও ইমাম নববী (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, ‘কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, বরং এটি রাসুল (ﷺ)-এর সুন্নাতসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম সুন্নাত’। আবূ বাকর ছিদ্দীক্ব, উমার ফারুক্ব, বিলাল ও আবূ মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম), ইমাম সুফিয়ান ছাওরী , ইবনুল মুবারক, সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব, শা‘বী, সাঈদ বিন জুবাইর, আত্বা, হাসান, ত্বাউস, আসওয়াদ, আলক্বামাহ্, মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হাসান, উবাইদুল্লাহ বিন হাসান, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ইসহাক, আবু সুলাইমান, আবু ছাউর, ইবনুল মুনযির ও আবু ইউসুফ (রাহিমাহুমুল্লাহ) সহ অন্য বিদ্বানগণ একই কথা বলেছেন (আল-কাফী, ১/৪১৮; মাওয়াহিবুল জালীল, ৪/৩৬২; আল-মাজমূঊ, ৮/৩৮২; আল-মুগনী, ৯/৪৩৫; কাশশাফুল ক্বিনা‘, ৩/২১; আল-মুহাল্লা, ৭/৩৫৫, ৩৫৮; শারহুন নববী, ১৩/১১০; ফাৎহুল ক্বাদীর, ৯/৫০৬; তিরমিযী, ৪/৯২ পৃ.)। উম্মু সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন,
إِذَا دَخَلَتِ الْعَشْرُ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ فَلَا يَمَسَّ مِنْ شَعَرِهِ وَبَشَرِهِ شَيْئًا
‘যখন (যিলহজ্জ মাসের) প্রথম দশদিন উপস্থিত হয়, আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা পোষণ করে, তবে সে যেন তার চুল ও নখের কিছুই স্পর্শ না করে (কর্তন না করে)’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৭৭, ৫০১১; আবূ দাঊদ, হা/২৭৯১; তিরমিযী, হা/১৫২৩; নাসাঈ, হা/৪৩৬১-৪৩৬২; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৪৯-৩১৫০; ছহীহুল জামি‘, হা/৫২০, ৫৭৪)। এখানে রাসূল (ﷺ) কুরবানীকে ইচ্ছার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। কোন ওয়াজিব বিষয় কখনো ইচ্ছার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় না। ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। কেননা রাসূল (ﷺ) বলেছেন, فأراد أحَدُكم أن يضَحِّيَ ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করলে। কুরবানী করা ওয়াজিব হলে হয়তো তিনি এভাবে বলতেন, ‘কুরবানী না হওয়া পর্যন্ত চুল ও নখ কাটবে না’ (মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার, ১৫/১৪; আল-মাহাল্লা, ৭/৩৫৫; আল-মুগনী, ৯/৪৩৬ পৃ.)।
শাইখ ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কোন শারঈ দলীল বর্ণিত হয়নি। বরং ওয়াজিব হওয়ার কথাটি খুবই দুর্বল (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৮/৩৬ পৃ.)। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর উত্তরে বলেন,
إن كان له وفاء فاستدان ما يضحي به فحسن ، ولا يجب عليه أن يفعل ذلك “ انتهى
‘যদি তার পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকে, তাহলে কুরবানী দেয়ার মত ঋণ গ্রহণ করা উত্তম। তবে এমনটি করা তার উপর অপরিহার্য নয়’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৬/৩০৫ পৃ.)। অনুরূপভাবে শাইখ ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
الأضحية سنة وليست واجبة ... ولا حرج أن يستدين المسلم ليضحي إذا كان عنده القدرة على الوفاء
‘কুরবানী করা সুন্নাত, অপরিহার্য নয়। পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকলে মুসলিম ব্যক্তির জন্য ঋণ নিয়ে কুরবানী করা দোষনীয় নয়’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১/৩৭ পৃ.)।
সুন্নাতে মুআক্কাদাহ বলতে বুঝায় এমন আমলকে বুঝায়, যা করলে আমলকারী আল্লাহ তা‘আলার নিকট ছাওয়াবের বা প্রতিদানের অধিকারী হয়, পক্ষান্তরে এটি পরিত্যাগকারী গুনাহগার হয় না। কিন্তু রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত ছেড়ে দেয়ার কারণে তাকে তিরস্কার ও দোষারোপ করা হয়’ (উছূলুল ফিক্বহ, পৃ. ৩৮; আল-ওয়াসীত্ব ফী উসূলিল ফিক্বহিল ইসলামী, পৃ. ৭৯; উসূলুল ফিক্বহ্ আল-ইসলামী, পৃ. ২৩৮; কিতাবুল ওয়াজিয ফী উসূলিল ফিক্বহ, ১/৩৪১ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : খালিদ সাইফুল্লাহ, ফরিদপুর।