উত্তর : আধুনিক পদ্ধতিতে খামারে বন্য অথবা গৃহপালিত পশুপাখি লালন-পালন করা দোষণীয় নয়। আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বাধিক সদাচারী ও চরিত্রবান ছিলেন। আমার এক ভাই ছিল, তাকে ‘আবূ উমাইর’ বলে সম্বোধন করা হত। আমার ধারণা যে, সে তখন মায়ের দুধ খেত না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই (আমাদের ঘরে) তার নিকট আসতেন, তিনি তাকে বলতেন, ‘হে আবূ উমাইর! কী করছে তোমার নুগাইর’? সে নুগাইর নামক ছোট্ট পাখিটা নিয়ে খেলা করত (ছহীহ বুখারী, হা/৬১২৯, ৬২০৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৫০; আবূ দাঊদ, হা/৪৯৬৯; তিরমিযী, হা/৩৩৩, ১৯৮৯; ইবনু মাজাহ, হা/৩৭২০, ৩৭৪০)। উল্লেখ্য, চড়ুই বা বুলবুলের মত এক ধরনের বিশেষ পাখিকে নুগাইর বলা হত।
উক্ত হাদীছের আলোকে হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, পাখিকে আবদ্ধ করে লালন-পালন করা জায়েয। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবূ উমাইর’ বা তার পরিবারের সামনে এর বিপক্ষে কোন মন্তব্য করেননি। এই হাদীছের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিক্ষনীয় বিষয় আছে। যেমন (ক) বাচ্চাদের জন্য পাখি নিয়ে খেলাধূলা করা বৈধ। (খ) বাবা-মা তাদের বাচ্চাকে বৈধ খেলাধূলার জন্য ছেড়ে দিতে পারেন। (গ) বাচ্চাদের বৈধ খেলাধূলার পিছনে অর্থ ব্যয় করা জায়েয। (ঘ) পাখিকে খাঁচায় বন্দি করে রাখা জায়েয’ (ফাৎহুল বারী শারহু ছহীহিল বুখারী, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৫৪৮)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘পাখির পানাহার ও অন্যান্য চাহিদা পূরণ করে লালন-পালন করা দোষনীয় নয়। কেননা এ জাতীয় বিষয়ের ভিত্তি বা মূল সামগ্রিকভাবে বৈধ। আর আমাদের জানা মতে এর বিপক্ষে কোন দলীল নেয়’ (ফাতাওয়া উলামাউল বালাদিল হারাম, পৃ. ১৭৯৩)। ‘ইসলাম ওয়েব’-এর আলেমগণ বলেন, ‘বিশেষ করে লাভবান ও উপকৃত হওয়ার জন্য অথবা সৌন্দর্য, বিনোদন ও অন্তরঙ্গতার জন্য খরগোশ বা অন্যান্য পশুপাখি খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ করে লালন-পালন করা শরী‘আতসম্মত’ (ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৭৩৪২)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘তোতা, বুলবুল ও বিভিন্ন রংবেরঙের মনোজ্ঞ, মনোমুগ্ধকর, সৌখিন ও চিত্তাকর্ষক পাখির দর্শন ও শ্রুতিমধুর কণ্ঠস্বর শ্রবণ করার উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ। এ সমস্ত পাখির দর্শনে উৎফুল্ল ও তাদের কণ্ঠস্বর শুনে আনন্দিত হওয়া শরী‘আতসম্মত। পাখির ক্রয়-বিক্রয় ও অধিকার হস্তান্তর হারাম হওয়ার পক্ষে কোন দলীল নেয়। বরং পানাহার ও অন্যান্য চাহিদা পূরণ করার শর্তে পাখিকে আবদ্ধ করে অথবা মুক্ত করে উভয় পদ্ধতিতেই লালন-পালন করা অনুমোদিত’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ৩৮-৪০ এবং ২৬তম খণ্ড, পৃ. ১৫০)।
প্রশ্নকারী : তাওহীদুযযামান, নওদাপাড়া, রাজশাহী।