উত্তর : হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে। যথা :
(১) নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব বর্জন করে সৎ মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করা : সমাজ ও মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকা এবং তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা হতাশা ও বিষণ্ণতা থেকে বেরিয়ে আসার অন্যতম কার্যকর মহৌষধ। কারণ একাকী বিচ্ছিন্ন জীবন ইসলামের কাম্য নয়। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘জামা‘আতবদ্ধ জীবন রহমত আর বিচ্ছিন্ন জীবন হল আযাব’ (ছহীহুল জামি‘, হা/৩১০৯, সনদ হাসান)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বসবাস কর। বিচ্ছিন্নতা থেকে সাবধান থাক। কেননা শয়তান বিচ্ছিন্নজনের সাথে থাকে এবং সে দু’জন সংঘবদ্ধ মানুষ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। যে লোক জান্নাতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জায়গার ইচ্ছা পোষণ করে সে যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকে’ (তিরমিযী, হা/২১৬৫, সনদ ছহীহ)।
(২) নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখা : কর্মহীনতা ও বেকারত্ব বিষন্নতার অন্যতম প্রধান কারণ। সেই জন্য যে কোন বৈধ ও হালাল পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে (সূরা আল-ক্বাছাছ : ২৪-২৭)।
(৩) নির্ধারিত সময়ে ছালাত আদায় করা : নিঃসন্দেহে ছালাত মানুষকে সময় সম্পর্কে সচেতন করে এবং মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
(৪) তাক্বদীরের উপর পূর্ণাঙ্গ ঈমান ও আল্লাহর উপর পূর্ণাঙ্গ তাওয়াক্কুল করা : আল্লাহর উপর ভরসা ও তাক্বদীরে বিশ্বাস যে কোন মানুষের জন্য অফুরন্ত আত্মবিশ্বাস ও সুদৃঢ় মনোবলের খোরাক। বিশ্বাসী বান্দার একান্ত মঙ্গলের জন্যই তাঁর কর্মপরিকল্পনা। এই বিশ্বাস তাকে কখনও পথ হারাতে দেয় না। বরং বুক ভরে প্রশান্তির নিঃশ্বাসে সে সর্বাবস্থায় বলতে পারে- আলহামদুলিল্লাহ। সুতরাং আল্লাহর প্রতি এই দৃঢ় ঈমান যে কোন হতাশা থেকে মুক্তির অব্যর্থ মাধ্যম’ (সূরা আয-যুমার : ৫৩; সূরা আত-ত্বালাক্ব : ৩, ৭)।
(৫) বেশি বেশি যিকির-আযকার করা : যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জন্য অবশ্যই কষ্টকর জীবন রয়েছে এবং আমরা তাকে অন্ধ অবস্থার হাশর করাব’ (সূরা ত্বোহা : ১২৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘অতএব তাদের জন্য ধ্বংস যাদের অন্তর এতটা কঠোর যে, তাতে আল্লাহর কথা মনে পড়ে না’ (সূরা আয-যুমার : ২২)।
(৬) তাওহীদ বা একত্ব প্রতিষ্ঠিত করা : অর্থাৎ আল্লাহর সাথে তাঁর ইবাদতে কোন কিছুকে শরীক না করে এবং তাঁর সকল গুণের সাথে অন্য কাউকে শরীক না করে শুধু তাঁরই ইবাদত করা (সূরা আলে ইমরান : ১৫১)।
(৭) উপকারী ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা : কেননা আলিমরাই (জ্ঞানীরাই) সর্বাপেক্ষা সুখী, স্বাচ্ছন্দ, ঝঞ্জাটমুক্ত এবং পরিতুষ্ট। বিষন্নতা ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে কোন আলিম আত্মহত্যা করেছেন পৃথিবীতে এমন কোন নজির নেই।
(৮) বেশি বেশি আমলে ছালিহ বা সৎকাজ করা : একটি নেকির কাজ বা সৎ আমল অন্তর ও চেহারা উভয় স্থানকেই আলোকিত করে এবং রিযিকে প্রশস্ততা বয়ে আনে আর অন্যান্য লোকের অন্তরে নেক আমলকারীর জন্য ভালোবাসার সৃষ্টি করে’ (সূরা আন-নূহ : ১০-১৪)।
(৯) পাপ না করা : পাপ মানুষের মনের শান্তি নষ্ট করে দেয় এবং পাপের ফলে মানুষ নিজেকে নিঃসঙ্গভাবে ও চারিদিকে অন্ধকার দেখে। একজন আরব কবি বলেন,
رأيت الذنوب تميت القلوب ٭ وقد يورث الذل إدمانها
‘আমি পাপকে দেখেছি যে তা অন্তরকে মেরে ফেলে, আর পাপের আসক্তি আসক্তকে (পাপীকে) অপমানিত করে’।
(১০) কাজে সংযমী হওয়া : কথা-বার্তায়, ঘুমে, মানুষের সাথে মেলামেশার ব্যাপারে এবং খাওয়া-দাওয়ায় সংযত হতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যারা অনর্থক ক্রিয়া-কলাপ থেকে বিরত থাকে’ (সূরা আল-মুমিনূন : ৩)। একজন আরব কবি বলেছেন, ‘হে কুকর্মকারী! তুমি তো অনেক ঘুমিয়েছ, তুমি কি জান না যে, মৃত্যুর পর লম্বা ঘুম আছে’? (ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-২৩৫৮২৬৬)। (১১) নিরন্তন দু‘আ করা : বিশেষ করে দুশ্চিন্তা, হতাশা ও বিষন্নতা থেকে মুক্তির নির্ধারিত দু‘আ গুলো (দেখুন, হিসনুল মুসলিম)।
প্রশ্নকারী : তানভীর আহমাদ, ঢাকা।