উত্তর : পরকাল ও তার সংশ্লিষ্ট (জান্নাত ও জাহান্নাম) বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস করা ঈমানের ছয়টি রুকনের অন্যতম একটি রুকন। কেউ যদি কোন একটি অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির চিরস্থায়ী জাহান্নামী, পরকালে তার কোন আমল কাজে আসবে না (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৮৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর সেদিন ওজন যথাযথ হবে। সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৮)। অর্থাৎ সেদিনের সে দাঁড়িপাল্লায় কোন অপরাধীর অপরাধ বাড়িয়ে দেয়া হবে না। আর কোন নেককারের নেক কমিয়ে দেয়া হবে না (আযওয়াউল বায়ান)।
অন্য আয়াতেও আল্লাহ সেটা বলেছেন, ‘আর ক্বিয়ামতের দিনে আমরা ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব, সুতরাং কারো প্রতি কোন যুলম করা হবে না এবং কাজ যদি শস্য দানা পরিমাণ ওজনেরও হয় তবুও তা আমরা উপস্থিত করব’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৪৭)। তবে আল্লাহ ত‘আলা কোন কোন নেক বান্দার আমলকে বহুগুণ বর্ধিত করবেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুল্ম করেন না। আর কোন পুণ্য কাজ হলে আল্লাহ সেটাকে বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহ তার কাছ থেকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন’ (সূরা আন-নিসা : ৪০)। অনুরূপভাবে ‘হাদীছে বিতাকাহ’ নামে বিখ্যাত হাদীছেও (ইবনু মাজাহ, হা/৪৩০০; তিরমিযী, ২১২৭) সেটা বর্ণিত হয়েছে।
উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সেদিন যে ভাল-মন্দ কাজকর্মের ওযন হবে তা সত্য সঠিকভাবেই হবে’। এতে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এতে মানুষ ধোঁকায় পড়তে পারে যে, যেসব বস্তু ভারী, সেগুলোর ওযন ও পরিমাণ হতে পারে। মানুষের ভাল-মন্দ কাজকর্ম কোন জড় পদার্থ নয় যে, এগুলোকে ওযন করা যেতে পারে। এমতাবস্থায় কাজকর্মের ওযন কিরূপে করা হবে? উত্তর এই যে, প্রথমতঃ আল্লাহ তা‘আলা সর্বশক্তিমান। তিনি সব কিছুই করতে পারেন। অতএব আমরা যা ওযন করতে পারি না আল্লাহ তা‘আলাও তা ওযন করতে পারবেন, এটা বিচিত্র কিছু নয়। দ্বিতীয়তঃ আজকাল জগতে ওযন প্রয়োজন নেই। আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে আজকাল এমন বস্তুও ওযন করা যায়, যা ইতোপূর্বে ওযন করার কল্পনাও করা যেত না। আজকাল বাতাসের চাপ এবং বৈদ্যুতিক প্রবাহও ওযন করা যায়। এমনকি শীত-গ্রীষ্ম পর্যন্ত ওযন করা হয়। এগুলোর মিটারই এদের দাড়িপাল্লা। যদি আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় অসীম শক্তি-বলে মানুষের কাজকর্ম ওযন করে নেন, তবে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই। হাদীছে রয়েছে যে, যদি কোন বান্দার ফরয কাজসমূহে কোন ক্রটি পাওয়া যায়, তবে রাব্বুল আলামীন বলবেন, দেখ, তার নফল কাজ আছে কি না। নফল কাজ থাকলে ফরযের ক্রটি নফল দ্বারা পূরণ করা হবে’ (মুসনাদে আহমাদ, ৪/৬৫)।
আমলের ওযন পদ্ধতি : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন কিছু মোটা লোক আসবে। তাদের মূল্য আল্লাহর কাছে মশার পাখার সমানও হবে না। এ কথার সমর্থনে কুরআনুল কারীমের এ আয়াত পাঠ করলেন। (فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا) ‘ক্বিয়ামতের দিন আমি তাদের কোন ওযন স্থির করবো না’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪৪৫২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৮৫)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) প্রশংসায় বর্ণিত এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তার পা দু’টি বাহ্যতঃ যতই সরু হোক, যার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, ক্বিয়ামতের দাড়িপাল্লায় তার ওযন ওহুদ পর্বতের চাইতেও বেশি হবে (আহমাদ, হা/৯২০, ১/৪২০)। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) এ প্রসঙ্গে তার স্বীয় গ্রন্থে একটি অধ্যায় রচনা করে হাদীছ নিয়ে এসেছেন
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ كَلِمَتَانِ حَبِيْبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَنِ خَفِيْفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيْلَتَانِ فِي الْمِيْزَانِ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘দু’টি কালিমা আছে, যেগুলো দয়াময়ের কাছে অতি প্রিয়, মুখে উচ্চারণ করা খুবই সহজ, দাঁড়িপালল্লয় অত্যন্ত ভারী। (বাণী দু’টো হচ্ছে) সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহান্নাল্লাহিল আযীম’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭৫৬৩)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেছেন, ‘সুবহানাল্লাহ’ বললে আমলের দাঁড়িপাল্লার অর্ধেক ভরে যায় আর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে বাকী অর্ধেক পূর্ণ হয়ে যায়’ (আহমাদ, ৪/২৬০, ৫/৩৬৫; সুনান দারমী, হা/৬৫৩)। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আমলের ওযনের বেলায় কোন আমলই সচ্চরিত্রতার সমান ভারী হবে না’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৭৯৯; তিরমিযী, হা/২০০৩)। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জানাযার সাথে কবরস্থান পর্যন্ত যায়, তার আমলের ওজনে দু’টি কিরাত রেখে দেয়া হবে (ছহীহ বুখারী, হা/১২৬১)। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘এই কিরাতের ওযন হবে ওহুদ পাহাড়ের সমান’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৬৫৪)।
প্রশ্নকারী : গোলাম রাব্বী, বরিশাল।