উত্তর : পানি দিয়ে ওযূ করার আবশ্যকতার ব্যাপারে আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরও আল্লাহ তা‘আলা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য পানি দিয়ে ওযূ করার বদলে তায়াম্মুমের সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছালাতের ধারেকাছেও যেয়ো না, যতক্ষণ না যা বল তা বুঝতে পারো এবং (দৈহিক) অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না গোসল করো, তবে সফরে থাকলে ভিন্ন কথা। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে (মলমূত্র ত্যাগ করে) আসে কিংবা তোমরা নারী-সম্ভোগ করো এবং (গোসল করার জন্য) পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং (যথারীতি) মুখমণ্ডল ও হাত মুছে নিবে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী ও ক্ষমাশীল’ (সূরা আন-নিসা: ৪৩)।
তাই সমস্যা হলে তায়াম্মুম করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যরে বাইরে দায়িত্ব দেন না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৮৬)। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, ‘আমি যদি তোমাদেরকে কোন কিছু করতে নিষেধ করি, তাহলে তোমরা তা পরিত্যাগ করো। আর যদি কোন কিছুর আদেশ দিই তাহলে সাধ্যমত তা কর’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৮৫৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৭)।
শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তার বক্তব্য: ‘কিংবা এটি (পানি) ব্যবহার করলে বা অন্বেষণ করতে গেলে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা করে’ অর্থাৎ যদি পানি ব্যবহার করলে তার শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সে অসুস্থ বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে সে আল্লাহর এই বাণীর সার্বিকতার অন্তর্ভুক্ত হবে: ‘যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাকো’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৬)। অনুরূপভাবে কারো ওযূর অঙ্গসমূহে যদি ক্ষত থাকে কিংবা গোসলের ক্ষেত্রে পুরো শরীরে ক্ষত থাকে এবং (পানির স্পর্শে) শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করে, তাহলে সে তায়াম্মুম করতে পারবে’ (আশ-শারহুল মুমতি‘, ১/৩৭৮-৩৭৯; ইবনুল জাওযী প্রকাশনীর ছাপা)। যদি সে চামড়ার উপরে এমনভাবে পানি ব্যবহার করতে পারে যাতে করে চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহলে সেটাই করবে। এক্ষেত্রে অঙ্গটি ঘষা বা প্রকৃষ্টভাবে ধৌত করা শর্ত নয়।
তিনি আরো বলেন, ‘অনুরূপভাবে কারো নাকে যদি সাইনাসের কারণে অতিরিক্ত ফাঁপা অংশ থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি নাকে পানি দেয়ার ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি করবে না। কারণ বেশি পরিমাণে পানি দিলে সেখানে পানি জমে সেটা পঁচতে পারে। এর থেকে খারাপ গন্ধ সৃষ্টি হবে। সেই ব্যক্তি অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন অথবা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এমন ব্যক্তিকে বলা হবে: আপনি নাকের দুই ছিদ্রের ভেতরে পানি প্রবেশ করানোর মাধ্যমে নাকে পানি নেয়ায় যথেষ্ট’ (আশ-শারহুল মুমতি‘, ১/২১০, ইবনুল জাওযী প্রকাশনের ছাপা)। তিনি আরো বলেন, ‘কারো নাকে যদি সাইনাস থাকে এবং সে যদি অতি মাত্রায় নাকে পানি দেয় তাহলে পানি সেখানে জমে ব্যথা করে কিংবা পানি পঁচে গিয়ে পুঁজ হয় কিংবা অন্য রোগ হয়; এমতাবস্থায় আমরা তাকে বলব: নিজের ক্ষতি রোধ করার জন্য আপনি অতিমাত্রায় পানি নিবেন না’ (আশ-শারহুল মুমতি‘, ১/১৭২, ঐ)।
প্রশ্নকারী : রাশেদুল ইসলাম, খিরশিন টিকর, রাজশাহী।