উত্তর : কুরবানীদাতার জন্য সুন্নাত হল- তিনি নিজে খাবেন, আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া দেবেন এবং গরীব মিসকীনদেরকে ছাদাক্বাহ করবেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, فَكُلُوْا مِنْهَا وَ اَطْعِمُوا الْبَآىِٕسَ الْفَقِيْر ‘অতঃপর তোমরা তা হতে ভক্ষণ কর এবং নিঃস্ব অভাবগ্রস্তদেরকে ভক্ষণ করাও’ (সূরা আল-হজ্জ: ২৮)। অন্যত্র তিনি বলেন, فَكُلُوْا مِنْهَا وَ اَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَ الْمُعْتَرَّ ‘অতঃপর তোমরা তা হতে আহার কর এবং আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকে ও যাাাকারী অভাবগ্রস্তকে’ (সূরা আল-হজ্জ: ৩৬)। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, প্রথমদিকে নবী (ﷺ) তিনদিনের পরেও কুরবানীর গোশত খেতে বারণ করেছিলেন। অতঃপর পরবর্তীকালে তিনি বলেছেন, এখন তোমরা খেতে পার, পাথেয় হিসাবে ব্যবহার করতে পার এবং সঞ্চয় করে রাখতে পার (ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৭২)।
উপরিউক্ত আয়াত বা হাদীছে কিন্তু খাওয়া, হাদিয়া করা ও দান করার কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ বিবৃত হয়নি। এখানে শুধু বলা হয়েছে, ‘কুরবানীর গোশত তিন শ্রেণীর ব্যক্তিদের মধ্যে বণ্টিত হবে। তবে অধিকাংশ আলেম মনে করেন যে, সমস্ত গোশতকে তিন ভাগ করে এক ভাগ খাওয়া, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া করা এবং এক ভাগ গরীবদেরকে দান করা উত্তম। প্রয়োজনে ভাগে কম-বেশী করা যাবে। কিংবা সবটুকু ছাদাক্বাহ্ করলেও কোন দোষ নেই’ (মির‘আত, ৫/১২০ পৃ.; আল-মুগনী, ১১/১০৮-০৯ পৃ.)। সুতরাং কেউ চাইলে সে তার কুরবানীর সমস্ত গোশতকে বিতরণ করে দিতে পারে। আর তা করলে উক্ত আয়াতের বিরোধিতা হবে না। কারণ, ঐ আয়াতে নিজে খাওয়ার আদেশ হল মুস্তাহাব বা সুন্নাত। সে যুগের মুশরিকরা তাদের কুরবানীর মাংস খেত না বলে মহান আল্লাহ উক্ত আদেশ দিয়ে মুসলিমদেরকে তা খাবার অনুমতি দিয়েছেন। অবশ্য কেউ কেউ খাওয়া ওয়াজিবও বলেছেন (তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৩/২৯২-৩০০; আল-মুগনী, ১৩/৩৮০; আশ-শারহুল মুমতি‘, ৭/৫২৫ পৃ.)।
কুরবানীর গোশত হতে কাফিরদেরকে দেয়া বৈধ। আর তা ইসলামের এক মহানুভবতা (আল-মুগনী, ১৩/ ৩৮১; ফাৎহুল বারী, ১০/৪৪২ পৃ.)। উল্লেখ্য, তিনদিনের অধিক কুরবানীর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ হওয়া সংক্রান্ত হাদীছটি মানসুখ (রহিত) হলেও যেখানে দুর্ভিক্ষ থাকে, সেখানে তিন দিনের অধিক গোশত জমা রাখা বৈধ নয় (ফাৎহুল বারী, ১০/২৮; আল-ইনসাফ, ৪/১০৭ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : তারিক হাসান, মোহনপুর, রাজশাহী।