বুধবার, ০৪ Jun ২০২৫, ১২:৩২ অপরাহ্ন
উত্তর : বিদ‘আতীর সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যাবে। আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

فَمَنْ أَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا وَإِذَا فِيْهِ

‘যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদ‘আত উদ্ভাবণ করে কিংবা কোন বিদ‘আতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ তা‘আলা, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লা’নত ও অভিসম্পাত। তার কোন ফরয কিংবা নফল ইবাদত গৃহীত হবে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৮৭০, ৩১৭২,; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৭০)।  অনুরূপভাবে অসংখ্য তাবিঈ থেকে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হাসান বাছরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

لَا يَقْبَلُ اللهِ لِصَاحِبِ بِدْعَةٍ صَوْمَا وَلَا صَلَاةً وَلَا حَجًّا وَلَا عُمْرَةً حَتًّى يَدَعَهَا

‘বিদ‘আতী কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা বিদআতীর ছিয়াম, ছালাত, হজ্জ, উমরাহ কোন কিছুই ক্ববুল করবেন না'’ (আশ-শারী‘আহ লিল আজুর্রী, পৃ. ৬৪; আল-বায়িছু ‘আলা ইনকারিল বিদা'ঈ ওয়াল হাওয়াদিছ, পৃ. ১৬; আল-বিদা‘উ ওয়ান নাহী আনহা, পৃ. ২৭)। ফুযাইল ইবনু আয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

لا يرفع لصاحب بدعة إلى الله عمل ‘বিদ‘আতীর কোন আমল আল্লাহর দরবারে উত্থাপন করা হবে না বা গ্রহণযোগ্য হবে না’ (শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদী আহলিস সুন্নাহ, ১/১৩৯ পৃ.)। এই মাসআলার প্রকৃত বাস্তবতা শাইখ ড. ইবরাহীম আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘প্রকাশ্য দলীল এবং সালাফে ছালিহীনের মন্তব্য থেকে এটিই প্রমাণিত হয় যে, বিদ‘আতীর কোন আমল আল্লাহ তা‘আলা ক্ববুল করবেন না। এটি নিম্মোক্ত ব্যাখ্যাগুলোর উপর বা দিকগুলোর উপর নির্ভর করে। যথা:

১- আলোচনার বাহ্যিক দিক থেকে যা প্রমাণিত হয়, তার ব্যাখ্যা হল: বিদ‘আতীর সমস্ত আমল পরিত্যাজ্য। যার মধ্যে বিদ‘আত আছে এবং যার মধ্যে বিদ‘আত নেই, সবটাই পরিত্যাজ্য। আর এটি শুধু ‘বিদ'আতে মুকাফিফরাহ’-এর জন্য, অন্য কারোর জন্য নয়। ২- এর উদ্দেশ্যে হল: নির্দিষ্টভাবে বিদ‘আতী আমলটা অগ্রহণযোগ্য হবে। কোন আমলে বিদ‘আত প্রবেশ করলেই সেটি বাতিল হিসাবে পরিগণিত হবে। ৩- বিদ‘আতকে নিরুৎসাহিত ও বিফল করণার্থে শাস্তিস্বরূপ বিদ‘আতীর আমলের নেকিকে বিনষ্ট করা হয়, এমনকি এটি গ্রহণ করাই হয় না। ৪- দলীলগুলোর দ্বারা বিদ‘আতীদের বিদ‘আত থেকে সতর্ক করা হয়েছে এবং এর থেকে আতঙ্কিতকরণ করা হয়েছে। শারঈ দলীল এবং সালাফে ছালিহীনের মন্তব্যের ভিত্তিতে এটিই প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম ব্যক্তির আমল ক্ববুল হওয়ার জন্য শর্ত হল: (১) ইখলাছ (২) সুন্নাতের অনুগত্য। সুতরাং সুন্নাতের অনুগত্য থেকে বিমুখ হয়ে বিদ‘আতী পন্থায় আমল করলে তা ক্ববুল হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় (মাওক্বিফু আহলিস সুন্নাহ মিন আহলিল আহওয়া ওয়াল বিদা‘, ১/২৯২-২৯৩ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১০৭২৮৬)।

রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা কোন বিদ‘আতী কার্যকলাপকে ক্ববুল করেন না।

‏مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ". وفي رواية  "‏مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ"‏.‏

‘কেউ আমাদের এই দ্বীনের অংশ নয় এমন কিছু উদ্ভাবন করলে বা অনুপ্রবেশ ঘটালে তা পরিত্যাজ্য-প্রত্যাখ্যাত’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মীয় কাজের মধ্যে এমন বিষয় উদ্ভাবন করে যা তাতে নেই (দলীলবিহীন), তা অগ্রহণযোগ্য’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৬; ইবনু মাজাহ, হা/১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৯২৯, ২৪৬০৪, ২৪৯৪৪, ২৫৫০২, ২৫৬৫৯, ২৫৭৯৭)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা (দ্বীনের মধ্যে) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয় বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; তিরমিযী, হা/২৬৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৪৫; ছহীহুল জামি‘, হা/২৫৪৯)। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, বিদ‘আতে মুকাফ্ফিরা এর মধ্যে লিপ্ত ব্যক্তির আমল আল্লাহর নিকট ক্ববুল হয় না। মহান আল্লাহর দরবারে ইবাদত ক্ববুলের অন্যতম একটি শর্ত হল: রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত অনুযায়ী ইবাদত করা। যখন ইবাদত সুন্নাত পরিপন্থী হয় তখন তা বিদ‘আতী আমলে পরিণত হয়, যা আল্লাহ তা‘আলার নিকটে ক্ববুল হয় না। যদিও মানুষ সেই আমলকে অত্যন্ত ভাল মনে করেই পালন করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلۡ ہَلۡ نُنَبِّئُکُمۡ  بِالۡاَخۡسَرِیۡنَ اَعۡمَالًا- اَلَّذِیۡنَ ضَلَّ سَعۡیُہُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ  الدُّنۡیَا وَ ہُمۡ یَحۡسَبُوۡنَ اَنَّہُمۡ یُحۡسِنُوۡنَ صُنۡعًا

‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আমি কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে সংবাদ দিব? ওরাই তারা, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে’ (সূরা আল-কাহ্ফ: ১০৩-১০৪)।

তবে ইমাম শাত্বিবী (রাহিমাহুল্লাহ) দু’টি সম্ভাব্যপূর্ণ অর্থ বর্ণনা করে বলেন, (১) হয়তো এর অর্থ এই যে, ‘সাধারণভাবে তার কোন আমলই ক্ববুল করা হবে না, যে কোন উপায়ে ঘটুক না কেন, তা সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হোক অথবা এর বিপরীত হোক’। (২) অথবা এর অর্থ এই যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা নির্দিষ্ট করে শুধু তার ঐ আমলটা ক্ববুল করবেন না, যেটা বিদ‘আতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে যে আমলে বিদ‘আত নেই সেটি ক্ববুল হতে পারে’ (আল-ই‘তিছাম, ১/১০৮-১১২ পৃ.)।


প্রশ্নকারী : মাহফুজ, মালেশিয়া।





প্রশ্ন (৩) : ঘুম থেকে জাগতে না পারার কারণে সাহারী খাওয়া সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় ছিয়াম রাখা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : পূর্ববর্তী কিতাবগুলো ছহীফা আকারে নাযিল হয়েছিল। এগুলো কি আল্লাহর কালাম? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : কুরআনের কোন আয়াত ওযূ ছাড়া লেখা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : মসজিদের ক্বিবলা বরাবর টয়লেট বা পেশাবখানা থাকলে উক্ত মসজিদে ছালাত আদায়ে কোন বাধা আছে কি? উল্লেখ্য, মসজিদের দেয়াল এবং টয়লেট ও পেশাবখানার দেয়াল একটাই। - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : ইমাম যদি রুকূ‘, সিজদা, কিরাআত, তাসবীহ খুব দ্রুত করে তাহলে করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৩) : ফজরের জামা‘আতে দ্বিতীয় রাক‘আত পেয়েছি। ইমামের সালাম ফিরানোর পর বাকি ছালাত পূর্ণ করার জন্য দাঁড়ানোর সময় রাফঊল ইয়াদায়ন করা লাগবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : রাগের মাথায় ত্বালাক্ব দিলে কি ত্বালাক্ব পতিত হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : কখন এবং কোন্ দান সর্বোত্তম? দান কবুল হওয়ার প্রতিবন্ধকতাগুলো কী কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৯) : যাকাতের অর্থ দ্বারা মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : কেউ অন্যের নামে মিথ্যা কথা প্রচার করে থাকলে ক্ষমা নেওয়ার উপায় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৩) : কিছু মানুষ হারাম কাজে লিপ্ত। যেমন- দাড়ি মুণ্ডন করা, ধূমপান করা, হারামের সাথে জড়িত থাকা ইত্যাদি। যদি এগুলো বর্জন করতে বলা হয় তখন সে বলে, ঈমান ঠিক আছে। দাড়ি লম্বা করা, ধুমপান বর্জন করাই শুধু ঈমান নয়। এ ধরনের লোকের পরিণাম কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৯) : আক্বীদা, আচরণ ও আমলের ক্ষেত্রে তাওহীদের হাক্বীক্বাত বা প্রকৃতি জানার উপায় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ