উত্তর : জুমু‘আর খুত্ববাহ সংক্ষিপ্ত করা এটি খত্বীবের বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। এটিই নবী (ﷺ)-এর নির্দেশনা (ছহীহ মুসলিম, হা/৮৬৬)। মানুষ যাতে খুব সহজেই তাঁর কথাগুলো মনে রাখতে পারে, তাই খুত্ববাহ সংক্ষিপ্ত করার কথা বলেছে (আবূ দাঊদ, হা/১১০৬, ১১০৭, সনদ ছহীহ; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১১২০৮৪)। তবে প্রয়োজনের তাকীদে খত্বীব কখনো দীর্ঘ করতে পারেন। কিন্তু খুৎবায় অপ্রয়োজনীয় কথা বলা যাবে না। ‘তোমরা ছালাতকে দীর্ঘায়িত এবং খুত্ববাহকে সংক্ষিপ্ত কর’ এই হাদীছের ব্যাখ্যা সম্পর্কে এমনটিই বলেছেন।
ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমি পসন্দ করি যে, খত্বীবের কথাগুলো যেন মধ্যম মানের, অলঙ্কারপূর্ণ, বাগ্মিতাপূর্ণ, প্রভাবপূর্ণ, সর্বব্যাপী ও বহুমুখী হয়। ...এবং খুত্ববাহকে দীর্ঘায়িত করা বা এতে খারাপ আচরণ করা, এগুলোকে আমি অপসন্দ করি’ (কিতাবুল উম্ম, ১/৩৪৪ পৃ.)। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মধ্যম বলতে বুঝানো হয়েছে, সংক্ষিপ্তও নয় আবার দীর্ঘায়িতও নয় (তালখীছুল হাবীর, ২/৬৪ পৃ.)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে সংক্ষিপ্তকরণ ও স্বল্প পরিসরে অধিক অর্থ প্রকাশ করাটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। অনুরূপভাবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণের সামনে লম্বা বক্তব্য রাখাটাও প্রশংসার দাবি রাখে’ (ফাৎহুল বারী, ১১/৪০৪ পৃ.)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, খুত্ববাহকে সংক্ষিপ্ত করা মুস্তাহাব, যাতে কারোর জন্য তা বিরক্তিকর না হয়। আমাদের সাথীরা বলেছে যে, সংক্ষিপ্ত বলতে মধ্যম মানের এবং এটা উদ্দেশ্যহীন পর্যায়ে অতিরঞ্জিত করা উচিত নয়’ (আল-মাজমূঊ, ৪/৩৫৮ পৃ.)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘খুত্ববার তুলনায় ছালাত প্রলম্বিত করতে হবে, এর অর্থ এই যে, তা যেন মুক্তাদীদের উপর কষ্টকর না হয়’ (শারহুন নববী, ৬/১৫৯ পৃ.)।
ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘খুত্ববাহ সংক্ষিপ্ত করার বিষয়টি সুন্নাত থেকে প্রমাণিত। রাসূল (ﷺ) এ রকমই আদেশ করেছেন এবং তিনি নিজেও এরূপই করতেন। যেমনটি আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি খুত্ববাহ সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি নিজেও উত্তম ও স্বল্প শব্দ দ্বারা খুত্ববাহ দিতেন এবং তিনি কটূক্তি করাকে ঘৃণা করতেন’। বিদ্বানগণ এমন খুত্ববাহকে অপসন্দ করেন, যা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে তার কিছু অংশ ভুলে যায় এবং তাঁরা এমন খুত্ববাহকে পসন্দ করেন, যা উপদেশ গ্রহণকারী শ্রোতা খুব সহজেই আয়ত্ব করতে পারে এবং মুখস্থ করার পর তা নিয়ে বিচার-বিবেচনা করতে পারে, আর এটি তখনই সম্ভবপর হবে, যখন তা সংক্ষিপ্ত হবে’ (আল-ইসতিযকার, ২/৩৬৩-৩৬৪ পৃ.)। ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাসূল (ﷺ) কখনো কখনো খুত্ববাহ সংক্ষিপ্ত করতেন আবার কখনো কখনো দীর্ঘায়িত করতেন। তবে জুমু‘আর খুত্ববার তুলনায় সাধারণ বক্তব্য একটু প্রলম্বিত হত’ (যাদুল মা‘আদ, ১/১৯১ পৃ.)।
শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সুতরাং উত্তম হল খুত্ববাহ সংক্ষিপ্ত করা। কারণ খুত্ববাহ সংক্ষিপ্তকরণের মধ্যে দু’টি উপকারিতা রয়েছে। যথা : (১) শ্রোতাদের জন্য বিরক্তিকর মনে হবে না। কারণ খুত্ববাহ যদি দীর্ঘায়িত হয় বিশেষ করে যদি খত্বীব এমন একটি দ্রুতগামী ভাষণ দেন যা অন্তরকে নাড়া দিতে সক্ষম হয় না এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করে না, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। (২) এটি শ্রোতার কাছে অধিক সংরক্ষণকারী অর্থাৎ শ্রোতার জন্য এটি অধিক স্মরণীয়। কারণ খুত্ববাহ লম্বা হলে এর শেষটা প্রথমটাকে হারিয়ে দেয়, ছাট হলে সেটা বোঝা ও মুখস্থ করা সহজ হয়। এ জন্যই নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তির তার ছালাতকে দীর্ঘায়িত করা এবং খুত্ববাহকে সংক্ষিপ্ত করা, মূলত এটি তার প্রজ্ঞারই পরিচায়ক। খত্বীব মানুষের অবস্থা বিবেচনা করবে। কখনও কখনও পরিস্থিতি এটিকে দীর্ঘায়িত করার আহ্বান জানায়। পরিস্থিতির প্রয়োজনে যদি কোন ব্যক্তি কখনো বেশি সময় নেয়, তাহলে এটি তাকে ফক্বীহ হওয়া থেকে বঞ্চিত করবে না। কারণ লম্বা ও খাটো হওয়া একটি আপেক্ষিক বিষয় এবং এটা নবী (ﷺ) থেকে প্রমাণিত যে, তিনি কখনো কখনো সূরা ক্বাফ ধীরস্থির ও সুমধুর তিলাওয়াত দ্বারা খুত্ববাহ দিতেন এবং প্রতিটি আয়াত বিবেচনা করতে দীর্ঘ সময় লাগাতেন’ (আশ-শারহুল মুমতি‘, ৫/৬৫ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : সামিঊল ইসলাম, রাজশাহী।