উত্তর : অধিকাংশ তুর্কীরা মাতুরিদী, আশ‘আরী ও ছূফী আক্বীদায় বিশ্বাসী। ক্ববর পূজা, মাজার পূজা, যিকিরের নামে নৃত্য পরিবেশন করা বা পাগলামী করা তাদের সংস্কৃতির মূল অংশ (দিরাসাতুন ফিল আহওয়াহ, পৃ. ২৮২)। ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে তুরস্কের অধিকাংশ মানুষ ধর্মত্যাগী ও ধর্মবিমুখ। ছালাত, ছিয়াম ও অন্যান্য ইবাদত থেকে তারা বহুদূরে। ইসলাম ধর্মেও ঋৎববফড়স ড়ভ ংঢ়ববপয বা বাক স্বাধীনতা রয়েছে, তবে তার একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে। ইউরোপীয় সভ্যতার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে অনেকেই নাস্তিক্যবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। পোশাক-আশাক, চাল-চলন, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশায় ষোলো আনা বিধর্মী। বর্তমান তুর্কী জনগণের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ নিজেদেরকে ‘হানাফী’ বলে পরিচয় দিলেও আদতে কিন্তু তারা ভ্রান্ত ছূফীবাদ, মাতুরিদী ও আশ‘আরী আক্বীদায় বিশ্বাসী।
তুরস্কে শী‘আ, রাফেযী, জাফরী, বাতিনিয়া, আলেভি সহ অসংখ্য বাতিল ফির্ক্বা রয়েছে। যারা হুলুল অর্থাৎ মানবদেহে ঈশ্বর বসবাস করেন বলে দাবী করে। (নাউযুবিল্লাহ)। তুরস্কের অধিকাংশ লোক ছূফিবাদে বিশ্বাসী হওয়ায় তারা সাধুদের (পুরুষ ও মহিলা উভয়ই) পূজা এবং তাদের মাজার এবং ক্ববরে তীর্থযাত্রা করে। দেশের বিভিন্ন অভয়ারণ্যে ফলক লাগিয়ে মোমবাতি জ্বালানো, ভক্তিমূলক বস্তু নিবেদন এবং সম্পর্কিত ভক্তিমূলক কার্যকলাপ করে। যারা হাদীছ অস্বীকার করে, যারা কুরআনবাদী, কুরআনিয়্যুন বা আহলে কুরআন নামে পরিচিত, তারাও তুরস্কে উপস্থিত রয়েছে। বর্তমান তুরস্কের অধিকাংশ তরুণ হয় ইসলাম ত্যাগকারী অথবা কুরআনবাদী। আশ্চর্যের বিষয় হল, তুরস্কে উল্লেখযোগ্য ক্বুরানিস্ট স্কলারশিপ রয়েছে, এমনকি উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্বুরআনবাদী ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপকও রয়েছে, যার মধ্যে ইয়াসার নূরী ও জতুর্ক এবং ক্যানের তাসলামানের মতো পণ্ডিত রয়েছে।
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে তুরস্ককে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য সেখানে সংবিধান থেকে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে বাদ দেয়া হয়েছে। তারপর সেখানে যে পরিবর্তনগুলো দেখা গিয়েছিল তা ছিল রীতিমত উদ্বেগের। ১৯২৫ সালে বিদ্যালয় হতে কুরআন ও ধর্মশিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়, মাদরাসা-মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং হজ্জ-উমরাহ নিষিদ্ধ করা হয়। বড় বড় মসজিদগুলোতে ছালাত বন্ধ করে দিয়ে সেগুলোকে জাদুঘর হিসাবে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। নারীদের জন্য হিজাব পরিধান বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯২৮ সালের ৩রা অক্টোবর আরবীর অক্ষর নিষিদ্ধ করে ল্যাটিন বর্ণমালা চালু করা হয়। আরবীতে কুরআন পড়া, ছালাত আদায় করা ও আযান দেওয়া নিষিদ্ধ হয়। তুর্কী ভাষা আরবী হরফে না লিখে ল্যাটিন হরফে লিখতে হত। সাপ্তাহিক ছুটি হিসাবে রবিবারকে নির্ধারণ করা হয়। মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব ঈদকে বর্জনীয় ঘোষণা করা হয়। সরকারী লোকদের জামা‘আতে ছালাত আদায় করা নিষিদ্ধ হয়। ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী সালাম দেয়াও নিষিদ্ধ করা হয়। এর পরিবর্তে সুপ্রভাত (Good Morning), বিদায় (Good Bye) ও হ্যান্ডশেক রেওয়াজ প্রবর্তিত হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এছাড়া তুর্কীদের সম্পর্কে হাদীছের ভবিষ্যৎবাণী খুবই স্পর্শকাতর। অভিশপ্ত দাজ্জালের অনুসারীদের একটি অংশ হবে তুর্কীরা। তুর্কী, মঙ্গোলিয়া ও তাতারী সম্প্রদায় বা এমন জাতি যাদের মুখমণ্ডল হবে পিটানো চামড়ার ঢালের মত। ক্বিয়ামতের পূর্বে তুর্কীদের সঙ্গে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। আমর ইবনু তাগলিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের আলামতসমূহের একটি হল, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যারা পশমের জুতা পরিধান করবে। ক্বিয়ামতের আর একটি আলামত এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ করবে, যাদের মুখমণ্ডল হবে চওড়া, তাদের মুখমণ্ডল যেন পিটানো চামড়ার ঢাল’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৯২৭)। অনুরূপভাবে আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوْا التُّرْكَ صِغَارَ الْأَعْيُنِ حُمْرَ الْوُجُوْهِ ذُلْفَ الْأُنُوفِ كَأَنَّ وُجُوْهَهُمْ الْمَجَانُّ الْمُطْرَقَةُ وَلَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوْا قَوْمًا نِعَالُهُمْ الشَّعَرُ
‘ততদিন পর্যন্ত ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন পর্যন্ত তোমরা এমন তুর্কী জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ না করবে, যাদের চোখ ছোট, চেহারা লাল, নাক চেপ্টা এবং মুখমণ্ডল পেটানো চামড়ার ঢালের মত। আর ততদিন পর্যন্ত ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন না তোমরা এমন এক জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ করবে, যাদের জুতা হবে পশমের’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৯২৮, ২৯২৯, ৩৫৮৭, ৩৫৯০, ৩৫৯১; ছহীহ মুসলিম, ৫২/১৮, হা/২৯১২; আবূ দাঊদ, হা/৪৩০৩, ৪৩০৪)। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মোটকথা ইয়া’জূজ ও মা’জূজরা তুর্কীদের পূর্ব পুরুষ ইয়াফিসের বংশধর। আর ইয়াফিস হল নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর সন্তান। কাজেই তারা আদম-হাওয়ারই সন্তান’ (ফাৎহুল বারী, ১৩/১০৭ পৃ.)।
তুর্কীদের ‘তুর্কী’ এজন্যই বলা হয় যে, তারা পরিত্যাজ্য। আরবীতে তারাকা (تَرَكَ) মানে হল- ছেড়ে দেয়া, পরিত্যাগ করা, পরিহার করা, বর্জন করা ইত্যাদি। যেমন আবূ সুবাইনাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, دَعُوا الْحَبَشَةَ مَا وَدَعُوكُمْ، وَاتْرُكُوا التُّرْكَ مَا تَرَكُوْكُمْ ‘তোমরা হাবাশীদের থেকে বিরত থাকো, যে পর্যন্ত তারা তোমাদের থেকে বিরত থাকে এবং তুর্কিদেরও ত্যাগ করো, যতক্ষণ তারা তোমাদের ত্যাগ করে’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৩০২; নাসাঈ, হা/৩১৭৬; ছহীহুল জামি‘, হা/৩৩৮৪)।
প্রশ্নকারী : নাঈম ইসলাম, রাজশাহী।