উত্তর : নফল ছাদাক্বাহ সব সময়েই করা মুস্তাহাব। তবে কিছু কিছু সময়ে করলে নেকী বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয় এবং এ সম্পর্কে তাকীদও করা হয়েছে। যেমন রামাযান মাস অথবা জিলহাজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনে। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘রাসূল (ﷺ) সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল ছিলেন, আর রামাযানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন।... নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) রহমতের বায়ু অপেক্ষাও অধিক দানশীল ছিলেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬, ১৯০২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘এমন কোন দিন নেই যে দিনসমূহের সৎকাজ আল্লাহ তা‘আলার নিকট যুলহিজ্জা মাসের এই দশ দিনের সৎকাজ অপেক্ষা বেশি প্রিয়...’ (ছহীহ বুখারী, হা/৯৬৯; তিরমিযী, হা/৭৫৭)। অনুরূপভাবে ‘অভাব ও দুর্ভিক্ষের সময় দান করা নফল উমরার চেয়েও উত্তম’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৯৭২২৭; আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াশ শাইখ ছালিহ আল-ফাওযান, ২/৩৩৩ পৃ.)।
দ্বিতীয়তঃ সর্বোত্তম ছাদাক্বাহ হল (১) যখন ছাদাক্বাহ গোপনে করা হবে (ছহীহ বুখারী, হা/১৪২৩)। (২) অসহায় ও ফক্বীর ব্যক্তির তীব্র প্রয়োজনের সময় দান করা (ছহীহুল জামি‘, হা/১৭৬)। (৩) সম্পদের প্রাচুর্যতার সময় এবং সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় মৃত্যুর পূর্বে ছাদাক্বাহ করা। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘সর্বোত্তম ছাদাক্বাহ হল সুস্থ ও কৃপণ অবস্থায় তোমার ছাদাক্বাহ করা যখন তুমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখবে। আত্মা কণ্ঠাগত হওয়া পর্যন্ত ছাদাক্বাহ করতে দেরী করবে না, যখন তুমি বলতে থাকবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু, অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে গেছে’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৪১৯, ২৭৪৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৩২)। (৪) রক্ত সম্পর্কীয় ও নিকটাত্মীয় দরিদ্র ব্যক্তিকে দান করা অথবা এমন আত্মীয়কে দান করা যার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে (আহমাদ, হা/২৩৫৩০; ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮৯৪, ২৫৩৫)। (৫) স্বীয় অধীনস্থদের প্রয়োজন পূরণ করার পর নিজের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অন্যকে দান করা (সূরা আল-হাশর: ৯; আবূ দাঊদ, হা/১৬৯২)। (৬) ফযীলতপূর্ণ জায়গা অথবা সময়ে ছাদাক্বাহ করা। যেমন রামাযান মাস ও জিলহাজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন (ছহীহ বুখারী, হা/৬, ১৯০২)। (৭) যখন ছাদাক্বাহ করা সার্বিকভাবে সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য অধিক কল্যাণকর হবে। যেমন জিহাদের রাস্তায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, দাওয়াতী কাজে অথবা রাস্তার পাশে টিউবওয়েল স্থাপন করা (তিরমিযী, হা/১৬২৭; নাসাঈ, হা/৩৬৬৪)। (৮) কোন জিনিস জোড়া জোড়া আল্লাহর রাস্তায় ছাদাক্বাহ করা (ছহীহ বুখারী, হা/১৮৯৭)। (৯) ছিয়াম থাকাবস্থায়, জানাযার ছালাতে অংশগ্রহণ করার দিন এবং অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার দিনে ছাদাক্বাহ করা (ছহীহ মুসলিম, হা/১০২৮)। (১০) কোন মুত্তাক্বী বা দ্বীনদার আলিমের হাত দিয়ে ছাদাক্বাহ করা (তিরমিযী, হা/২৩২৫)। (১১) প্রিয় জিনিস ছাদাক্বাহ করা (সূরা আলে ইমরান: ৯২)। (১২) নিজের পরিবারের উপর ব্যয় করা (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৯৫)। (১৩) এমন ছাদাক্বাহ করা, যেটা মৃত্যুর পরও জারি থাকবে অর্থাৎ ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ করা (ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৩১)।
তৃতীয়তঃ দান ক্ববুল না হওয়ার প্রধান কারণগুলো হল (১) হালাল সম্পদ না হওয়া (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৬৭)। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫; তিরমিযী, হা/২৯৮৯)। (২) উত্তম জিনিস রেখে অনুত্তম জিনিস দান করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা কখনো কল্যাণ লাভ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে দান করবে’ (সূরা আলে ইমরান: ৯২; আবূ দাঊদ, হা/১৬০৮)। (৩) বিশুদ্ধ নিয়তে দান না করা (ছহীহ বুখারী, হা/১, ৫৬)। (৪) আমিত্ব প্রিয় বা লৌকিকতার জন্য প্রকাশ্যে দান করা (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৭১; ছহীহ বুখারী, হা/১৪২৩) ইত্যাদি।
প্রশ্নকারী : গোলাম রাব্বি, বরিশাল।