শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন
উত্তর : কোন পুরুষ শিক্ষকের জন্য কোন তরুণী, পদার্পণকারিণী, জৈবিক চাহিদা সম্পর্কে অবহিত সাবালিকা মেয়েকে মুখোমুখি পড়ানো বিশাল বড় ফিতনা এবং দ্বীন ও চারিত্রিক দিক থেকে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। যিনি পড়ান আর যারা পড়ে উভয়ের জন্যই তা সমানভাবে প্রযোজ্য। স্কুল, মাদরাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং সেন্টার ইত্যাদিতে পুরুষ শিক্ষক দ্বারা মেয়েদেরকে এবং মহিলা শিক্ষিকা দ্বারা ছেলেদেরকে পড়ানো মারাত্মক ফিতনার কারণ। স্বাভাবিকভাবেই ইসলামের দৃষ্টিতে এভাবে পড়ানো জায়েয নয়। বরং তা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৫০৩৯৮)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ বলেন,

لا يجوز للرجل تدريس البنات مباشرة؛ لما في ذلك من الخطر العظيم والعواقب الوخيمة

‘কোন পুরুষের জন্য মেয়েদেরকে সরাসরি (মুখোমুখি) পাঠদান করা বৈধ নয়। কারণ এতে রয়েছে মারাত্মক বিপদ ও ধ্বংসাত্মক পরিণতি’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১২/১৪৯ পৃ.)। উক্ত কমিটি আরো বলেন, প্রথমতঃ স্কুল, কলেজ অথবা অন্য কোথাও নারী-পুরুষের সহাবস্থান ও অবাধ মেলামেশা ভয়ঙ্কর গুনাহের কাজ এবং দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য বিশাল বড় ফিতনাহ। সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়া কিংবা চাকরি করা জায়েয নয় যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিভাবকদের জন্য তাকে এর জন্য অনুমতি দেয়া জায়েয নয়। দ্বিতীয়তঃ কোন পুরুষের জন্য জায়েয নয় মেয়েদেরকে পর্দাহীন অবস্থায় সরাসরি পাঠদান করা। কারণ একজন পরপুরুষের সামনে একজন মহিলার সবটাই আবৃত করা অপরিহার্য, মাথা খুলা রাখা কিংবা মুখমণ্ডল উন্মুক্ত রাখাকে শারঈ পর্দা বলা হয় না এবং তাকে নির্জনে একাকী শিক্ষাদান করাও জায়েয নয়, যদিও সে শারঈ হিজাব পরিধান করে থাকে। কখনো কোন ছাত্রীকে একাকী পড়ানো যাবে না। কারণ কোন পরপুরুষ ও পরনারী নির্জন হলে শয়তান উভয়ের মনে কু-প্রবৃত্তি ও কামভাবকে উসকিয়ে দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেমন নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘সাবধান! কোন পুরুষ কোনও মহিলার সাথে একান্ত নির্জনে মিলিত হলেই সেখানে অবশ্যই তৃতীয়জন হিসাবে শয়তান অবস্থান করে (এবং পাপাচারে প্ররোচনা দেয়)’ (তিরমিযী, হা/২১৬৫; ছহীহুল জামি‘, হা/২৫৪৬)।

তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন কোন পরনারীর সাথে নির্জনে একত্রিত না হয় যখন তার মাঝে এবং সে নারীর মাঝে কোন মাহরাম পুরুষ না থাকে’ (ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭২, ১৯০৯)। তৃতীয়তঃ মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পর্দার আড়াল থেকে তাদেরকে শিক্ষাদান করা কোন পুরুষের জন্য দোষনীয় নয়। যেখানে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে সহাবস্থান হয় না (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১২/১৫৬ পৃ.)। সুতরাং পর্দার অন্তরাল থেকে তাদেরকে পড়াতে হবে। তাদেরকে আপনি দেখবেন না, তারাও আপনাকে দেখবে না। কথা বলার সময় মেয়েরা কোমল কণ্ঠ পরিহার করবে। একান্ত দরকার ছাড়া কথা বলবে না। হাসি-মজাক ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে প্রয়োজনে পুরুষদের সাথে কথার বলার অনুমিত দিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে কোমল কণ্ঠ পরিহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা আল-আহযাব : ৩২; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৭৯৫৪৯)।

তৃতীয়তঃ নারীদেরকে পড়িয়ে প্রাপ্ত বেতনের অর্থ হালাল হবে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ বলেন, এই কাজের বিনিময় স্বরূপ আপনি যে অর্থ উপার্জন করবেন, তার দ্বারা আপনার লাভবান বা উপকৃত হওয়া দোষনীয় নয়, কারণ আপনি যে বেতন নিয়েছেন তা পাঠদানের বিনিময়ে অর্থ গ্রহন করেছেন এটি জায়েয। তবে পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হওয়ায় অবশ্যই গুনাহগার হতে হবে। তাই আপনার জন্য উচিত এই ধরণের কাজ ছেড়ে দেয়ার জন্য তাড়াহুড়া করা এবং অন্য একটি হালাল চাকরির সন্ধান করতে থাকা। যাতে আপনি হারাম ও ফিতনায় পড়া থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ১২/১৫৬ পৃ.)। কিন্তু একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা বা করানো জায়েয আছে। কেননা ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালা সমূহের অন্যতম হল: الضرورات تبيح المحظورات ‘বিশেষ প্রয়োজন অবৈধ জিনিসকে বৈধতার অনুমতি প্রদান করে’ (আল-আশবাহ ওয়ান-নাযাইর, ১/৭৮ পৃ.)। তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যরূরী, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।


প্রশ্নকারী : মুহসিন, নরসিংদী।





প্রশ্ন (১৮) : ‘আল্লাহ ও আপনি যা ইচ্ছা করেন’-এরূপ কথা বলা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী কোন কাজ করতে পারে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : রামাযানের ছিয়ামের জন্য নিয়ত করা কি অপরিহার্য? প্রতিটি ছিয়ামের জন্যই কি নিয়ত করতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : যঈফ হাদীছ কি সর্বক্ষেত্রেই বর্জনীয়? কোন কোন ক্ষেত্রে যঈফ হাদীছের উপর আমল করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : আমার আশেপাশে কোন আহলেহাদীছ মসজিদ নেই। এমতাবস্থায় বিদ‘আতী মসজিদে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করব, না-কি একাকী আদায় করব? বিশেষ করে তারা আছর ও ফজরের ছালাত অনেক দেরি করে পড়ে। - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : আমার এক বন্ধু বলেছে যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) না-কি নূরের তৈরি এবং তিনি না-কি সবকিছু সৃষ্টির আগে তৈরি হয়েছেন। তার দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩১) : ছালাতুল ইশরাক, ছালাতু যোহা, ছালাতুল আউয়াবীন কোন্ সময় পড়তে হয়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : সূদী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে এমন ব্যক্তিকে বাসা ভাড়া দেয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৬) : চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কি তায়াম্মুম করতে পারবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : কোন ব্যক্তি দু‘আ চাইলে তাকে কী বলে দু‘আ করতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৩) : মহিলার দেহ থেকে লোম তুলে ফেলা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : তাহাজ্জুদ পড়ার পরে ফজরের সময় হওয়ার আগেই যদি কেউ ফজরের সুন্নাত পড়ে ফেলে তাহলে তা ছহীহ হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ