বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৯ অপরাহ্ন
উত্তর : শর্তসাপেক্ষে মজা, কৌতুক, রসিকতা করা বৈধ। যেমন- (১) ঠাট্টা ও কৌতুক করার সময় সামান্য পরিমাণেও দ্বীনকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা যাবে না। কারণ এটি হল ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণ (সূরা আত-তাওবা: ৬৫-৬৬)। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মহান আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টাকারী ব্যক্তি ঈমান আনার পরেও কাফির হয়ে যায়’। অনুরূপভাবে সুন্নাতকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করার ব্যাপারটিও খুবই ভয়ঙ্কর, যা বর্তমানে খুবই বিস্তার লাভ করেছে। যেমন: দাড়ি, পর্দা ও টাখনুর উপর কাপড় পরিধান করা ইত্যাদি। এ সম্পর্কে শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘রব, রিসালাত, অহী ও দ্বীনের কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা ও কৌতুক করা হারাম। ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা বা কাউকে হাসানোর জন্য এরূপ কাজ করা কারোর জন্য বৈধ নয়। যদি কেউ এরূপ করে তবে সে কাফির। কারণ সে মূলত আল্লাহ, তাঁর রাসূল, তাঁর কিতাব ও তার শরী‘আত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করল। উপরিউক্ত কেউ এরূপ কাজ করে ফেললে, তার কর্মের কারণে মহান আল্লাহর নিকট তাকে তাওবাহ করতে হবে। কারণ এটি এক প্রকারের নিফাক্ব (মুনাফিক্বী)। তার উচিত হল: মহান আল্লাহর কাছে তাওবাহ ও ইসতিগফার করা, তার কৃতকর্মকে সংশোধন করে নেয়া, তার অন্তরে মহান আল্লাহর ভয় রাখা, তাঁকে সম্মান করা ও তাঁকে ভালোবাসা (আল-মাজমূ’উছ ছামীন, ১/৬৩)।

(২) ঠাট্টা ও কৌতুক সত্য হতে হবে, মানুষকে হাসানোর জন্যও মিথ্যা বলা যাবে না। ইসলামে হাসি-মস্করা, আনন্দ ও বিনোদনকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কিন্ত সে জন্য মিথ্যা বলা বৈধ করা হয়নি। রাসূল (ﷺ) নিজে হাসি-মস্করা করতেন, কিন্তু মিথ্যা পরিহার করতেন। ছাহাবীগণও হাসি-মস্করা করতেন, তবে মিথ্যা বর্জন করতেন। এ সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেছেন, وَيْلٌ لِلَّذِيْ يُحَدِّثُ فَيَكْذِبُ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ، وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ ‘ঐ ব্যক্তির জন্য দুর্ভোগ! যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য দুর্ভোগ! তার জন্য দুর্ভোগ!’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৯৯০; তিরমিযী, হা/২৩১৫)।

(৩) ঠাট্টার ছলেও কাউকে ভয় দেখানো যাবে না: বিশেষ করে শক্তিশালী ব্যক্তি কর্তৃক দুর্বল ব্যক্তিকে হাতে অস্ত্র নিয়ে অথবা লোহার টুকরা নিয়ে অথবা লাঠি নিয়ে কোন ব্যক্তিকে ঠাট্টা ও কৌতুক করা যাবে না। কারণ এতে করে তারা ভীত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আবূ লাইলা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সাথীরা (ছাহাবীরা) আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা একদিন নবী (ﷺ)-এর সাথে সফর করেছিলেন। এমন সময় তাদের মধ্যকার এক লোক ঘুমিয়ে পড়লে তাঁদের কেউ কেউ গিয়ে একটা রশি এনে ঐ লোকের সামনে ধরলে সে ভয় পেয়ে যায়। তখন রাসূল (ﷺ)  বললেন, لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يُرَوِّعَ مُسْلِمًا ‘কোন মুসলিমকে ভয় দেখানো কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়’ (আবূ দাঊদ, হা/৫০০৪)।

(৪) ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করার ছলে কটাক্ষ ও বদনাম না করা: মানুষের স্তর বহু রকমের হয়। এটা হয় তার জ্ঞানের দিক থেকে ব্যক্তিত্বের দিক থেকে। কতক মানুষ মনের দিক থেকে দুর্বল হয়। নিজের চেয়ে কম বুদ্ধিসম্পন্ন ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোকের সাথে মানুষ ঠাট্টা-বিদ্রƒপ ও কটাক্ষ করে। অথচ এটা নিষিদ্ধ (সূরা আল-হুজুরাত: ১১)। এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ আয়াত থেকে উদ্দেশ্য হল: তাদেরকে তুচ্ছ মনে করা, হেয় পতিপন্ন করা ও ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা। আর এগুলো হারাম যা মুনাফিক্বদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে গণ্য হবে। রাসূল (ﷺ) ঠাট্টা-বিদ্রƒপ তথা উপহাস ও কষ্ট দেয়া থেকে সাবধান করেছেন, কারণ তা শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষের রাস্তা (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪; তিরমিযী, হা/১৯২৭; ছহীহুল জামি‘, হা/৬৭০৬)।

(৫) ঠাট্টা ও কৌতুক বেশি পরিমাণে না করা: কিছু মানুষ অতিরিক্ত ঠাট্টা ও কৌতুক করে। এর ফলে সে মানুষের নিকট মূল্যহীন হয়ে পড়ে। অথচ এটি একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। আত্মার প্রশান্তির জন্য ও সুস্থ বিনোদনের জন্য এর অনুমোদন আছে। উমার ইবনু আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, اتقوا المزاح، فإنه حمقة تورث الضعينة ‘তোমরা ঠাট্টা ও কৌতুক থেকে সাবধান থাক। কেননা তা হল নির্বুদ্ধিতা, যা বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছড়ায়’।

(৬) মানুষের পরিমাপ জানা: কতক মানুষ বাছ-বিচার না করেই সবার সাথে ঠাট্টা ও কৌতুক করে। অথচ জ্ঞানী ব্যক্তির (আলিমের) হক আছে, বড় মানুষের হক আছে, মুরুব্বী মানুষেরও হক আছে। এজন্য মানুষের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আগে জানা উচিত। বোকা, নির্বোধ ও পাগলের সাথে ঠাট্টা করা উচিত নয়। অনুরূপভাবে অপরিচিত ব্যক্তির সাথেও। এ বিষয়ে উমার ইবনু আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,اتقوا المزاح، فإنه يذهب المروءة ‘তোমরা ঠাট্টা ও কৌতুক থেকে সাবধান থাক, কেননা তা ব্যক্তিত্বকে নিয়ে যায়’।সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,إقتصر فى مزاحك، فإن الإفراط فيه يذهب البهاء، ويجرىّ عليك السفهاء ‘তুমি ঠাট্টা ও কৌতুক কম কর, কেননা তা বেশি করা সৌন্দর্য ও জ্যোতিকে নিয়ে যায়। আর তোমাকে নির্বুদ্ধিতার উপর ছেড়ে যায়’।

(৭) ঠাট্টা ও কৌতুকের পরিমাণ তরকারীতে লবনের পরিমাণের মত হবে: এ বিষয়ে রাসূল (ﷺ) বলেছেন, لَا تُكْثِرِ الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكِ تُمِيْتُ الْقَلْبَ ‘তোমরা বেশি বেশি হাসিও না, কারণ অতিরিক্ত হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে’ (তিরমিযী, হা/২৩০৫; সনদ হাসান, ছহীহুল জামি‘, হা/৭৪৩৫)।

(৮) ঠাট্টা ও কৌতুকের মাঝে গীবত না থাকা: এটা একটা অপবিত্র রোগ। কিছু মানুষ এটা ঠাট্টা-বিদ্রƒপের ছলে করে বসে। তবুও এটা গীবত হবে। কারণ নবী (ﷺ) বলেছেন, ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهٗ ‘তোমার ভাইয়ের এমন বিষয় উল্লেখ করা যা সে অপসন্দ করে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৯; আবূ দাঊদ, হা/৪৮৭৪)।

(৯) ঠাট্টা ও কৌতুক করার জন্য একটি উপযোগী সময় নির্বাচন করা: সেটা হতে পারে শীতকালীন ছুটি অথবা গ্রীষ্মকালীন ছুটি অথবা বন্ধুর সাথে সাক্ষাতের সময়। তার সাথে বুদ্ধি খাটিয়ে, আশ্চর্যজনক বিষয়ে যাতে চিন্তার খোরাক থাকে এমন সামান্য পরিমাণে ঠাট্টা ও কৌতুক করবে। যাতে করে অন্তরে ভালোবাসা বৃদ্ধি হয় এবং মনে আনন্দ হয়। (বিস্তারিত দ্র.: আব্দুল মালিক আল কাসিম-এর ‘মা হিয়া শুরূতুল মিযাহিশ্ শারঈ’ নামক প্রবন্ধ, ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২২১৭০)।

প্রশ্নকারী : আল-আমীন, ঢাকা।





প্রশ্ন (২২) : কোন জরুরী কারণে মুক্বীম অবস্থায় ছালাত জমা করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য চীন দেশে হলেও তোমরা যাও’। হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : কুফরী কালাম বা যাদু টোনার পরিণাম কেমন হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : ফরয ছালাতের আগে যে ইক্বামত দেয়া হয়, সেটা কি আযানের মত ২ বার করে বলতে হয়, না-কি একবার? আর ইক্বামতে ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালাহ’ বললে কি ছালাতের জন্য দাঁড়াতে হয়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : বাংলাদেশে ওশর প্রযাজ্য নয়। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : কছর ছালাত কখন পড়তে হবে? বাড়ি থেকে কোন কাজের প্রয়োজনে বা বেড়ানোর উদ্দেশ্য ২/৩ দিনের জন্য ঢাকা বা অন্য কোন যেলায় গেলে কি ছালাত ক্বছর ও জমা করা যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী কোন কাজ করতে পারে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২১) : মসজিদের ইমাম জর্দা দিয়ে পান খায় এবং তার কুরআন তেলাওয়াত অশুদ্ধ। তাকে বললে তিনি সংশোধন হন না। এমতাবস্থায় এরূপ ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৫) : আল্লাহ তা‘আলার বাণী- ‘নিশ্চয় আপনি যাকে ভালোবাসেন ইচ্ছে করলেই তাকে হেদায়াত দিতে পারবেন না’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ৫৬) এবং তাঁর বাণী: ‘নিশ্চয় আপনি সরল পথের দিকে হেদায়াত করেন’ (সূরা আশ-শূরা : ৫২)। উক্ত আয়াতদ্বয়ের মাঝে সমন্বয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৩) : অধিকাংশ মানুষ ছালাতের সময় লুঙ্গি, প্যান্ট গুটিয়ে নিয়ে ছালাত আদায় করে থাকে। প্রশ্ন হল- শুধু ছালাতের সময় লুঙ্গি, প্যান্ট ইত্যাদি গুটিয়ে রাখা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৪) : জনৈক ব্যক্তির পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়রা পীরতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এমনকি কালেমার ভিতরে পীরের নামযুক্ত করে যিকির করে। তারা মাজারপূজা করে। প্রশ্ন হল- তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : লোকসানের অংশীদার হবে এমন শর্তে কোন ইসলামী ব্যাংকে টাকা রেখে তার লভ্যাংশ গ্রহণ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ