উত্তর : স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩৪)। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সমগ্র স্ত্রী জাতিকে সম্বোধন করেছেন। প্রাপ্তবয়স্কা, অপ্রাপ্তবয়স্কা, যুবতী, বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা সব ধরনের স্ত্রী এর অন্তর্ভুক্ত (ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট)। ইমাম ইবনু কুদামা, ইবনু আব্দিল বারর, ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলিমগণ বলেছেন, এই আয়াত প্রমাণ করে যে, স্বামী মারা গেলে প্রত্যেক স্ত্রীকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। এখানে ছোট-বড়, প্রাপ্তবয়স্কা, অপ্রাপ্তবয়স্কা, বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা সহ সব ধরনের স্ত্রীদের সম্বোধন করা হয়েছে, স্বামীর সাথে তার বাসররাত হোক কিংবা না হোক। এ আয়াত সাধারণভাবে সকল স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে (আল-মুগনী, ৮ম খণ্ড, পৃ. ১১৫; আল-ইসতিযকার, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৭৮)। তবে শুধু গর্ভবতী স্ত্রী ব্যতীত। কেননা গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ৪)। এছাড়া বিবাহের পর বাসররাত না হয়ে থাকলেও স্বামীহারা নারী ঐ ইদ্দত পালন করবে। নাবালিকা কিশোরী অথবা অতিবৃদ্ধা হলেও ইদ্দত পালন করতে হবে (মাজাল্লাতুল বুহূছিল ইসলামিয়্যাহ, ১৬তম খণ্ড, পৃ. ১১৪, ১২০, ১৩২)।
ইদ্দতের সময়কালে স্বামীহারা স্ত্রীর করণীয় ও বর্জণীয় বিষয়সমূহ সম্পর্কে উম্মু ‘আতিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘এ সময় তোমরা সুরমা এবং কোন প্রকারের সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। হালকা রঙিন পোশাক ব্যতীত অন্য কোন চকচকে রঙিন পোশাক পরিধান করবে না। তবে ঋতুবতী মহিলারা পবিত্রতার গোসল করার পর আজফারের খোশবু মিশ্রিত বস্ত্রখণ্ড লজ্জাস্থানে রাখতে পারেন। খিযাব ও মেহেদি লাগাতে পারবে না এবং আমাদের জানাযার পেছনে যেতে নিষেধ করা হত (ছহীহ বুখারী, হা/৩১৩)।
ইবনু কুদামা, ইবনু আব্দিল বার্র, আবূ ইসহাক আশ-শিরাজী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইদ্দত চলাকালীন পতিহীনা স্ত্রী সাজসজ্জা ও রূপচর্চার যাবতীয় উপকরণ ও সুশোভিতকরণ পরিহার করবে। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রঙিন কাপড় যেমন, লাল, নীল, গেরুয়া, টকটকে কমলা ও হলুদ রঙের কাপড় পরিধান করা থেকে বিরত থাকবে। অলংকার, আংটি পরিধান করবে না। সর্বপ্রকার প্রসাধন ও অঙ্গরাগ যেমন, আতর বা সুগন্ধি, খিযাব, মেহেদি ও সুগন্ধিযুক্ত তেল ব্যবহার করবে না। সুরমা বা কাজল এবং প্রয়োজন ব্যতীত মাথায় চিরুনি লাগাবে না। স্বামীর গৃহে অবস্থান করবে। বিশেষ প্রয়োজনে দিনের বেলায় বাড়ী থেকে বাহির হতে পারে (যেমন, চিকিৎসা করার জন্য ইত্যাদি)। কিন্তু রাত্রিতে বাহির হওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ’ (‘উমদাতুল ফিক্বহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৭; আল-কাফী ফী ফিক্বহী আহলিল মাদীনা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬২২)।
প্রশ্নকারী : সামি মাহির, রংপুর।